সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
07-July,2024 - Sunday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 244

কালাপানির যাপন কথা/বিমল দেবনাথ

কালাপানির যাপন কথা…  
বিমল দেবনাথ   
 
কালো গাভিন মেঘগুলো উড়ে এলে শালবনের ছায়া আরও ঘন হয়ে ওঠে। ছায়া পড়ে আলোমতির ঘরে। উত্তরের ভুটান পাহাড়ের দিকে উড়ে যাবার সময় কয়েক ফোঁটা জল খবর দিয়ে যায় বর্ষার। আলোমতির হাতে পড়ে এক ফোঁটা বৃষ্টি। আলোমতির শরীর শিরশির করে ওঠে। বৃষ্টির জল-বিন্দু কালো ধুলো ধুয়ে দিলে সবুজ সবুজ হয়ে ওঠে। পাতাগুলো যেন হাসে। জলের  খবর শালগাছের মতো আলোমতির ভালো লাগেনা। চোখের সামনে ভেসে উঠে সুক্তি, পাগলাঝোরা, কালাপানি ও রেতি। কালাপানিকে চার দিক থেকে ঘিরে রেখেছে এই চার নদী আর ঘন জঙ্গল। বর্ষার আনাগোনা শুরু হতেই মরা নদীগুলো যেন প্রকাণ্ড অজগরের মতো আস্তে আস্তে শীতঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে। বর্ষার আগে যে পথে জীবন ও জীবিকার রসদ আসতো সে পথ নদী হয়ে যায়। পথ নদী হয়ে গেলে বয়ে আনে কষ্ট। আলোমতি ঘরে রেশন, আনাজ দেখে। তলানিতে হাত ঠেকলে ফরেস্ট গার্ডের বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যায়। যা শুনলে মনে আশঙ্কা অস্তানা গড়ে…      
     
গত বছর  টানা একমাস বৃষ্টি ছিল। কালাপানি বনবস্তি হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সুক্তি, পাগলাঝোরা, রেতি সমুদ্র গর্জনে গিলে নিচ্ছে মাটি, গাছ। কালাপানির কালো জল চুপিচুপি জাল ছড়ায় মাঠে, জঙ্গলে। রতিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে ধান খেতে। রতিয়া বুঝতে পারেনা কেন পুঁই ডাঁটার মতো বয়ে আসা ঝোরাটা এত বড় হয়ে গেল। কালো জল ধানের জমি ভাসিয়ে শালবন দখল নেয়। রেতির শালবনকে পূর্বে দিক থেকে গিলতে থাকে পাগলাঝোরা, সুক্তি। পশ্চিম দিক থেকে গিলতে থাকে রেতি। এক দল হাতি কালোজল ছেড়ে মোরাঘাটের জঙ্গলে যেতে গেলে আঁটকে যায় রেতির ঘোলা জলে। একটা বচ্চা হাতি ভেসে গিয়ে চলে যায় কালুয়ার কালো পেটে। কালাপানির কালো জল রেতিকে কালুয়া বানিয়ে দেয় একত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে। শুধু কি হাতির বাচ্চা? অবিশ্রান্ত বর্ষায়, কালাপানির কালো জল যখন কালাপানি বনবস্তির মাঠ ঘাট ছাপিয়ে কালো বিছার মতো বাড়িগুলোর উঠোনে কিলবিল করে, তখন রেতি, সুক্তি,  পাগলাঝোরার গর্জনকে ছাপিয়ে চিৎকার করে ওঠে ন’মাসের পোয়াতি সোমারি।  কান্নায় আগুন জ্বলে। আলোমতি ডাকে তার  মানুষ রতিয়াকে। রতিয়া ডাকে ভিনসাইকে। ভিনসাই বের করে তার ভ্যান। অগ্নু ভ্যানে তুলে নেয় বউ-সোমারিকে।  পুর্ব দিকে বীরপাড়া যেতে গেলে পাগলিঝোরা ও সুক্তি পার হতে হয়। পর পর দুটো ভয়। তার চেয়ে রেতি পার হয়ে বানারহাট যাওয়া ভালো। মাঝ রেতিতে ভিনসাইয়ের ভ্যান। বাতাসে ভেসে আসে গন্ধকের গন্ধ। উত্তরের ভুটান পাহাড় থেকে তীব্র গর্জন করতে করতে যেন ধেয়ে আসছে আগুন-মুখ ড্রাগন। রেতির লাল ঘোলা জল ঢেউ তুলছে সমুদ্রের মতো। রেতির গর্জন আর সোমারির চিৎকার মিলে মিশে একাকার। কারো কথা কেউ শোনেনা। কারো কান্না কেউ বোঝেনা। মাঝ নদীতে ভ্যানের উপরে সোমারি প্রসব করে। রক্ত, নদীর লালজল, চোখের নোনাজল তীব্র ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটায় অস্পষ্ট হয়ে যায়।   বৃষ্টির মিষ্টিজল বর্শার মতো আঘাত করে শরীরে। পায়ের তলার বালি সরে যায় চোরাবালির মতো। আলোমতি ভ্যান ছেড়ে রতিয়ার হাত চেপে ধরে। তীব্র স্রোতের ধাক্কায় টলে যায় ভ্যানের চাকা। সোমারির বাচ্চাটা চলে যায় কালুয়ার পেটে। দুর্যোগে হাতি মানুষ সব সমান। বছরের পর বছর কালাপানি পড়ে থাকে কালাপানিতে। মাঝে মধ্যে ঊর্মির  মতো  আসে উন্নয়ন-কথা। সে সব বয়ে চলে যায় রেতির জলের মতো। সঙ্গে থাকে শুধু প্রাচীন শাল, সেগুন, শিমুল ও খয়ের।  কখনও কখনও প্রতিবেশীর মতো থাকে এক দল হাতি। ঘোর বর্ষায় শালের বাকল তুলে সপরিবারে চিবায়। ঘরের রেশন আনাজ শেষ হলে রতিয়ারা রেতির জঙ্গলে এক দল বুনো শূকরের সঙ্গে খোঁজে শিমুল-কান্দা, মাটিয়া আলু। সেখানে ভাগ বসায় হাতিও। আলোমতি রান্না ঘরের পাশ থেকে শীতে জমানো লাকড়ি টানলে, লাকড়ির সঙ্গে বেরিয়ে আসে কেউটে।  সাপও মনে হয় জানে কখন কাটতে হয়। সে আস্তে আস্তে চলে যায় অন্য দিকে। আলোমতি উনুনে আলো জ্বালে আর ভাবে – সাপ, হাতি মানুষ হলে কি জঙ্গলে বেঁচে থাকা যেত? উধারে আধ সের চাল আনতে গেলে মুদি রমেশ শাউ এমন করে আলোমতির বুক, তলপেট দেখে যে এখনও রাগে, ঘেন্নায় শরীর রিরি করে। রতিয়া বলে এই নে শিমুলকান্দা। এই গুলো সেদ্ধ কর। এবার বর্ষা গেলে এই দেশ ছেড়ে দেব।   
আলোমতি রতিয়াকে বলে, খুব তো বলে ছিলে এই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবে। সে তো হলো না। আবার বর্ষা এসে গেল। ঘরে জমান কিছু নেই। এই বর্ষায় কী হবে। রতিয়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, বনের বাইরে বনের হাতি, বাঘ, দেখলে মানুষ যেমন হৈ হৈ করে তাড়াতে থাকে, বনের মানুষকেও তেমন করে। বনের বাইরে থাকতে গেলে অনেক টাকা লাগে। রাতিয়া ঘাড়ে কুড়াল নিয়ে আলোমতি হাত ধরে তাকিয়ে থাকে রেতির শালগাছের দিকে। চোখগুলো লাল হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ঘুরে যায় বন-অফিস, বিটে। দেখতে থাকে বিট অফিসের দরজা কখন বন্ধ হয়। বর্ষার আগে ওদের যেতে হবে বনে।   
 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri