সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
24-March,2024 - Sunday ✍️ By- মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী 399

একখানি কাব্য-চিঠি/মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী

একখানি কাব্য-চিঠি 
মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী

ছেলেবেলায় আমাদের এক অতি গুণবান প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি দরাজ গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। আমরা সবাই তাঁর স্নেহ পেয়েছি। তিনি শ্রদ্ধেয় পরেশচন্দ্র দাস। কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে মানুষটি প্রয়াত হন, যেটি গভীর বেদনার। 
তিনি তাঁর পিতা লালন পুরস্কারে বিভূষিত শ্রদ্ধেয় প্যারীমোহন দাসের সকল রচনা একত্র করে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন, আলোর দিশারী প্যারীমোহন। গ্রন্থটি আমাদের বাড়িতে এসে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, বলেছিলেন, এই গ্রন্থটির বিষয়ে কিছু লিখো, তোমার লেখা থেকে অনেকেই জানতে পারবে। লেখা হয়নি। অমৃতলোক থেকে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। সামান্য কিছু লেখার চেষ্টা করছি এখন, হয়তো সেটিই তাঁর প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা-নিবেদন হবে।

বৃহৎ আকারের এই গ্রন্থখানিতে সম্পাদক একাধারে বিশিষ্ট কবি, গায়ক, লেখক, নাট্যকার----বহু গুণে গুণান্বিত সর্বশ্রী প্যারীমোহন দাসের রচনাবলীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। ভগবৎ বিশ্বাস, শ্রদ্ধার্ঘ্য, কীর্তন, বাংলা নাটক, বিষণ্ণতা প্রভৃতি নানা ভাগে। 

বিষণ্ণতা বিভাগে সম্পাদক মহাশয় লিখছেন, তাঁর পিতার গুণমুগ্ধদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামালদহনিবাসী শ্যামাপদ বর্মণ। প্যারীমোহন দাসের সঙ্গে এঁর নিবিড় সখ্যতা ছিল। এই বন্ধুটি ছিলেন অতি গুণবান, কিন্তু সংসার প্রতিপালনের জন্য খুবই সামান্য অর্থ উপার্জিত হত তাঁর। দারিদ্রের পীড়নে তিনি অসহায় বোধ করতেন। সেই বিষণ্ণতা থেকে তিনি সমব্যথী, গুণবান প্যারীমোহনকে অন্তরের কথা জানিয়ে একখানি চিঠি পাঠালেন। উত্তর একটি কবিতার আকারে দিয়েছিলেন প্যারীমোহন, যার ছত্রে ছত্রে দিশাহীন সমাজব্যবস্থার প্রতি তাঁর তীব্র ক্ষোভ ধরা পড়েছে। প্রারম্ভিক সম্ভাষণ অতি সরল ও আন্তরিক,

প্রিয় কবিরত্ন, হে সঙ্গীত শিল্পী, ওহে গুণী মহাশয়,
গতকাল তব পত্রখানা পাই, ব্যস্ত ছিনু অতিশয়।
গোধূলি লগন, কৃষকের মন, গোরক্ষণেই চঞ্চল,
ইটা ডাঙ্গা কুরশি হাতে ছিল মোর, গৃহে ফিরি কেবল।
ছোটো মেয়ে বলে, এই দেখ বাবা এলো দুইখানা চিঠি
একটি দাদার অফিসিয়াল, তোমার এই যে এটি।

কবিতাটি অনেকখানি বড়। তারপর কিছু পঙক্তির পর দুঃখ করে তিনি লিখছেন,

সত্যিকারের কবি শিল্পী যারা, তাদের নাহিক ঠাঁই। 
প্রতিভাবিনাশ, মহাসর্বনাশ, বিকাশের পথ নাই।
হায় উত্তরবঙ্গ, একি তব রঙ্গ তোমার শিল্পীবৃন্দ
তোমার স্নেহে বঞ্চিত কেন? কেন এত নিরানন্দ?

একথা কিন্তু অনেকদিন আগে একজন শিল্পী লিখছেন! তাহলে কি গুণী সাধক শিল্পী যোগ্য সমাদর পান না তাঁদের জীবিতাবস্থায়? সাধারণ মানুষের নজর সাধারণত চমকের দিকেই থাকে,  তলিয়ে বিচার করে না কেউ সমকালে,  হয়তো কেউই সেভাবে আদৃত হন না। শিল্পীকে বুঝতে সময় লাগে, কারণ সেই সাধক শিল্পী তাঁর কাল থেকে যে অনেক এগিয়ে থাকেন!

স্বাধীন দেশের সমাজব্যবস্থা, সর্বত্রই হাহাকার
নৈরাশ্য-হতাশা বাঁধিয়াছে বাসা, কিবা তার প্রতিকার?
দেশাত্মবোধের সঙ্কীর্ণতায় ডুবিল সোনার দেশ,
জাগ জাগ কবি, দেশকে জাগাও, ত্যজিয়া ঘুমন্ত বেশ।

সেই কতদিন আগে, একজন সাহিত্যসাধক এভাবে হতাশ হচ্ছেন সামাজিক অবক্ষয় দেখে। সাধারণ মানুষের থেকে চিন্তায় চেতনায় এগিয়ে থাকা দরদী মানুষগুলোর মনের এই বেদনা হৃদয় স্পর্শ করে যায়, গভীর বিষণ্ণতা জাগে। এসব গুণী মানুষজন কালের প্রবাহে চলে যান, থেকে যায় তাঁদের সৃষ্টিকর্ম। সেখানে ধরা থাকে তাঁদের চিন্তা ও চেতনা। এসব পড়ে-জেনে-বুঝেও আমরা যে কেন সচেতন হই না! হানাহানি বিভেদ চলতেই থাকে একের সঙ্গে অপরের, হৃদয়বান এই মানুষগুলো বেদনা পেতে পেতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। আমাদের চৈতন্য কবে হবে!

আলো যেথায় যায়নি সেথায় আমার দু'টি আঁখি।
একতারাটায় একটানা সুর কতই বেঁধে রাখি?
আমার প্রাণের আকুল ভাষা, গানের ভাঙা সুর,
কেউ বোঝে না, কেউ জানে না, সে দূর অনেক দূর

এটা পড়তে পড়তে এক গভীর বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায় মন। চারপাশের সমাজ থেকে তাঁর বিশ্বাস যেন টলে যাচ্ছে, তিনি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন। অথচ তাঁর জীবনে সম্মান তিনি কম পাননি, রেখে গেছেন অতুল কীর্তি, সেকথা তিনি জানাচ্ছেন বন্ধুকে----

কি আর বলিব ওহে কবিবর, আমিও চিন্তা করি,
কি ফল লভিনু নিষ্ফল সঙ্গীত সাহিত্যে কাল হরি?
 স্বদেশে বিদেশে মিশে আছে মোর কত হাসি কত কাঁদা
মিলেছে প্রচুর অনুচ্চ উচ্চ প্রশংসাপত্রের গাদা
উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের অগ্রগতি তুলে ধরি,
কথায়, সুরে, কবিতায়, গানে জন জাগরণ করি।

অন্ধকারে আলো ছড়িয়ে দেবার যে সাধনায় প্যারীমোহন ব্যাপৃত হয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য যেন পূর্ণ হয়নি তাঁর। সেরকমটি মনে হওয়াই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। সত্যিকারের শিল্পী ও সাধক কখনও নিজের কাজে তুষ্ট হন না। সৃষ্টিকর্মটিকে আরও  সূক্ষ্ম ও নিপুণ তারে বাঁধার প্রয়াস চালান সর্বদাই, চেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে চান সকলের মধ্যে। সেই কাজে তিনি সফল হয়েছেন।
প্যারীমোহন চলে গেছেন কালের প্রবাহে। তাঁর পুত্রও অকস্মাৎ প্রয়াত হলেন। কিন্তু পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে গেলেন দু'জনেই। একজন সাহিত্য ও সঙ্গীতের সাধনা করে, আরেকজন সেই নির্মাণকে গ্রন্থভুক্ত করে। এভাবে পিতার সমস্ত রচনাকে সংগ্রহ করে, লিপিবদ্ধ করে একদিকে পরেশচন্দ্র দাস যেমন পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, অপরদিকে ভাবীকালের মানুষদের জন্যেও রেখে গেছেন অতুল সম্পদ। 
পিতা প্যারীমোহন দাস এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র পরেশচন্দ্র দাসকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri