সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

এক ফালি আলো/ভাস্বতী শ‍্যাম চৌধুরী

এক ফালি আলো
ভাস্বতী  শ‍্যাম চৌধুরী

মানুষের জীবনটা একটা নদীর মতন , এক জায়গায় উৎপত্তি হয়ে স্রোতের টানে নানা বাধা বিঘ্ন পার হয়ে, সুখ, দুঃখ ,আনন্দ, বিষাদের মধ্য দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে  বিশালতায় বিলীন হয়ে যায়। জীবনের এই উত্থান পতনে, মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পরে  কিন্তু তার মধ্যেও আনন্দে দিন যাপন করে।
 
একজন নারী তার পিতৃ গৃহে, শৈশব ও কৈশোর কাটিয়ে  যৌবনে পতি গৃহে যাত্রা করে। ওখানে গিয়ে বাস্তব পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় হয় ।কিন্তু পিতৃগৃহে  কাটানো  শৈশব, কৈশোর  ও বাবা   মায়ের স্নেহ, ভালোবাসাই তার জীবনের পাথেও হয়ে শেষ দিন পর্যন্ত   বহন করে চলে । অনেক দুঃখের মধ্যেও ভাই -বোন কিংবা ছেলেবেলার খেলার সাথী সামনে এলে  সমস্ত দুঃখ ভুলে যায় ।

আমার জীবনের দিকে যখন  তাকাই তখন দেখি পাহাড়  আমাকে হাতছানি দিচ্ছে , আমার জন্ম ও  বেড়ে ওঠা  দার্জিলিঙে। শৈশব ,কৈশোর এরং যৌবনেরও কিছুটা সময়  ওখানে কেটেছে। পাহাড় এবং পাহাড়ের মানুষজন ঝর্ণার মতন  স্বচ্ছ এবং উচ্ছল, কোন জটিলতা নেই, নেই কোন আপন পর ভেদ,সবাই সবার সুখ, দুঃখ ভাগ করে নেয়। তাই আনন্দে দিন কাটে।

স্কুল কলেজের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে এক সময় আমাকে পাহাড় ছেড়ে সমতলে চলে আসতে হল। উচ্চ শিক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলাম। প্রকৃতি এখানে নিজের খেয়ালে সেজে উঠেছে। রাজা রামমোহনপুরের উত্তরে হিমালয়, শালবন, কদমতলা, কাশফুল, মাগুরমারির  শীর্ণ স্রোত, বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ, কোনও কিছুই এখানে যোজনা করা হয়নি। এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে  এসে মন ভরে গেল ।এখানকার নদী, পাহাড়, জঙ্গল, চা বাগান দেখলে মুগ্ধ হতে হয়,   অধ্যাপক  ও সহজ সরল সহপাঠীদের  সঙ্গে দুটো বছর আনন্দে কেটে গেল।

তারপর বিবাহ সূত্রে কলকাতায় এলাম।   এই যান্ত্রিক শহরটাকে  আপন করতে পারিনি। বিবাহিত জীবনে এসে মেয়েদের বাস্তব পৃথিবীর সম্মুখীন হতে হয়, আমারও তাই হয়েছিল। সংসারের চাপে নিজেকে মেলে ধরার অবকাশ হয়নি। চল্লিশ  বছরের বিবাহিত জীবন সুখে, দুঃখে আনন্দে  কেটে যাচ্ছিল। এই ভাবেই  আমাদের  বৈচিত্র‍্যময় জীবন কখন যেন  শেষ হয়ে গেল! একদিন নিজের মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম চিরতরে। ওকে হারিয়ে জীবনের মানে খুজে পাচ্ছিলামনা', ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, তারা নিজেদের জগতে ব্যস্ত। তাই এই বয়সে আমি  একা হয়ে গেলাম প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত। 

তবে একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। আমি আমার জগতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম আমার সৃজনশীলতা, বন্ধুবান্ধব, সামাজিক কিছু কাজকর্ম, বই পড়া.গান শোনার মধ্যে দিয়ে সমস্ত দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে ছোটবেলার  দার্জিলিং ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতি,  আমাকে আনন্দ দেয় ।আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ট্রেন যায,  তা দেখে মাঝে মাঝে ছেলেবেলার টয় ট্রেনের কথা মনে পড়ে । স্কুল ফেরত  বন্ধুদের সাথে বিনা টিকিটে টয় ট্রেনে  করে ঘুম স্টেশনে যেতাম ।গার্ড কাকু আমাদের কিছু বলতেন না। আবার যখন বসন্ত আসে গাছের পাতা ঝরে যায়, হাওয়া বয়, ফুল ফোটে কোকিল ডাকে, এখন বহুতলের ওপরে বসে দেখি কিন্তু ছুঁতে পারি না , মাটির সেই গন্ধও পাই না। 

দার্জিলিঙের বসন্তের কথা মনে পড়ে যায়।  তীব্র শীতে সমতলে নেমে আসতাম আর বসন্ত  এলে বাড়ি ফেরার  পালা।অনেক দিন পর পাহাড়  দেখে, নিজের মানুষদের দেখে মন আনন্দে ভরে যেত।বসন্তে হাওয়া বইতো আর চারিদিকে  রোডোডেন্ড্রন, ক্যামেলিয়া , চেরি ও গোলাপের  সমারোহ। ওদিকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসব হত, লাল হলুদ কৃষ্ণচূড়ায় ভরে থাকা প্রাঙ্গণ শুকনো পাতার  মর্মর ধ্বনি উদাস করে দিত মনটাকে। এরই মধ‍্যে বসন্ত উৎসবে শালবনে সুচিত্রা  মিত্র  গেয়ে ওঠেন, "রোদনে ভরা এই বসন্ত।" যদিও আমাদের  বসন্ত রোদনে ভরা ছিল না।   এই টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলোই  অনেক দুঃখের মধ‍্যেও আনন্দ দেয়,খারাপ লাগার মধ্যে,  এক ফালি আলোর মতো ভালো লাগা এনে দেয়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri