এমন করে কে গো ডাকে
এমন করে কে গো ডাকে
কবিতা বণিক
====================
বন্ধুর ডাক পড়ল 'স্কুল যাবিনা? চল!' ক্লাস শুরু হতেই প্রতি ক্লাসে নাম ডাকা হচ্ছে। স্কুল ছুটি হলে বিকেলে খাওয়াটা কত তাড়াতাড়ি সারা যায় সেইটে ছিল একটা লক্ষ্য। কারণ এখুনি ডাক আসবে 'খেলবি না? আয়! ' খেলার মধ্যেও চলত কত নাম পাতাপাতি। সেই নাম ধরে সুর করে ডাকতে হত - 'আয় রে আমার গোলাপ বালা....' ইত্যাদি নামের। কে কত নাম দিয়ে ডাকতে পারে। এদিকে সূর্য দেবের, সন্ধের ডাক আসতেই শুনতে পাই মায়ের ডাক - 'বাড়ি এসো! এখন আর খেলা নয়।' বাড়ি এসে হাত পা ধুয়ে সবার সাথে বসে ভগবান কে ডাকা- 'তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে...' এবারে পড়ার টেবিলে যতই মনোযোগ দিই মাসি-পিসিদের ঘুমের ডাককে উপেক্ষা করার মতো আর শক্তি থাকে না। অগত্যা মা আমাদের খাইয়ে পাঠিয়ে দেন বিছনায়। চাঁদের টিপ কপালে পরে ঘুমের দেশে যাওয়া। ভোর হতেই মায়ের ডাক - 'উঠে পড়! ভোর হল। ঐ দেখ পাখিরা ডাকছে, যুঁই ফুলেরা ডাকছে। এবারে উঠে পড়তে বসো।'
বড় হতে হতে ডাকের সুর, শব্দ সব কেমন পাল্টে যেতে থাকে। নাচ, গানের মধ্যে দিয়ে পৌষ ডাকে, বসন্ত ডাকে, শুনি বর্ষার গুরু গুরু ডাক তার সাথে মনোহরন করা কেকাধ্বনি। মনে হয় এমন করে কে গো ডাকে?
দেখতে দেখতে সংসার জীবনে সন্তানদের মধুমাখা আধো আধো ডাকে যেন জীবনের সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায়। এদের বড় হওয়ার সাথে সাথে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, সাগর-এর ডাকে বন্ধু, স্বজন ও পরিবার নিয়ে আনন্দে বেরিয়ে পড়া। কেউ না ডাকলে ঐ আনন্দ পাওয়া সম্ভব হয় না।
ডাক আসে নানা ছন্দে নানা রঙের নানা ভঙ্গিমায়। আর তাই জীবন খাতার পাতা গুলোও কেমন রঙিন হয়ে খেলে। কখনো পলাশের রঙে, কখনো মধুমালতীর রঙে, কখনো সাদা সফেন ঝর্ণার উচ্ছ্বলতায়, আরও যে কত রঙে! তার হিসেব কষা দায়। শেষ পাতাটি যখন আসে তখন আসে অনন্তের ডাক। ওম মন্ত্র ধ্বনির মাধ্যমে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴