কনকচাঁপা তোমাকে/চিত্রা পাল
কনকচাঁপা তোমাকে
চিত্রা পাল
কনক চাঁপা,
তোমাকে বলছি, তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কে? না পারনি। সেটা তোমাকে দেখেই আমি বুঝেছি। তোমার চাল চলন আবভাব বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। এখন কোন দিকে তাকিয়ে দেখার মন তোমার নেই।তাই আমাকে দেখেও দ্যাখোনি। এতদিন তুমি শীতের হাওয়ায় কেমন কুঁকড়ে নিশ্চুপ মত হয়ে ছিলে। পাতা ঝরানো কংকালসার দেহ, নির্জীব,উত্তাপবিহীন। দেখে মনে হত, আর কদিন পরেই তুমি শুয়ে পড়বে,বোধ হয় আর তোমাকে জাগানো যাবেনা। আমি দেখি আর ভাবি সত্যিই কি তুমি এমন থাকবে? আসলে আমি নিজেকে দিয়ে বিচার করি। তোমার এত বড় আকার যে এমন মৃতপ্রায় হয়ে যায় কে জানতো? আমি তো সদ্য এসেছি, এখানের জল হাওয়ায় ভালই আছি। সেদিন দুজন অতিথির কথাবার্তা শুনে তাই মনে হলো।
আবার আসি তোমার কথায়। তারপরে যেমন দখিনা বায় বইতে শুরু করলো, তখন তোমার এলো পরিবর্তন।কোন সুরের মাতন তোমায় নাচিয়ে দিলো জানিনা, কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে চমক লেগে উতলা হওয়া যে নিজের চোখেই দেখলুম। কোন এক রঙের মাতনে সহসা উঠল দুলে ফুলে ফুলে তোমার ডালপালা। আমি মনে ভাবি, কাউকে কি আকাশ-মাঝে দেখতে পেলে, না, কোন অজানার ধেয়ান তোমার মনে জাগলো? কে জানে। কি উল্লাসভরে তোমার আকুল হয়ে থাকা। তুমি যেন হাওয়াকে ডেকে বলছো,দখিন হাওয়া এসো,এসো, জাগাও আমার সুপ্ত এ প্রাণ। তুমি অধীর হয়ে মেতে উঠলে ওর সঙ্গে। তোমার মুকুল ছাওয়া শাখার পাতায় পাতায় দোল দিয়ে যেন প্রমাদ ঘটিয়ে দিলো দখিন হাওয়া। তোমাদের দুজনের পাগলামিতে বনবীথিকা হল মর্মরিত,মুখরিত। তোমার শাখে শাখে এলো নতুন কুঁড়ি। তারা সব ফুটে উঠে, হাওয়ায় মেতে ওঠে।ভরে যায় তোমার গন্ধে। তার সঙ্গে আমিও যে বিহ্বল হয়ে পড়ি বারে বারে। তাই তোমাকে বলছি, তুমি এমন আনন্দেই থাক, এমন আনন্দেই রাখ সবাইকে, এবার আমাকেও জড়িয়ে নাও তোমার এই নব উচ্ছ্বাসভরা হাসির জালে। বনে বনে দোল জাগাও তোমার তুফান-তোলা হিল্লোলে।
ইতি -
তোমার কাছের পাশের বন্ধু করবী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴