সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

ও কি এল, ও কি এল না.. বোঝা গেল না/মনোলীনা রায় কুন্ডু

ও কি এল, ও কি এল না.. বোঝা গেল না
মনোলীনা রায় কুন্ডু 

সোয়া দশটা  বেজে গেছে... অফিসে ঢুকতে দেরী হয়ে যাচ্ছে...বাসের ভিতর ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে উঠছেন শিবনারায়ণ….আজ নির্ঘাত চিঠি খেতে হবে। বড় সাহেব কয়েক দিন আগে হঠাৎ ভিজিটে এসে মেজো ছোট সায়েবের টিকি নাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ী থেকে বেরিয়েওছেন তাড়াতাড়ি, কিন্তু ক্যাথিড্রাল রোডের সামনে আধা রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেল বেঁধে রবীন্দ্রজয়ন্তী চলছে... আধখানা রাস্তায় এই অফিস টাইমে সড়কপথের সব রকম যান ঠেলে গুঁতিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে, কিন্তু এগোতে পারছে সামান্য..চড়া রোদে রবীন্দ্রজয়ন্তীর বিশেষ পোষাকে  ছেলেমেয়ে মা বাবার সাথে নাচের পোশাকে বাচ্চা কাচ্চা আর রবীন্দ্র গান….. ভালো লাগতে গিয়েও ভালো লাগে না। অবাঙালি বসের মুখ মনে পড়ে…বুক ধড়পড় করে।
            বাস থেকে নেমে ছুটতে ছুটতে আপিসে ঢুকতেই সামনে সায়েব... হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বললেন "রাস্তায় রবীন্দ্রজয়ন্তী স্যার, তাই দেরী স্যার"... এটুকু বলে কোনমতে হাজিরা খাতায় সই করতে কলম বের করেছেন, ভাবছেন লাল কালি নিশ্চিত পড়ে গেছে খাতায়, কিন্তু না... অবাঙালি অফিস কর্তা পেছনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে বলছেন, "আজ মাফ হোয়ে গেল শিবুদাদা, আজ টেগোর কা জনমদিন। আমি জানে, লো আজ গুরুদেব নে মাফ করে দিল..আজ লেট হোবে না।"......আড় চোখে শিবু দাদা দেখেন দরজার পাশের টেবিলটিতে গুরুদেব নেমে এসেছেন দেয়াল থেকে...দু'পাশে ফুলদানিতে প্লাস্টিকের ফুল, গলায় রাংতার মালা।
           সুরজিৎ নেমে এসেছে উপর থেকে হাতে একগাদা ফাইল,.."একটা ফুলের মালা পাওয়া গেল না আজকের দিনে? দেখি,পাই কি না।" সকলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর মনে মনে ভাবছে আজ বিকেলে অফিসে একটা রবীন্দ্রজয়ন্তী হবে তো!! যদি  সব কাজ শেষে আর বাড়ী যাওয়ার মাঝে একটু ফাঁক মেলে, যদি একটু কিছু করতে হয়, কি করবে? কেউ কেউ মনে মনে কবিতার মহড়া দিয়ে নেয় "আজি এ প্রভাতে রবির কর" অথবা "মেঘের মধ্যে মাগো, যারা থাকে"!! কেউ কাজ করতে করতেই গুনগুনিয়ে ঝালিয়ে নেয় "এসো হে বৈশাখ"... মুনমুন ভাবে শ্রেয়া দিদির মতো আজ শাড়ি পরে এলে বেশ হত, কেমন সুন্দর বাটিকের শাড়ী পরে এসেছে দিদি। কমল আবার সেলফোন ঘেঁটে সাঁওতালি উচ্চারণ সম্বলিত এক কবিতা মুখস্থ করে চলেছে….যার মর্মার্থ রবিঠাকুর কেন তাঁর রচনাগুলি সঙ্গে নিয়ে গেলেন না, সেসবের খুবই ভুল ব্যবহার হচ্ছে.…
           কিছু হবে কিনা জানা নেই, তবে সবাই চাইছে আজ না হয় বাড়ি ফিরতে একটু দেরী হবে, তবু অনুষ্ঠান একটা হোক।
সময় ছুটির দিকে এগিয়ে চলে, কারো কাজ শেষ হয়েছে,কারো হয়নি।
           হঠাৎ অফিসের মাইকখানা, যা বক্তৃতা থেকে শ্লোগান সব কাজে ব্যবহৃত হয়, যার স্বরভঙ্গ  হয় মাঝে মাঝেই..সেই মাইকে গান গেয়ে ওঠে সঞ্জীবদা....."এসো হে বৈশাখ, এসো এসো, তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষূরে দাও উড়ায়ে", একটু দূরের টেবিলে বুকখানা কেঁপে ওঠে বিদ্যুতের, তিন বছর আগে তার যে মেয়েটা লাল হলুদ শাড়ি পরে নেচেছিল, সে হঠাৎ জ্বরে অসাড়, জড়বৎ, মৃতপ্রায়... চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। শেষ কাজটুকু সেরে সে এসে বসে সামনের চেয়ারে, ততক্ষণে আবীরদা মুঠোফোন খুলে গলা কাঁপিয়ে আফ্রিকা কবিতাটি আবৃত্তি করতে লেগেছেন, ফোন দেখতে ভুল হওয়ায় বা মহড়ার অভাবে হোঁচট খাচ্ছেন মাঝে মাঝে।এরপর অনেক ডাকাডাকি আর সাধাসাধির পর শ্রেয়া তার বাটিকের শাড়িখানির আঁচল কোমরে গুঁজে নাচতে রাজি,  মুঠোফোনে  গান বেজে ওঠে…"শ্রাবণ গগনে ঘোর ঘনঘটা".. দেবযানী দাঁড়িয়ে এককোণে, তার মুঠোফোনে বরের ডাক আসে ''আরে, কখন আসবে তুমি? কলা মন্দিরে চলে যাবে নাকি একেবারে? আমি তবে চলে যাই ওখানে?" দেবযানী মুঠোফোনে দেখে সাড়ে ছটা, সাতটা থেকে অনুষ্ঠান, এক ঝাঁক বিশিষ্ট শিল্পীর রবীন্দ্র গান, তার টিকিট কাটা আছে। বেরিয়ে যেতে যেতে তার মনে পড়ে গত বছর এ দিনটায় সে সিমলায় ছিল, পাহাড়ের উপর তার মেয়েটা নেচেছিল এই গানে.. আর ছেলেটা ক্যামেরাবন্দী করেছিল সে নাচ।ক..ত দূরে তার ছেলেমেয়ে দুটো এখন, ওরা কি জানে আজ পঁচিশে বৈশাখ? ততক্ষণে শর্মিলাদি গান ধরেছেন, "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে"...বাইরে তখনো রোদের আভাস। বিদ্যুতের মনে পড়ে গেল কোথায় যেন পড়েছিল এই গান রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার ছোট ছেলের মৃত্যুর পর। সেও গাইবে এবার। অফিস প্রায় খালি, গলায় সুর লাগে না ভালো আজকাল, তবু সে গাইবে। মাইক হাতে নিয়ে দেখে, তার চার্জ প্রায় শেষ.…অবশিষ্ট লোকেরা উৎসাহ দিলেন, "খালি গলাতেই গান, বিদ্যুৎদা"…সে শুরু করে "আনন্দ লোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর"....গাইতে গাইতে সে চলে যায় তার গ্রামের বাড়িতে মুমূর্ষু সন্তানের শিয়রে, যার কাছে সে আজ আর পৌঁছাতে পারবে না.... সপ্তাহের শেষ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকবে... কপালে হাত রেখে "মাগো" বলে চুমো দিলে সে নিশ্চয়ই চিনতে পারবে বাপের স্পর্শ।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri