সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
14-January,2024 - Sunday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 290

গদাধর লাউ/সুকান্ত নাহা

গদাধর লাউ 
সুকান্ত নাহা
**********

গদাধর সাউয়ের সাধের লাউ যে একদিন ফ্যাসাদের লাউ হয়ে দাঁড়াবে কে জানতো। যদিও গদা গিন্নি স্বামীর বাড়াবাড়ি রকমের লাউ প্রেম দেখে সাবধান করেছিল বহুবার। "এই লাউ দ্যাখবা একদিন তোমার সর্বনাশ কৈরে ছাড়ব।"

বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকে। জীবনে কত কিছুরই না প্রেমে পড়ে মানুষ। নারী, পুরুষ, ফুল, প্রকৃতি, কবিতা, সংগীত, বই, বৌ এসব ছেড়ে কিনা লাউ! লাউ খেতে অনেকেই ভালবাসে। তাদের বড়জোর লাউভক্ত বলা যেতে পারে। কিন্তু লাউ এর ব্যাপারে গদা যেন রীতিমতো অবসেসড!  এক্কেরে লাউ অন্ত প্রাণ যাকে বলে। প্রাক শীতের বাজারে কচি কচি লাউ ল্যান্ড করলো কি করলো না গদা সাউ কাছাখোলা কীর্তনীয়া হয়ে বাজারের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। যে করে হোক একটি যুৎসই লাউ বাগানো চাই। যে সে লাউ হলে হবে না। কচি, চিকন, গায়ে মিহি রোঁয়া ওঠা, গাঢ় সবুজ ঘট-লাউ ই গদার প্রথম পছন্দ। না পেলে লম্বা নধর, তেল চকচকে , যুবতীর দেহবল্লরীর ন্যায় মসৃণ, কচি বটল গোর্ড বা বোতল লাউ পেলেও চলবে। গদা তুলে নেবে যত দামই হোক।  হাতে তুলে তন্বী লাউটির গায়ে খানিকক্ষণ হাত বোলাতে বোলাতে মুচকি হাসবে। দেখে মনে হবে যেন প্রেয়সীর মোলায়েম শরীরে সোহাগের হাত বোলাচ্ছে। মনমতো লাউ পেলে গদার মনে প্রজাপতি পাখনা মেলে।  দিনটা সার্থক মনে হয়। আর না পেলে সারাদিন একটা অস্বস্তি বুকে কোষ্ঠবদ্ধতার মতো চেপে বসে থাকে। 

লাউ, বিশেষত শীতকালীন লাউ এর প্রতি ভীষণ দুর্বল গদা। অন্যসময় না পেলেও তেমন দুঃখ থাকে না। কিন্তু শীতে রোজ পাতে লাউ চাইই চাই। মাছের মাথা দিয়ে লাউঘন্ট, লাউচিংড়ি, নিরামিষে লাউবড়ি, লাউসুক্তো, লাউ দিয়ে ডাল, লাউয়ের হালুয়া, লাউ খোসার ছেঁচকি, শোল লাউ,গড়াই মাছ দিয়ে লাউ। এককথায় শীতে গদাধরের যাপন কথায় লাউ শুধু লাউ। বাড়িতে বৌ বাদে আর কেউ ও বস্তুটি মুখেও তোলে না। ছেলেকে লাউ খেতে বলায় সে একদিন সপাট উত্তর ঝেড়েছিল, "লাউ খায় Cow"। ব্যস তারপর থেকে বলা ছেড়ে দিয়েছে গদা। লাউ খেয়ে খেয়ে হেদিয়ে গিয়ে বৌ মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করে ওঠে। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শেষ বৈশাখ পর্যন্ত গদার প্রাণান্ত  লাউ ভক্ষণ চলে। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে গদাহস্তে মধ্যম পাণ্ডবের প্রবেশের মতো লাউ হাতে গদাধর বাড়িতে এন্ট্রি নিলেই বৌ বেলনা হাতে দুর্যোধন হয়ে ওঠে। গদাধর সাউ সেই সব ব্ল্যাক-ডে গুলোয় ছাদে বসে মিক্সারে লাউ চটকায়। চটকে সরবত করে নুন ছিটিয়ে খায়। খেতে খেতে  কাউকে কাছে পেলেই রামদেব বাবার স্টাইলে লাউকেত্তন শুরু করে দেয়, "লাউমে বহুত গুণ (ণ টা হিন্দি অ্যাকসেন্টে 'ড়' এর মতো করে বলে) হ্যায় । লাউ- কা- জুস পিও। পিয়ে যাও। লাউ খানে সে শরীর মস্ত্, দিমাগ ঠান্ডা,পেট কিলিয়ার..." মোদ্দা কথা পুরো শীতকাল ধরে লাউ খ্যাপা গদাধরের এমনতরো খ্যাপামি চলতে চলতে একেবারে পাগলামির পর্যায়ে চলে যায়। 

পাগলামি একবার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল গদা যখন গোঁ ধরে বসেছিল ছাদে লাউ চাষ করেই ছাড়বে। এ ব্যাপারে পাড়ার ভানুদা ছিল গদার ইন্সপিরেশন। ভানুদা ছাদে পেল্লায় টবে লাউ চাষ করে এত লাউ ফলিয়েছিলেন যে আরেকটু হলেই গিনেসে নাম উঠতো। কাগজ ওয়ালারা ফলাও করে সে খবর ছাপে। প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া কেউ বাদ নেই। যারাই নিউজ কভার করতে এসেছিল প্রত্যেকের হাতে একটা করে কমপ্লিমেন্টারি লাউ ধরিয়ে দিয়েছিলেন ভানুদা। খবর পেয়ে ভীড় ঠেলে ভানুদার ছাদে উঠতে গিয়ে ব্যাপক হ্যাটা  হয়েছিল গদা। মনে আশা ছিল ভানুদা কল্পতরু হয়েছেন। যদি বেড়ালের ভাগ্যে  শিকে ছেঁড়ে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। লাউ দূর অস্ত সাংবাদিকেরা বাড়ি থেকে বেরোতেই সকলকে প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন ভানুদা। সেই রাগে পরের বছর ছাদে লাউ লাগাতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে গদা।

 দিনরাত এক করে লোক লাগিয়ে ছাদে মাচা তৈরি হলো। বীজ পোঁতা হলো। বীজ থেকে গাছ হলো। যত দিন যায় উত্তেজনা চরমে উঠতে থাকে। গদা নাওয়া খাওয়া ভুলে যায়। মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে থেকে থেকে সিগারেট ফোঁকার নামে ছাদে চলে যায়। গিয়ে গাছের গায়ে হাত বোলায়। বিড়বিড় করে। গদা গিন্নি প্রমাদ গোনে। এমন হলে তো বিপদ। পরদিন ভোরে উঠেই মানে মানে লাউ গাছের গোড়ায় এমন কিছু একটা করে আসে যে বিকেল হতেই গাছ নিস্তেজ। দুঃখে  অনশনে দেহত্যাগ প্রকল্প নিয়েছিল গদা। অগত্যা বাজার থেকে কচি লাউ কিনে এনে তিনদিনের মাথায় সেই গদা গিন্নিকেই ফের লাউয়ের জুস খাইয়ে স্বামীর অনশন ভঙ্গ করতে হয় ।

আসলে লাউয়ের সাথে গদার বাল্য প্রেম। সাতসকালে থলে হাতে বাজারে ছোটা গদার স্কুল জীবনের অভ্যেস। মামাবাড়িতে মানুষ। দাদু দিদিমার ছোটখাটো ফাই ফরমাস খেটে বড় হওয়া। জীবনে  বাজার করার "হাতেথলি"র দিন প্রথম প্রাতেই বেড়াল থুড়ি লাউ মেরেছিল গদাধর। অর্থাৎ বরাদ্দ টাকার সিংহভাগ ব্যয় করে বিশালাকার এক লাউ কিনে বাড়ি  ফিরেছিল। সেই শুরু। সেদিন বহু প্রচেষ্টায় লাউটিকে  থলেপ্রবেশ  করাতে ব্যর্থ হয়ে  গাব্দা লাউয়ের গর্দান পাকড়ে কোনোমতে বাড়ি ফিরেছিল। সারা রাস্তায় বাচ্চা ছেলেটিকে ক্ষুদে হাতে লাউ কব্জা করার কসরৎ দেখে কেউ হেল্প তো করেইনি উল্টে পরিচিত কাকা, জ্যাঠারা টিপ্পনি কেটে বলেছিল, " ওরে গদা, তোর গদাটা বড্ড ছোটো কিনে ফেলেছিস রে... ওটা বরং কাঁধে তুলে নে। বেশ ভীমের মতো দেখাবে..." বাড়ি ফিরতেই দাদুর চক্ষু চড়কগাছ। 

" আরে-আরে, করছস কি লাতি...! শ্যাষম্যাষ একখান বুইড়া লাউ কিনা আনছস। নাঃ, তর দ্বারা বাজার সওদা হৈবো না দ্যাখতাসি। হেই লাউ তো গাইও খাইবো না রে...। "

দিদিমা অভয় দ্যান, " থাউক গা, পরথম দিন বাজার করসে হেই ঢ্যার। শুন বাবা, লাউ কিনবি পুটকির ফুল দেইখা। লাউয়ের পুটকিত ফুল লাইগা থাকলে হেইডা চোখ বুইজা  জানবি কচি। তা না হৈলে ঘাড়া (ঘাড়) খুঁইট্যা দ্যাখবি নখ ঢুকে কিনা। ঢুকলে ভাববি হেই লাউ জোয়াইছে(পুষ্ট হয়েছে) । " দিদিমার সেই লাউ চেনার টিপস আজও ভোলে নি গদা।  তবে এখন আর টিপে দেখতে হয় না। দূর থেকে চোখে দেখেই বলে দিতে পারে কোনটা কচি মাল। লাউ দেখলেই গদার ইন্দ্রিয় গুলো তীব্র ভাবে সজাগ হয়ে ওঠে। ষড়রিপুর প্রথম এবং তৃতীয় রিপুটি কেন যেন খাঁচা বন্দী বাজপাখির মতো বুকের ভেতর ডানা ঝাপটাতে থাকে। লাউকে কেন্দ্র করে গদার হরেক কীর্তি রয়েছে যা ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। 

ফুক্কুড়ে পটলাদা ট্রোল করে, "গদা এবার এফিডেভিট করে টাইটেলটা বরং সাউ থেকে লাউ করে নে। এত লাউপ্রেমী তুই। এতে লাউ এর প্রতি সম্মান জানানোও হবে। তোর বংশধরেরা লাউ বংশ নামে পরিচিতিও পাবে। কেন রে, ইতিহাসে লাউসেন বলে একজন ছিল জানিস না। ওঁর ওরিজিনাল নামটাই ছিল লাউ। টাইটেল সেন। তাছাড়া 'আলু' টাইটেল হতে পারে, লাউ এ দোষ কী।  'আলু' বংশের তথ্য পঞ্জী ঘাঁটলে নির্ঘাত দেখবি ওদের পূর্বপুরুষ কেউ আলু প্রেমী ছিল" পটলাদার এহেন ভুলভাল তথ্য পঞ্জী শুনে ঘেঁটে ঘ হয়ে যায় গদা। কিন্তু ঠাট্টা হলেও পূর্বপুরুষের সারনেম নিয়ে ইয়ার্কিটা গদার মোটেই ভাল লাগে না। ঠোঁটকাটা পটলার কথার উত্তর না দিয়ে নিরবে স্থান ত্যাগ করে। 

তো সেদিন ছিল রোববার। থলি হাতে সাতসকালে বাজারে ছুটেছে গদা। এসময় গাঁ গঞ্জ থেকে ঝুড়িতে করে টাটকা, শিশির ভেজা শাক সবজি নিয়ে আসে ফড়েরা। তাতে কচি কচি লাউও থাকে। গদা ছাড়াও বাজারে চোরা লাউ শিকারী আরো আছে। যারা কচি মাল বাজারে পড়তে না পড়তেই চিলের মতো ছোঁ মারে। নিমেষে কচিগুলো উধাও হয়ে পড়ে থাকে দড়কচা বুড়োগুলো। গদা তাই ঝুড়ি-নামানো বৌনীর টাইমটা টার্গেট করে। যদিও বাঁধা বিক্রেতারা তার জন্য এক আধটা সরিয়ে রাখে। লাউবাবু লাউ কিনবেই। এতদসত্ত্বেও এক আধ দিন ঠকতে হয়েছে। কচিমাল দেখে ডবল দামে কিনে নিয়েছিল কেউ। সেই থেকে গদা রিস্ক নেয় না। 

কদিন ধরে ছট পরব উপলক্ষে বাজারে লাউয়ের যোগান কম। তার ওপর বাজার আগুন। দু একজন শো-পিস হিসেবে দু' চার পিস রাখছে। তাও পড়তে না পড়তেই হাওয়া। দ্বিগুণ দামে লোকে কিনে নিচ্ছে। বাঁধা সবজিওয়ালিটি সবে ঝুড়িটা নামিয়েছে কি নামায়নি দূর থেকে গদা দেখতে পায় এক লুঙ্গি, সোয়েটার আর মাঙ্কি ক্যাপ পড়া লোক ঝুড়ি টার্গেট করে দাঁড়িয়ে আছে। গদার ষষ্ঠেন্দ্রীয় জানান দেয়, " কুইক গদা কুইক, কচিটা হাতিয়ে নিলে আর পাবিনা।" গদা দৌড়তে থাকে। লোকটা অপেক্ষা করছিল ঝুড়ি নামানোর। তার আগেই শূন্যে লাফ মেরে দীর্ঘকায় গদা বাস্কেটবল প্লেয়ারের মতো ছোঁ মেরে লাউটি ছিনিয়ে নেয়। 

-" এটা কী হলো?" মাঙ্কি ক্যাপ তেড়ে ওঠে। 

-" কত হল রে? " গদা লাউ ওয়ালিকে উদ্দেশ্য করে। যেন শুনতেই পায়নি মাঙ্কি ক্যাপের কথা। 

-"এই যে, কথাটা কানে গেল না নাকি... ছাড়ুন ওটা। ওটা আমার। আমি আগে এসেছি।" মাঙ্কি ক্যাপ তড়পায়।

-"আমি ওর ডেলি কাস্টোমার। ওকে জিজ্ঞেস করুন আগে।"
-"জিজ্ঞেস করার কিছু নেই। আমি ওকে গতকালই অ্যাডভান্স করে গেছি... ওটা আমার।"

-"অ্যাই, কত হয়েছে বল। আমার দেরি হচ্ছে।" গদা মাঙ্কি ক্যাপকে যেন ধর্তব্যের মধ্যেই রাখে না। 

-"অ্যাই, খবরদার ঐ লাউ বেচবি না। ওটা ওকে দিলে কিন্তু বহুত খারাপ হয়ে যাবে।" মাঙ্কি ক্যাপ এবারে তেড়িয়া হয়ে উঠলে সবজি ওয়ালি মিনমিন করতে থাকে। 

-"না, মানে উনি তো রোজ লাউ ন্যান...আরো তো  আছে। আপনি ন্যান না।"

-"না, আমার ঐটাই চাই..  "বাক বিতণ্ডা শুনে একজন এগিয়ে এসে মাঙ্কি ক্যাপকে জিজ্ঞেস করে, " কী কেস?"

-"আর বলবেন না, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে জামাই আসছে। ওখানে লাউ পায় না। ভীষণ ভালবাসে লাউ খেতে। লাউ চিংড়ি খাবে। এদিকে কদিন যাবৎ বাজারে ভাল লাউই নেই। এই সবজিওয়ালি টিকে টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে বলে রেখেছিলাম আনতে। ওর বাড়ির লাউ। মাঝখানে থেকে ইনি কোত্থেকে উড়ে এসে অসভ্য বানরের মতো লাফ দিয়ে লাউ ছিনিয়ে নিলেন!"

-"অ্যাই, শাট আপ। ইউ স্কাউন্ড্রেল। অসভ্য বানর আপনি কাকে বলছেন? আপনি এই কাত্তিক মাসে বাঁদর টুপি পড়ে আছেন। দেখতে আপনাকেই বাঁদরের মতো দেখাচ্ছে।" গদা চেঁচিয়ে বলে ওঠে কথাগুলো। গদার চেঁচানি শুনে আশপাশে ভীড় জমতে থাকে। 

-"হোয়াট, আপনি একটা রাস্কেল। লাউ খেকো রাস্কেল। আপনাকে কে না চেনে। রোজ আগেভাগে বাজারে এসে কচি লাউ তুলে নিয়ে যাবেন তা হবে না। আমি জানতাম আপনি ঠিক হাঙরের মতো হামলে পড়বেন তাই আগে থাকতেই অ্যাডভান্স করে গেছি। দিন ওটা বলছি।" বলে গদার হাত থেকে লাউ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মাঙ্কি ক্যাপ। 

চকিতে লাউ আড়াল করে গদাও কাউন্টার করে, "ওরে শালা, লাউ ছিনতাই করবি নাকি? দেখি কত তোর বুকের পাটা। গদাধর সাউ এর হাত থেকে আজ অবধি কেউ লাউ ছিনিয়ে নিতে পারেনি। দেখি কী করে তুই লাউ ছিনতাই করিস ।" উত্তেজনায় ফুঁসতে থাকে গদা। 

মাঙ্কি ক্যাপ এবারে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গদার লাউ ধরে ফ্যালে। শুরু হয়ে যায় ভরা বাজারে লম্বা বটল গোর্ড এর দু প্রান্ত ধরে টাগ অব ওয়ার।  লাউ ওয়ালি চেঁচাতে থাকে তারস্বরে, "বাবুরা ঝগড়া কৈরেন না। আরো লাউ আসে ব্যাগে। কচি লাউ। ঝগড়া কৈরেন না। ও বাবুরা... শুনেন,শুনেন....হায় ভগমান, একটা সামাইন্য লাউ, তাই নিয়া এত কাইজ্যা.."

গদা আর মাঙ্কি ক্যাপের বিশ আঙুল আর নখের  হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড়ে  লাউ ততক্ষণে লাউ ঘন্ট হওয়ার যোগাড়। জনতা মজা দেখছে। দুপক্ষে ভাগ হয়ে উৎসাহ দিতে শুরু করেছে , "ছাড়বেন না গদাদা, ওটা আপনার।"

অপরপক্ষ মাঙ্কি ক্যাপকে বলছে, " ওটা আপনার, কোনমতেই ছাড়বেন না দাদা... "

টাগ অব ওয়ারের মাঝে হঠাৎ লাউ ওয়ালি চিৎকার করে ওঠে, " ও লাউ বাবু থামেন থামেন। আপনের জন্য অন্য লাউ রাখসি। আরো কচি। ও লাউ বাবু।"

লাউওয়ালির মুখে লাউবাবু শুনে হঠাৎ দপ করে নিভে যায় গদা। হাত থেকে লাউ ফসকে যায়।  অবাক চোখে ফিরে তাকায় গদা লাউওয়ালির দিকে। 

-" কী বললি আমার নাম, আবার বল। "

গদার থমথমে মুখ দেখে মুখ নিচু করে লাউ ওয়ালি বলে, "কৈ কিছু কৈ নাই তো।"

লাউ ওয়ালি বুঝতে পারে কেস জন্ডিস। গদাধরের বাজার চলতি কোড নামটা হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। 
গদা চোখেমুখে অবিশ্বাস, "না, আমি পষ্ট শুনলাম। বল কী বললি?"

ওদিক  গদার রাইভাল মাথা নিচু করে ফর্দাফাই লাউটির দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এ জয় যেন তার কাছে যুদ্ধজয় করেও পরাজয়ের সামিল। রাগে দুঃখে মুখে চাপা গোঙানির মত আর্তনাদ করে হঠাৎ এক হাতি লাউ টিকে গদার মতো ঘুরিয়ে পেছন থেকে  আঘাত করে বসে গদার মাথায়। বেমক্কা আঘাত খেয়ে পড়ে যায় গদা। মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। চেতনা অবলুপ্তির প্রায় দোড়গোড়ায় পৌঁছে গদা শুনতে পায় চারপাশে লোকজন তারস্বরে চিৎকার করছে, "কাম অন লাউদা, কাম অন..উঠে পড়ুন।" গদা যেন রেসলিং রিংয়ে ধরাশায়ী      কুস্তিগীর। 

-"ছাড়বেন না লাউবাবু, উঠে পড়ুন জলদি, জান থাকতে লাউ দেবেন না। চিয়ার আপ লাউ, লাউ, লাউ চিয়ার আপ।" গদা শোনে শেষের গলাটা একটা বাচ্চা ছেলের। হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে। 

কয়েকটি হাত এগিয়ে আসে গদার দিকে। গদা হাত বাড়িয়ে দেয় না। হাতগুলো কেন যেন মোটেই বিশ্বস্ত মনে হয় না। মাঝ রাস্তায় চোখ বুজে পড়ে থাকে গদাধর।  বিপর্যস্ত, ধরাশায়ী লাউয়ের নরম শরীরে ক্রমাগত বিদ্ধ হতে থাকে বিদ্রূপের অজস্র কাঁটা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri