সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

কুসুমকুমারী : কবি জীবনানন্দের মা/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

কুসুমকুমারী : কবি জীবনানন্দের মা
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

"আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে।" 

কবি কুসুম কুমারী দেবী তাঁর কালজয়ী কবিতা " আদর্শ ছেলে " কবিতার জন্য চিরকাল আমাদের অন্তরের অন্ত:স্থলে পুজিত হবেন।
বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে "আদর্শ ছেলে " কবিতাটি  অন্তর্ভুক্ত হওয়ার  জন্য কবি সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কবির বড় ছেলে জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় কবি।
কবি কুসুমকুমারী দাশ বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরের এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে ১৮৭৫ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর  জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  তাঁর বাবা ছিলেন  চন্দ্রনাথ দাশ এবং মায়ের নাম ছিল  ধনমাণি। 

চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের ক্ষোভের শিকার হয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের বিরোধিতা চরমে পৌঁছলে চন্দ্রনাথ
গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা 
ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন।

কুসুমকুমারী  শৈশবে একটি খুব সুন্দর  পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। ছাত্রীদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের  বাড়িতে  রেখে  বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে কুসুম কুমারী পড়াশোনা করেন।  প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তাঁর  বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে।  তাঁরই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য  চর্চা  চালিয়ে যান।
বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী নিয়মিত  যোগদান করতেন।  তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোৎসবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে তিনি  সাথে  এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, 
শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন। 
তিনি বরিশাল মহিলা সভার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও নানান বিষয় নিয়ে  প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল খুবই আকর্ষণীয়। 

তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন "ব্রহ্মবাদী" পত্রিকায়। তাঁর অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে "প্রবাসী" ও "মুকুল" পত্রিকায়। তিনি নিয়মিত পত্রিকা রাখতেন। তাঁর লেখা  অধিকাংশ কবিতাই পাওয়া যায়নি কারণ হয় সেগুলো হয় হারিয়ে গেছে নতুবা তিনি সেগুলো নষ্ট করে ফেলেছিলেন।  তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ এবং  দেশাত্মবোধ। 

"কবিতা মুকুল" প্রকাশিত হয়েছিল  ১৮৯৬ সালে। সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল  তাঁর  "কবিতা মুকুল" কাব্যগ্রন্থ। "পৌরাণিক আখ্যায়িকা"  নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেছিলেন।

"নারীত্বের আদর্শ" প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় কুসুমকুমারী 
স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। তাঁর বড়ো  ছেলে এবং  কবি জীবনানন্দ লিখেছেন- "সাহিত্য পাঠে ও আলোচনায় মা'কে বিশেষভাবে  অংশ নিতে দেখেছি। দেশী বিদেশী কোনো কোনো কবি ও ঔপন্যাসিকের কোথায় কি ভাল, কি কি বিশেষ তাঁরা দিয়ে গেছেন- এ সবের প্রায় প্রথম পাঠ তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি। "

তাঁর স্বাভাবিক কবিমনকে তিনি শিক্ষিত ও স্বতন্ত্র করে তোলবার অবসর পেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি কিছু লিখবার সুযোগ পান নি।  তখনকার দিনের সেই অসচ্ছল সংসারের একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সব ইচ্ছা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হল না।"

কবির এক মেয়ে সুচরিতা দাস পূর্ব মেদিনীপুর (সাবেক মেদিনীপুর ) জেলার সদর শহর তমলুকে রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন।  দীর্ঘ চল্লিশ  বছর তিনি এই পদে আসীন  ছিলেন। আমাদের দেশে কথায় বড়ো না হয়ে কাজের ছেলেদের সংখ্যা বেশি হবে এই প্রত্যাশা মনে নিয়ে এই কালজয়ী কবি,  ১৯৪৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতে আচমকাই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।

কালজয়ী কবিতাটি রয়ে যাক আমাদের সবার অন্তরে:

আদর্শ ছেলে 

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে 
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
"মানুষ হইতে হবে " এই তার পণ
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান 
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ? 
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয়? 
সে ছেলেকে কে চায় বলো কথায় কথায়
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায়।
সদাপ্রাণে হাসিমুখে কর এই পণ
'মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।'
কৃষকের শিশু কিম্বা রাজার কুমার 
সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri