এক লহমায় অরণ্যে-১/মনীষিতা নন্দী
এক লহমায় অরণ্যে/১
মনীষিতা নন্দী
শুক-সারিতে ঝগড়া ছিল খুব
কোন্ ঢিল টা কে ছুঁড়েছে আগে,
কার আওয়াজে কাক চিল ভোঁ ভাঁ
কে কার চেয়ে রাত্রি অধিক জাগে।
গবেষণার পৃষ্ঠা অতিমারী
হাজার কাজে মগজ যে নিশ্চুপ,
কলকব্জা গন্ডগোলে বাজে
উড়োচিঠির বেসুর প্রতিরূপ।
এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে
আক্রমণী যন্ত্রণা ভোর রাত,
মাথার ভেতর যুদ্ধাহতের খেলা
কে আগে তায় হ'বেই কুপোকাত।
সারিকে তাই শুক বলে প্রাণ খুলে,
এ'ভাবে আর কাটছে না যে রাই,
সারি বলে তাইতো বলি আমি
দোঁহায় মিলে অরণ্যেতে যাই।
কংক্রীটের এই ডাকবাক্স ছেড়ে
উড়ব দু'জন সবুজ বুকের 'পর,
স্নিগ্ধ শ্যামল, স্তব্ধ ছায়াবীথি,
পূর্ণ বনে গাইব যুগল স্বর।
বেশ নাটুকে হ'লেও, খানিকটা এ'ভাবেই হঠাৎ পরিকল্পনায় আমাদের চারদিনের অরণ্য যাপন। দেখা শোনার আয়তন ওই 'চার' এ সীমাবদ্ধ দেখে, এমন মনে হ'তেও পারে, হয়তো পরিতৃপ্তির ভাঁড়ার শূণ্য, এ শুধুই অরণ্যে রোদন। তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সেই পুরোনো কথা; সংখ্যা নয়, গুণগতমানই মূল বিচার্য। "জঙ্গলের জার্ণাল" নামটি শুনলেই চোখ জুড়ে যেন কেমন এক অদ্ভুত গাঢ় সবুজের মেঘ নেমে আসে। সাথে শুনি তিরতিরিয়ে বইছে বুড়িতোর্ষা আর সেই নাম না জানা পাখীর অনর্গল ডাক। কোথা থেকে ঝুপ ক'রে নাকে এসে লাগে কমলা শুকনো ও কচিসবুজ পাতাদের মাখামাখি, মনকেমনের গন্ধ। আমরা শ্রাবণ বনভূমি দেখিনি। দেখেছিলাম ফেব্রুয়ারীর মাঘ - ফাগুনের অরণ্য রহস্য। বর্ষার বাড়তি কিছু সবুজকে কাছে না পেলেও জঙ্গল সাফারির প্রতিটি মুহূর্তকে বিন্দু - বিন্দুতে রন্ধ্র থেকে উপরন্ধ্রে অনুভব করেছি। ফেব্রুয়ারী, এগারোয় শিবমন্দিরে আমার ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন আস্তানা থেকে ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম গরুমারা ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে। মাঝপথে একটু গাজোলডোবায় না দাঁড়ালেই নয়। "বহুদিন ধরে বহুক্রোশ ঘুরে"ও এখানকার এই তিস্তার সাথে একটু কথা চালাচালি না হ'লে কেমন যেন অসম্পূর্ণ মনে হয় সবটা। তাই অগত্যা তিস্তালাপ, সাথে বোরোলি রেস্তোরাঁয় কফি স্ন্যাক্স, মূলত বোরোলির গোল্ডেন ফ্রাই সহযোগ। এবার পৌঁছব, সোজাসুজি গরুমারা জঙ্গলে। মাঝে লাটাগুড়ি পেরোনোর পথে, ভেতর ঘরে বসে কে যেন প্রতিবাদের ঝড় তুলল, এই ধুলোবালি, সবুজ কেটে গজিয়ে ওঠা ফ্লাইওভার সে মেনে নিতে পারছেনা। ছেলেবেলার স্মৃতি, নস্ট্যালজিয়া বারবার উসকে দিচ্ছে তাকে। সেই ঝড় কে বুকে চেপেই চলতে থাকলাম, আমাদের তুলনামূলকভাবে শিশু সারথিকে পথের দিশা দিতে দিতে। পথ গাইছে গভীর দুঃখে, "চিনিলেনা আমারে কি"... সবুজের মাঝেও আমাদের জি পি এস চলছে তখন। যাক গে, তাহলে আর ফ্লাইওভারকে দোষ দিয়ে কী হ'বে! অবশেষে, পৌঁছলাম গন্তব্যে। গরুমারা ধূপঝোরা এলিফ্যান্ট রিসোর্ট। একটা বিরাট সবুজ গালিচার ওপর ছোটো ছোটো চার পাঁচটি গাছবাড়ী। এক - একটি বাড়ীর এক একটি নাম। আমাদের বাড়ীটা সম্ভবত 'হিলারী' নামের। নিরন্তর হাসিমুখে সেখানে সরকারি পরিষেবা দিয়ে চলেছেন আশেপাশের এলাকায় থাকা এবং পুরো অঞ্চলটা হাতের তালুর মত ক'রে জানা কিছু সহজ মানুষ। সবুজ গালিচার লাগোয়া একটি কোণে আছে হাতিদের থাকার ও স্নানের জায়গা। প্রত্যেকের জন্য আলাদা দেখাশোনার লোক। এখানে হাতিরা বেশ সাবধানী, ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। বেতন বলতে প্রতিদিন কেজিদরে খাবার অর্থাৎ রেশন এবং কর্মক্ষমতা শেষ হ'লে বাকী জীবনের সামগ্রিক নিরাপত্তা, এক কথায় পেনশন। সত্যিই মুগ্ধ হ'তে হয় এ ব্যবস্থা দেখে। কারণ মূলত দুটো। প্রথমত, মানুষের মাথার ভেতরকার বৌদ্ধিক আন্দোলনে, চিন্তনে কি সুন্দরভাবে হেরে যায় তথাকথিক আনসিভিলাইজড বিশাল বপুর জীব। দ্বিতীয়ত, ট্রেনিংয়ের নামে প্রায় জন্মের পর থেকেই প্রথাগতভাবে শুরু হয়ে যায়, সারাজীবনের মত তাকে তার গায়ের জোর সম্পর্কে, ক্ষমতা সম্পর্কে, স্বাধীনতা বিষয়ে, নিপুনভাবে অসচেতন ক'রে, ভুলিয়ে রাখার কাজ। তাই পায়ে শেকল পরেও কি অনায়াস এবং কি অস্বাভাবিক রকম শান্তভাবে চেয়ে বিশাল বপু, ঘাস পাতা চেবাতে থাকে। জানতেও পারেনা, যে, তার একটু এদিক থেকে ওদিক মোচড়েই ছাড়খাড় হ'তে পারে সবটুকু। আর তার তুলনায় এই শেকল তো তুচ্ছাতিতুচ্ছ। যাইহোক, হাসব না কাঁদব, সে'সব ভাবতে ভাবতেই জেনির পিঠে চেপে আমরা জঙ্গল দেখতে বের হ'লাম। জেনির বড় দাঁত ছিলনা। মেয়ে হাতি কিনা! আমাদের দুজনেরই গুছিয়ে হাতির পিঠে চেপে এই প্রথম জঙ্গল সাফারি। একরাশ বুক ঢিপ ঢিপ নিয়ে গভীর থেকে গভীরতর সবুজ পাতা আর বাদামী ডালপালার ভেতর ঢুকছিলাম আমরা। মাঝে মাঝেই জেনির খিদে পাচ্ছিল আর সে থেমে থেমে এ গাছের পাতা, ও' গাছের সরু মোটা ডাল, এসব সুস্বাদু খাবারের রস আস্বাদনে ডুবে যাচ্ছিল। কী করা যাবে, এত বড় চেহারাটা ক্যারি করার তো একটা ঝক্কি আছে নাকি! মাহুত ভাই একই কন্ঠে এক সুরে জেনিকে চরৈবেতির তাগাদা দিয়ে চলেছিলেন, "মাইল জেনি মাইল", "মাইইইইলেররেএএ" অর্থাৎ চল, চল, জেনি থেমোনা কিছুতেই; (অনেকটা সেই "ফাইট কোণি, ফাইট" - এর মত, যদিও দু'ক্ষেত্রের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ আলাদা), সাথে লোহার সুক্ষ্ম সরু এক দন্ডের খোঁচাও উপরি হিসেবে রয়েছে। এসব দেখে ঠিক ঠাহর ক'রে উঠতে পারছিলামনা, যে, এখানে বেশী অসহায় কে? এই ঘর্মাক্ত মাহুত ভাই, নাকি আমাদের জেনি! তো এইসব ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবনা নিয়েই দেখলাম, কিছু পরে একটা বড় এবং উঁচু ঢিপি মত অংশ থেকে সন্তর্পণে লাফিয়ে নামলেন তিনি। সামনেই মূর্তিনদী। এই অবধি এসে চারপাশে দেখছি নীলকন্ঠ হয়ে বেড়াচ্ছে ময়ূরের দল। একটু একটু কেকা বাজছে মাঝে মাঝে। সাথে খুব ধীর লয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতের তিরিতিরি। জেনির জল খাওয়া হ'লে আবার আমরা একই পথে ঘুরে সবুজের গন্ধ নিতে নিতে ধূপঝোরার আঙিনায় এসে পৌঁছলাম। সন্ধ্যে নামতে তখনও কিছু সময় বাকী। পাশের চা বাগান পেরিয়ে তাই নিজেরা পায়ে হেঁটে ঠিক সামনেই মূর্তি নদীর আরও একটি অংশের দৃশ্যপট চোখে মেখে নেব বলে বেরিয়ে পড়লাম। বাংলোর এক পুরোনো কর্মী খুব স্বতস্ফূর্ত সাথ দিলেন আমাদের। আমরা ওঁর পিছু পিছু যাচ্ছিলাম। নদীর একেবারে পাশটিতে একটা বেশ যু্ৎসই বড় পাথরের টুকরো দেখে আমরা দু'জন গুছিয়ে বসলাম তার ওপর। সবে একটু থিতু হয়েছি কি হইনি, জলের সুর শুনতে শুরু করেছি কি করিনি, হঠাৎ অনেক দূর থেকে দেখছি তীব্র ভাবে আমাদের ওই জায়গা থেকে ফিরে আসতে বলছেন আমাদের এই বৈকালিক ভ্রমণের ক্ষণিক - গাইড, সেই বাংলোর কর্মচারী ভদ্রমহিলা। খুব অবাক হয়ে দেখছি, বুঝতেই পারিনি, কখন যেন বড় রকমের দূরত্বে, ওঁর থেকে আলাদা হয়ে পড়েছি আমরা। অনেকটা ভয় আর দ্বন্দ্ব বুকে আমরা দু'জন ছুটে ছুটে কোনওরকমে এলাম ওঁর জায়গায়। দূর থেকে দেখছি একটু উনিশ - বিশের ব্যবধানে ঠিক কী হ'তে পারত.... আমরা দু - তিন মিনিট আগেই যেখানে গুছিয়ে বসেছিলাম, ঠিক সেইখানে, উল্টোদিকের ঘনসবুজের আঁধার থেকে বেরিয়ে, ধীর পায়ে অদৃশ্য ছন্দে, গর্বিত - ঋজু শৃঙ্গ নিয়ে বিকেলের জল পিপাসা মেটাতে এসে পৌঁছলেন বৃহদাকার গন্ডার রাজ। যাইহোক, গন্ডারের সাথে সামনাসামনি মোলাকাত হ'লে কী হ'ত বা হ'তে পারত, সে'সব ভাবার কোনওরকম প্রচেষ্টা না করে অবশেষে বাংলোয় ফিরলাম। সন্ধ্যার অন্ধকারে গাছবাড়ীর বাইরে সিঁড়িতে বসে রাত - জঙ্গলের নিশ্চুপ শব্দ শোনা, সাথে ধীর লয়ে সান্ধ্য চা - পকৌড়া সেবন, একরাশ ভালোলাগায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল আমাদের। দূর থেকে ভেসে আসা নাম না জানা কোনও প্রাণীর ডাক, সাথে প্রথম বসন্তের শিরশিরে শুকনো ঠান্ডা বাতাস মিলে মিশে এক হয়ে স্বপ্নের মত পৌঁছে দিল আমাদের বিয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে। এই ১২ ই ফেব্রুয়ারীর দিন সকালে ফার্স্ট অ্যানিভার্সারির ভিডিও অনুষঙ্গে ব্রেকফাস্টের পর আমরা বেরিয়ে পড়লাম বিন্দুর পথে। মূর্তি নদীকে পাশে রেখে, চারপাশের চা বাগানকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলতে লাগল আমাদের রথ। শিশু সারথিকে ঠিকমত রাস্তা চিনিয়ে দিতে আজ তার এক সহকারী কৃষ্ণসখা হাজির। চালসা মোড় থেকে ডানদিক বরাবর সোজা চলেছি আমরা গভীর চাপড়ামারি অরণ্যের সবুজ বুক চিরে। রাস্তা জুড়ে নানান চড়াই - উতরাই। জঙ্গলের এই গভীর বাণী সাথে নিয়েই স্থায়ী হ'তে লাগল উতরাই পথ। পাহাড়ী ঢাল বেয়ে, সূক্ষ্ম রাস্তা ধরে, এঁকেবেঁকে ক্রমশঃ ওপর দিকে উঠছিলাম আমরা। পাশে যথারীতি অমায়িক ও নিগূঢ় সঙ্গী ছিল, চা বনভূমির সবুজ গালিচা সাথে ছোটো ছোটো ঝরণা। তবে আরও সবুজের জন্য মনকেমন রয়েই যাচ্ছিল, অনুভবে ঘুরে ফিরে আসছিল, সেই মনুষ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা, "এখনই এমন, না জানি বর্ষায় এর কী রূপ হ'বে!" অর্থাৎ "যাহা নাই, তাহা কেন নাই, যাহা থাকে তাহা দেখিতে না পাই"। তো যাইহোক, এ'ভাবে প্রায় এক ঘন্টা চলার পর আমরা পৌঁছলাম, একটি ছোট্ট মিষ্টি পাহাড়ী গ্রামে, নাম ঝালং। পাশেই আপন খেয়ালে নিরন্তর বইছে, জলঢাকার আনন্দধারা। একটু কিছু সময় সেখানে কাটিয়ে, জলঢাকা নদীর অমোঘ গন্ধ নিতে নিতে, নদীর সাথে আমাদের নিভৃত চারণের কিছু মুহূর্তকে মোবাইল ক্যামেরায় সযত্নে বন্দী করলাম (যদিও ছবি তুলতে আমরা দু'জনেই বেশ অপটু এবং ভুলো)। লোকালয়ের একটি রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ সেরে, ছোটবেলার ভূগোল বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা জলঢাকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে পাশে রেখে এবং খানিকটা তার নস্ট্যালজিক হাতছানিকে উপেক্ষা ক'রেই, আমরা রওনা হ'লাম, পাহাড় - জঙ্গল - নদী - পরিযায়ী ঘেরা বিন্দুর মূল অংশ বা স্পট, 'ইন্দো - ভূটান' বর্ডারের দিকে। সুখ কাকে বলে ঠিক জানিনা, বুঝতে চাইওনি হয়তো কখনও সে'ভাবে। কিন্তু এক গভীর আনন্দের সন্ধান সেদিন মিলেছিল আমাদের, নদী কথায়। ভুটান - ভারত সংযোগে দীর্ঘক্ষণ বসে ভেতর ঘরের নিস্তব্ধ যাপনে সময়কে পেরিয়ে যেতে দিলাম নিজের মত। সঙ্গ দিল খরস্রোতা জলঢাকার উন্মত্ত প্রবাহ শব্দ। আত্মশুদ্ধি আর মনঃসংযোগের ভরপুর বাতাবরণ তৈরি করে দেয় সে ক্ষণে ক্ষণে। কি অদ্ভুত! এক চঞ্চল স্রোত ও তার সুর, কীভাবে, কোন মন্ত্রে যে আর এক অস্থিরকে অর্থাৎ এই দেহ - মন পটভূমিকে নিমেষের শান্তচ্ছায়ায় ঢেকে ফেলতে পারে, তার প্রত্যক্ষ বাস্তব অনুভব ছাড়া, এ সত্যকে বিশ্বাস করা বড় কঠিন। উঠে আসতে ইচ্ছে করছিলনা একেবারেই। তবে আস্তে আস্তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছিল, তাই সারথি ও তাঁর সঙ্গীর তাগাদায় আমরা বেরিয়ে পড়লাম আবার, আমাদের পরবর্তী গন্তব্য, সুন্তালিখোলার দিকে। উতরাই যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে মেঘ, কুয়াশা চাদর আর সাথে শীতের কামড়। সামসিং পেরিয়ে, নানান এবড়ো খেবড়ো রাস্তা বেয়ে, গভীর পাহাড়ী ঢাল ও ঘন - নিশ্চুপ সবুজে মোড়ানো সুন্তালির ঝুলন্ত ব্রিজ অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে, শীতের প্রকোপ আরও বাড়ল। পাশেই নিস্তব্ধ প্রকৃতির কোলে বসে আছে যে রিসর্টটি, সেখান থেকে এদিক ওদিক নানান অংশে যাওয়া যায়, জানতে পারলাম। সামনেই আছে নেওড়া নদী, নেওড়া ভ্যালি। তবে আমাদের হাতে সময় সীমিত। ফিরতে হ'বে রাতের ধূপঝোরায়। সন্ধ্যে একটু বেশী ঘনিয়ে উঠলে অনেকের দেখা মিলে যেতে পারে ঠিকই, তবে সেই রাতের গভীরে হঠাৎ অজানার সাক্ষাৎ খুব সুখকর নাও হ'তে পারে আমাদের জন্য। তাই ফিরতি পথে লালিগুরাসে একটু ঘোরাঘুরি ক'রে, চা বাগানের কোলে খানিক সময় কাটিয়ে, আলো আঁধারি মুহূর্ত থাকতে থাকতেই আমরা আমাদের গাছবাড়ীতে ফেরার পথ ধরলাম। আবার সেই রোমাঞ্চের রাত, গা ছমছম আনন্দ, কাঠের বারান্দার সিঁড়িতে বসে একটু একটু চা, চিকেন - পকৌড়া, অনেকটা গল্প আর নিস্তব্ধতা উদযাপন। শুধু বার বার কানে ভেসে আসছে, সেই পাহাড়ী শিশুর ডাক... "একটা চকোলেট নাও না দিদি, খুব ভালো, এইতো, এ'টা তুমি নাও আর এটা দাদা... আর সাথে এই লাল টা, এই সবুজটাও........." ফেরাতে পারিনা আমরা, শুধু সম্ভ্রমের হীনম্মন্যতায় ন্যুব্জ হয়ে পড়ি বার বার; ভাবি, কত ছোটো থেকে এরা শিখে নিয়েছে জীবনের মানে, বেঁচে থাকার উজ্জ্বল লড়াই আর মাটি কামড়ে পড়ে থাকা; আমাদের তথাকথিত সভ্য শহুরে আস্ফালনের সহজ হয়ে ওঠাটা এই জীবনে আদৌ ঘটবে কি? এ অহংয়ের বোঝা বুক থেকে নামাতে পারব কবে? "আমি যত ভার জমিয়ে তুলেছি" সে তো আমাকেই মারবে তিলে তিলে.......... রাত বাড়ছে। ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁল। ডিনার সার্ভ করছে, যেতে হ'বে। গাছবাড়ীতে "শেষ রজনী"। কাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব নতুন নামের বনে। এগিয়ে আসছে জলদাপাড়া ..... বক্সা .........
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴