সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-May,2025 - Sunday ✍️ By- রবীন বসু 45

কাপালিক দিন, আতপ্ত অস্থির/রবীন বসু

কাপালিক দিন, আতপ্ত অস্থির
রবীন বসু

রাত্রিদিন ঘুরে মরি, নিজস্ব স্বপ্নের গোলাঘরে
চরকিপাক কেটে আসি বাহির থেকে ভিতরে
আমার আত্মার কথা শোনে নাই কোনো জাদুকর
রক্ত পড়ে ক্ষত থেকে, যন্ত্রণার বিষম প্রদাহ
আরোগ্য সহজ নয় তবু খুঁজি অন্য মায়াঘর
সারাদিন গান বাজে, মৃদঙ্গ করতাল সহ
ধ্বনির ব্যাঞ্জনা জাগে মূর্ছাহত অসহ বিরহ।
নিজেকে উজাড় করি, আক্ষরিক অবলম্বনহীন
তবু দেখি ক্রোধ আসে, জড়ো হয় তুমুল বিক্ষোভ
আত্মার ক্রন্দন দেখি আর দেখি তীব্র সংক্ষোভ।
গ্রামদেশ ডুবে মরে অন্ধকারে হাতড়ায় দিশা
কিশোরী শরীর থেকে ঝরে পড়ে দগ্ধ দাগ ছাই
বলাৎকার চিহ্ন আঁকে চৈতন্যের পাশবিক নিশা।
তবুও সতর্ক গ্রাম ভয় আসে ত্রাস নিয়ে ভারি
পেট্রোলে জ্বলছে দেখি গৃহবন্দী শিশুদের দেহ
গ্রাম ছাড়া ভিটে ছাড়া মানুষের জ্বলন্ত শরীর
পায় না চিকিৎসা কোন, শুশ্রূষার প্রলেপবারি!
এই সেই গণতন্ত্র, বেজে ওঠে সংখ্যাগরিষ্ঠ হাতে
তাহাদের বাহুবল, কেটে দেওয়া গণ্ডিরেখা যত
শাসানির রূপ নেয়, প্রতিষ্ঠিত দৃপ্ত সিন্ডিকেট।
সংবিধান লজ্জা পায়, প্রণেতারা পঞ্চভূতে
এও বাহ্য, আমাদের নিপাট সহনশীলতা
পরিপাটি আনুগত্য আনে পারিতোষিক সম্মান
আদানপ্রদান চলছে, চলছে সমঝোতা বহুত।
তাহলেও ঝড় উঠবে, ঈশানকোণে ভয়ানক
বিদ্যুৎ ঝিলিক দেবে, অন্ধকারে বারুদের স্তূপ…
আমারা পারি না থাকতে ঠুঁটো জগন্নাথ নিশ্চুপ!
সারাক্ষণ ঘুরে মরি সাহস সংগ্রহ করি দুর্বার
আমার আস্তিনে কোন ছুরি নেই, যা বেঁধালেই
ধর্ষকের মৃত্যু হবে, মরে যাবে রাজনীতির ঘোড়া!
তবু একদিন পোড়া বুকের গভীরে জ্বলে অগ্নি
ধিধিধিকি থেকে দাউদাউ হবে দুরন্ত জ্বলন,
সীমানা বেড়ার ধারে ভস্মীভূত যত অপরাধ
পুনরায় শাস্তি পাবে, প্রবলতর দৃপ্ত প্রতিবাদ!

নাগরিক উচাটন নিয়ে সময় হাঁটছে দ্রুত
পরিবেশ ছাতা ধরে আর যত ষড়যন্ত্র করে
জীবন মানছে হার মুহুর্মুহু আঘাত ছিন্ন
আদপে মানুষ নই, আমরা সব ব্যবহার্য বোড়ে
তুমুল সম্মতি নিয়ে ছুটেছি প্রাসাদ পানে ধেয়ে
ওখানেই পুরস্কার, ওখানেই অন্নসুখ জোটে;
আর যারা পড়ে থাকে নিঃস্ব হয়ে অকিঞ্চন যত
তাদের জঠরজ্বালা, রোদ জলে পোড়ার শরীর
হাহাকার করে ওঠে অসহায় ক্রোধ চেপে বুকে।
সমূহ বিনাশ নিয়ে আমাদের গণতন্ত্র হাঁটে
আভূমি আনত সন্ধ্যা সর্বনাশ কুরে কুরে খায়
শ্মশান সম্বল করে নিঃস্বতার শেষ চিহ্নটুকু
পঞ্চায়েত হাওয়া এসে উন্নয়ন মারমুখী করে।
ভোট আসে, কথা ফোটে, বেজে ওঠে শপথবোল
মিটে গেলে রক্তচক্ষু, দখলের প্রশস্ত সড়ক।
দেশ মরে মাটি কাঁদে, হতশ্রী মানুষের দশা
সুখের বিলাসে বসে প্রভু তারা, হন শিল্পপতি
মুনাফার সবটুকু ভাণ্ডে রাখে পরদেশে গিয়া
তবু ওরা ছাড় পায় প্রত্যাশীত সরকারি দয়া।
আমার ভারতবর্ষ ফুটপাতে শুয়ে থাকে রোজ
নগ্ন করে ছিন্ন করে দখলের দুরন্ত বুলডোজার;
শরণার্থী ভরে যায় ছিন্নমূল মানুষের শ্বাস
দেশে দেশে যুদ্ধ বাধে অগনন মৃতদেহ পড়ে
যাদের শ্রমের ঘামে একদিন সভ্যতার বিকাশ
হয়েছিল পৃথ্বী পরে, আজ সব শূন্যছায়া ম্লান।
দিকে দিকে শকুনের বড়বেশি অন্ধকার ডানা
তাদের ঠোঁটের ঘায়ে, নখের নারকীয় আঘাতে
রক্ত ঝরে সবখানে, নিঃস্ব প্রাণ হাহাকারে মরে,
আহ্লাদে আটখানা তারা সব বংশবিস্তার করে।
পৃথিবী গলিত শব ভবিতব্য অন্ধকার মাখে
সংক্রান্তির শেষ লগ্নে পৈশাচিক শীতলতা বাড়ে
তান্ত্রিকের সম্মোহন জেগে ওঠে শ্মশান কিনারে।

এই সেই বদ্ধভূমি শাসকের দারুণ আশ্রয়
প্রতিবাদ মেরে ফ্যালো, প্রতিরোধ ভেঙে চুরমার।
গণতন্ত্র কথা বলে! দুঃসাহস ঘাড় ভেঙে দাও
তাহলেই শেষ হবে এইসব অবাঞ্ছিত চিৎকার।
চোয়ালের দৃঢ়তার মাপজোক দেখে নাও দ্রুত
ও চোয়াল ভেঙে দিতে হাতুড়ির এক ঘা যথেষ্ট।
অনেক কৌশল আছে ফন্দিফিকিরও জানা আছে
ছায়াযুদ্ধ জানা আছে, পিছনে ছুরির গুপ্তঘাত
তুমি যদি বশ্য হও, আমিও সদাশয় মহৎ
কৃপাদানে ভরে যাবে করপুট একান্ত তোমার;
না-হলেই রক্তনেত্র, না-হলেই সমূহ বিনাশ
মৃতদেহ ঝুলে যাবে আত্মহত্যা হয়েছে প্রমাণ।
যত গূঢ় পাপাচার নৈতিক পতন, সব যদি
খুলে যায় গুপ্তমুখ, নব দিনলিপি লেখা হবে,
সে অক্ষর ভেসে ওঠে মার খাওয়া আহত মুখে।
নিজের কঙ্কাল থেকে জন্মাবে ভিন্নতর কঙ্কাল
নিঃশেষিত পূজাপাঠ, পুড়ে যাবে ব্যর্থ মনস্তাপ;
গভীর আঁধার থেকে জেগে ওঠে নিজস্ব প্রত্যয়
আত্মপক্ষ সমর্থিত আলাপের বিস্তারিত ঢেউ
কোথাও আকার পাবে,গড়ে তোলে কেউ-না কেউ।
আবহমানে বিঁধে আছে কাঁটা, সূচিমুখ অমসৃণ 
অলিখিত ইতিহাস এইবার কথা লিখবে খুব
অদৃশ্য লাটাই হাতে সুতো ছাড়ছে সম্মুখের দিন।
যুদ্ধ হবে সোজাসুজি অস্ত্রশস্ত্র আছে অপ্রকাশ্য
কৌণিক বিন্যাসে জড়ো হাতিঘোড়া লোকলস্কর
আঘাতে বিদীর্ণ দেশ ক্ষুধার অন্ন চাইছে দেখি।
গতিমুখ বদলে যাবে মানুষের প্রত্যাশার হাত
অরণ্যের তপোময় ভূমি হাতছানি দিয়ে ডাকে
অহরহ কানাকানি সুবিস্তৃত শামিয়ানা ভেদ করে
জাতিমুখ ধর্মমুখ বর্ণমুখ মানুষের শোকে
সভ্যতা কেঁদেই চলে, সে ক্রন্দন আরক্ত বধির।
শিরামুখ অবরুদ্ধ, চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে জল
আকণ্ঠ তৃষিত প্রাণ মূর্ছাগত গাঢ় অবিরল
তুমি তবু প্রগতির রথপাশে দাঁড়াবে নিশ্চয়!
পারানির মুঠোখই ছড়াতে ছড়াতে সারাদিন
শববাহকেরা চলে বৃষ্টিহীন নগরে প্রান্তরে;
অনন্তের যাত্রাপথ ধরে রাখে শ্রমজীবী মুখ
তারার আলোয় হাঁটে ভাগ্যলিপি পরিযায়ী পদ
কোথাও স্থিরতা নেই উন্মূল সময়ের চলন
বিভঙ্গ মুদ্রায় ভাসে মাধুকরী সত্তার বিলাপ;

সাম্যবাদ চলে গ্যাছে, কর্পোরেট হাঁ-মুখ গিলছে
ছোট ব্যবসা, অল্প পুঁজি আর মধ্যবিত্ত ভবিষ্যৎ
রাঘব বোয়াল জানে কুক্ষিগত উদরের টান
সেখানেই লোভ জমে আহরিত সম্পদের ছাপ
নোটবন্দী ভারতবর্ষ দ্যাখেনি তো কালোটাকা ছাই!
মানুষ ভীষণ একা, অসহায় আর প্রতারিত
আলেয়ার পিছু নেয়, মরুভূমি মরীচিকা শেষে
চিটফাণ্ডের স্বর্ণলাভ সুকৌশলী মায়ার বাঁধন
আশাহত বুকে শুধু দীর্ঘশ্বাস ওঠানামা করে;
সামনে প্রশস্ত পথ অনির্দেশ চালচিত্র আঁকে
মুহ্যমান মহাশোক শতাব্দীর তরবারি খোলা
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তথাগত বুদ্ধের শরণ
শোক তাপ নিমজ্জিত জীবনের মহানন্দ মাঝে
অদ্ভুত দৃশ্যের খেলা ম্যাজিক উদ্ভাস নিয়ে জাগে।
খুদকুঁড়ো হাতে ধরে, মাধুকরী ভিক্ষার চাল
ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে বহমান সময়ের কাল।
রাত্রিদিন ঘুরে মরি নিজস্ব স্বপ্নের গোলাঘর
হেসে যায় জাদুকর, রোদ পড়ে চামড়ার উপর
খানিক বিম্বিত সুখ, অধরা ভানুমতির খেল
আমার স্বদেশ কবে নিরন্নের পাতে ভাত দেবে?
মাটিও শুকনো হল লোভাতুর বেনিয়ার চাল
কৃষকের শস্য মরে, অতিমারি ফণা তুলে আছে
ধরিত্রী আপন বুকে দূষণের ক্লেদ মেখে যায়।
বেনিয়ার অতিলোভ মানুষের সর্বনাশ করে
প্রকৃতি আছাড় খায় জলহীন বায়ুহীন তপ্ত
সভ্যতার রথচক্র গর্তে বদ্ধ স্থির চলৎহীন
দিনশেষে কে বাজায় পতনের অনিঃশেষ বীণ?
সন্ত্রাস ঘিরে ধরে, রক্ত ঝরে ভূস্বর্গ কাশ্মীরে 
নিরীহ পর্যটক মারে, মৌলবাদ ভয়ানক হয়—
এইবার জেগে উঠবে কাপালিক ভয়ানক হয়ে
আতপ্ত অস্থির দিন ফিরে পাক জীবন নির্ভয়ে!
                           ••

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri