গোধুলিতে রাঙা চিঠির অপেক্ষায়/দেবাশীষ বক্সী
গোধুলিতে রাঙা চিঠির অপেক্ষায়
দেবাশীষ বক্সী
চিঠি,
পলাশ, শিমুল ঝরে গিয়েছে। জীবন তখন রঙহীন। সুরহীন। মেঘে মেঘে দুরন্ত গর্জন শেষে কালবৈশাখী এসে উড়িয়ে নিল জীবন খাতার কিছু পাতা। মন আকাশে কাজল মেঘের ঘনঘাটা। হৃদয়, অবিশ্রান্ত বেদনার বর্ষণে প্লাবিত। যে চিঠি অন্তরকে আলোকিত করত, প্রকৃতিকে আশ্লেষে বাঁধতে শিখিয়েছিল, নীল আকাশে শুভ্র মেঘ নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিল — হায়, সেই তুমিই জীবনের শেষ চিঠি হয়ে আমার স্বপ্নকে স্বপ্নহারা করে দিয়েছিলে। হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমার প্রত্যশায় মেঘের পানে অহনির্শ চেয়ে থাকা।
সেই থেকে, চিঠি, তোমায় হারিয়ে ফেলা। তোমারও হেরে যাওয়া। সময় বড্ড উতলা, প্রযুক্তি দামাল উপস্থিতিতে, তুমিও চিরতরে হারিয়ে গেলে। আমার ফুলদানিতে রজনীগন্ধা তখন শুকিয়ে কাঠ। আর চিঠি, তোমার শেষ যাত্রায় জুটল না কোন ফুলের সুবাস। নিঃশব্দে নীরবে অনন্ত অভিমান নিয়ে তুমি হারিয়ে গেলে।
জীবন গোধুলিতে আবার সুযোগ এল। অমিতদার হাত ধরে। সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই। চোখ ঝাপসা হলেও, স্মৃতি প্রবলভাবে হৃদয়ে গাঁথা।
চিঠি লেখার সুযোগ যখন এলই, চিঠির পাতায় দুটি কথা লিখি। জানি না, জানি না গন্তব্যে পৌঁছবে কিনা? তবু বলি, “কেমন আছ?”
আর এমনই আর একটি চিঠির অপেক্ষায় রইলাম, “আমি ভালো আছি” – খবরটি জানার ব্যাকুল আশায়।
চিঠি, তুমি যখন এলেই থাকো না আর কয়েকটি কাল। যদি, পলাশ শিমুলের বসন্তে, কোন নীল খাম উড়ে আসে আমার ঠিকানায়। খুব, খুব পরিচিত হাতে লেখা রবে, “তুমি ভালো আছ তো?”
যদি চাও, যদি ইচ্ছে হয়, তোমার তুমি আর আমার তুমিতে জন্ম নেবে নতুন করে চিঠিপত্রের গল্পগাঁথা।
- দেবাশীষ
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴