এখনো কি আগের মতোই আছিস/সঙ্গীতা চন্দ
এখনো কি আগের মতোই আছিস
সঙ্গীতা চন্দ
প্রিয় সঙ্গীতা,
শুভ নববর্ষ। মনে পড়ে আমাকে? সেই ১৪০০ সালে শেষবার তোর সাথে দেখা হয়েছিল। তুই তখন সদ্য বিবাহিতা। পানপাতা মুখখানিতে কপালে সিঁথিতে সিঁদুর রাঙিয়ে হাসি মুখে তাকিয়ে বললি - 'আসি', ছোট্ট নাকফুলটাতেও সিঁদুর লেগেছিল। তুই নাক ফুটিয়ে ছিলি বরের পছন্দ তাই। কষ্ট পেয়েছিলি তাতে, নাকটা অনেকদিন ফুলেও ছিল, বলেছিলি। তবে তুই তো বিখ্যাত সাজুনি ছিলি, এ কষ্ট তোর কাছে কিছু না, বল। সেই শেষ দেখা! তারপর তুই যেন হারিয়েই গেলি। মেয়ে নিয়ে সংসার নিয়ে এমন আটকে গেলি আমাদের বাতায়নের আড্ডায় আর এলিই না।
এদিকে কৃষ্ণচূড়ায় আর পলাশের আদরে প্রতি বছরের মতো এবারও যখন বাতায়নের সামনেটা ফুলে আর আবিরে ভালোবাসাময় হয়ে উঠেছিল ঠিক তখনই তোকে মনে পড়ল, আর আমিও প্রতিবারের মতো ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে নিয়ে বসে গেলাম তোর সাথে আড্ডা দিতে।
কেমন আছিস বল। তোর তো একটা সবসময় ভালো থাকার জাদুকাঠি ছিল, সেটা কাজ করে এখনও? অনবরত বদলে যেতে থাকা পরিস্থিতিতে বারংবার ভোকাট্টা হয়ে যাওয়া আমাকে দেখে আলোর মতো দ্রুত কিছু ভেবে নিয়ে তোর লাটাইয়ে জড়িয়ে নিতিস তুই। তুই কি নিজেই এখন মাঝে মাঝে ভোকাট্টা হয়ে যাস? নাহলে আমাকে একেবারে ভুলে গেলি কীভাবে বল?
পয়লা বৈশাখ আসছে। তবে মলি দিদিদের বারান্দায় মায়ের শাড়ি বেঁধে বর্ষবরণ তো আর এখন হয় না। এখন সব কিছুই খুব প্রফেশনাল। হতেই হবে। পৃথিবী এখন অনেক আধুনিক। কেউ আর কোনো কিছু এমনি এমনি করে না। ছোট্ট শিশু প্রথম চলতে শিখলেই বুদ্ধিমান গার্ডিয়ান মেপে দেয় তার পদক্ষেপ, বেঁধে দেয় তার লক্ষ্য। এতে হয়তো ওরা আমাদের মতো ঐ এলোমেলো শৈশবটা পায় না, প্রথম থেকেই বেশ রাশভারী, তবে এই ভালো বল, নাহলে শৈশবের মোহ কাটিয়ে বড়ো হয়ে আর ওঠা হয় না।
তুই কী ভালো আছিস? হাসিস এখনও আগের মতো ? নাকি বদলে গেছিস অনেকখানি? যা পেয়েছিস, সাজিয়ে গুছিয়ে যত্ন করে রেখে দিয়েছিস চিরকাল, যদি কারও লাগে কাজে। তোর নিজের তো কিছুই প্রয়োজন পড়ত না । তুই তো সেই বিখ্যাত বোকা ছিলি ডাইনোসরের মতো যা আজ বিলুপ্ত। এখনও কি আগের মতোই আছিস? এই বৈশাখী পয়লাতে আয় না একবার মুখোমুখি বসি ।
ইতি
অনেক ভালোবাসা সহ
তোর আত্মার দোসর
মানা
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴