গুরুদেব তোমায় বলছি /বেলা দে
গুরুদেব তোমায় বলছি
বেলা দে
-----------------------------
অবুঝ বয়সের সবুজ মন ছুঁয়ে সেদিন কেবলই তুমি গুরুদেব, যে বয়সটায় অপূর্ণতা, অতি অল্পেই বিশ্বাস, আবেগ, উৎকম্পন, সে সময়ে গহীন গভীরে ঢুকেছিলে ডাকঘরের অমল হয়ে, চরিত্রে বসিয়ে দিয়েছিলে তার বন্দীদশার দু:খ যন্ত্রণা, আবেগ, অনুভূতির ইচ্ছেগুলোর ভিতরে ঢুকে তোমার চোখে দেখে এসেছি দইওয়ালার সাজানো ছোট্ট গ্রাম। অতি শৈশবে ছড়ায়, কবিতায়, ফুলচন্দনে প্রতিকৃতির মাল্যদানে যেন তোমাকেই পেয়েছি সামনে। দিদিমনিদের কথামালায় বয়ে গেছে শিরশিরে অনুভূতি। কিশোরীবেলায় পাঠ্যবই-এর ভাঁজে ভরে নিয়েছি তোমাকে, তোমার উপন্যাসের গোরাকে। মস্ত
এক দাগ কেটেছে বালিকাবেলায় বৃটিশ ভারতে স্বাদেশিকতা, রাজনৈতিক দোলাচল, উপরন্তু হিন্দুদের ধর্মান্ধতার অবক্ষয় ধর্মের নামে দান্ধিক প্রক্রিয়া হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, ব্রাহ্ম। হিন্দুত্ববাদী গোরার ধারণা হিন্দু ধর্ম নির্ভুল, অনেক বড়, দীর্ঘকায়, দুধেল গাত্রবর্ণ, সুশ্রী গোরা যেদিন জানতে পারে সে এক আইরিশ রমনীর সন্তান। তাকে জন্ম দিয়েই মায়ের মৃত্যু কোলে তুলে নেন মা আনন্দময়ী।
অত্যন্ত স্নেহে পুত্রসমান মানুষ করে সংস্কারমুক্ত-উদারমতি নিজে ব্রাহ্মনকন্যা হয়েও, বাবা কৃষ্ণদয়াল একটু সংস্কারি ছিলেন। সমৃদ্ধ আনন্দময়ীর মধ্যে গোরা দেখে সমস্ত ভারতবর্ষকে।
ধর্মের গোড়ামিতে এতদিন যাকে অস্পৃশ্য ভেবে ঘৃণা করে এসেছে সেই চন্ডাল লছমিয়ার হাতে জল
খেয়ে নিজেকে শুচি করে।
আজও তোমার ভারতবর্ষ তোমাকেই খুঁজছে, গুরুদেব। বড় প্রয়োজন তোমার।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴