সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-May,2023 - Sunday ✍️ By- চিত্রা পাল 461

এই লভিনু সঙ্গ তব/চিত্রা পাল

এই লভিনু সঙ্গ তব 
চিত্রা পাল 
-----------------------

এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর। যদিও এটা তাঁরই রচিত গানের কথা তবু তাঁর কথা দিয়েই শুরু করি। এইভাবে ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাই। প্রতিদিন তাঁরই গান আমাদের যখন সঙ্গ দেয় তখন সেই সুন্দরকেই পাই। আলাদা করে নয় প্রতিদিনের জীবনযাপনের মাঝে কখনও কোন সময়ে যে  আমিকে পেতে চাই, সে আমির দিকে যেতে চাওয়ার গহন অনুভূতি স্পর্শ করে তাঁর গান। তিনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ছিলেন কে তুমি/ মেলেনি উত্তর। সে উত্তর তিনি নিজেই নিজের গানে প্রকাশ করেছেন, সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর। সে সুর বাজে বলেই অসীম ধরা দেয় প্রকৃতির রূপবৈচিত্রে অপরূপ হয়ে। সে রূপবৈচিত্র্য সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অনুভবে ধরা দেয়। যোগাযোগ উপন্যাসে বিপ্রদাস কুমুকে বলেছিলোঃ ‘সংসারে ক্ষুদ্রকালটাই সত্য হয়ে দেখা দেয় কুমু, চিরকালটা থাকে আড়ালে; গানে চিরকালটাই আসে সামনে, ক্ষুদ্র কালটা তুচ্ছ হয়ে যায়, তাতেই মন মুক্তি পায়’। 
এভাবে যোগাযোগ উপন্যাসে গান এসেছে বারে বারে যেন বর্তমানের সমস্যা উত্তরণের উপায় হিসেবে। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বা নায়ক নায়িকা যাই বলা যাক  মধুসূদন-কুমুদিনীর পরষ্পরের সম্পর্ক। একেবারে বিপরীত প্রান্তে বসবাসকারী দুজনের মানসিক গঠন ধ্যানধারণা একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। মধুসূদন ঘোষাল যেন একেবারে কঠোর বাস্তবের জীবন্ত কলেবর। লেখক নিজেই তার বর্ণনা করে বলছেন, মধুসূদন দেখতে কুশ্রী নয় কিন্তু বড় কঠিন। যেন ভাগ্যদেবতার কামান থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে একাগ্রভাবে ছুটে চলেছে একটা একগুঁয়ে গোলা। দেখলেই বোঝা যায় বাজে বিষয় বাজে মানুষের প্রতি মন দেবার ওর একটুও অবকাশ নেই’।এদিকে কুমুদিনী যেন ভোরের শুকতারার মতো, রাত্রের জগত্‌ থেকেস্বতন্ত্র, প্রভাতের জগতের ওপারে। 
কুমুর অভিভাবক তার দাদা বিপ্রদাস অভিজাত সুকুমার ব্যক্তিত্বশালী। যে নিজে ঘোড়ায় চড়া বন্দুক চালনায় নিপুন হলেও সংগীতেও পারদর্শী। কুমু আর তার দাদার মাঝে সমঝোতার প্রতীক এস্রাজ বাদন। এইনিয়ে লেখক বর্ণনা করছেন, বিপ্রদাস চোখ বুজে শোনে আর মাঝে মাঝে ফরমাশ করে- সিন্ধু বেহাগ ভৈরবী- যে সব সুরে বিচ্ছেদ বেদনার কান্না বাজে। সেই সুরের মধ্যে ভাই বোন দুজনেরই ব্যথা এক হয়ে মিশে যায়। লেখক এভাবেই সুন্দরের অনুসংগ মাঝে মাঝেই ব্যবহার করেছেন  দুখের পারাবারের তরীর মতো। কোন দূর অতীতে ঘোষাল পরিবারের সঙ্গে চাটুজ্জ্যে পরিবারের পুজো নিয়ে বিবাদ লেগেছিলো সে বিবাদের রেশ জলপ্রবাহের মত তৃতীয় পুরুষেও বয়ে নিয়ে আসে বিরোধ। কেননা লেখক বলছেন যারা মারে তারা ভোলে, যারা মার খায় তারা ভোলে না। সেই অভিসম্পাত যেন কালপ্রবাহে ভেসে আসে মধুসূদন ঘোষাল আর কুমুদিনী চাটুজ্জ্যের সংসার জীবনে। একদিকে মধুসূদনের কঠোর বাস্তব প্রকৃতি অন্যদিকে কুমুকে ঘিরে থাকা স্বাভাবিক স্বত্ত্ব  সেই সহজ গৌরব, এই বৈপরীত্যের সেতু বন্ধনের বড় উপায় সঙ্গীতবা বলা যায় গান বা গানের সুর। যখনই কোন অমঙ্গল চলার পথে ছায়া ফ্যালে বা জীবন যাপনে ব্যাথা জাগায় তখন সুন্দরের সঙ্গলিপ্সা তাদের সেই কষ্টের বোধ থেকে সরিরে নিয়ে আসে।বিয়ের কথা   ঠিক হয়ে গ্যাছে,কুমু তখন এসরাজে বাজায় ভূপালি। বিপ্রদাস ভাই সুবোধের বিলেত থেকে টাকার দাবী, এদিকে বোনের বিয়ে, সব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সেই সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অসুস্থঅবস্থাতেও এসরাজ বাজাতে চায়, ডাক্তারের বারণে তার চাওয়া প্রতিহত হত।     

বিপ্রদাস বলে, সুরে বাঁধা এসরাজের কোন মানেই থাকে না যদি বাজাবার হাতটা হয় বেসুরো। কুমু,সে ছিলো অভিসারিণী তার মানস বৃন্দাবনে ভোরে উঠে সে গান গেয়েছে রামকেলী রাগিণীতে। বর্ষার রাতের উতরোল ধারাপতনে সে গেয়েছে কানাড়ার সুর। 
শ্বশুর বাড়িতে বৈপরীত্যের মাঝে মনকে ভুলিয়ে দেবার একমাত্র উপায় হচ্ছে সংগীত।কিন্তু গানের ধারায় আকাশ ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো, অভিমানের গানে। যে গানে ও বলতে পারে আমি তো এসেছি,তবে তুমি কেন লুকোলে? এসময় খুব গলা ছেড়ে গান গেয়ে ওর বলতে ইচ্ছে করে, মনে হয় তাহলেই যেন সুরে এর উত্তর পাবে। 
বিপ্রদাস যখন জীবন যাপনে সমস্যায় পড়েছে তখনই তার থেকে বেরোবার পথ একটাই ভেবেছে সেটা গান। কুমুকে এই কথা বলছে, ‘আমার এসরাজটা নিয়ে আয় একটু বাজা’।কুমু যখন বলছে দাদা আমার ইচ্ছে করছে একটা কিছু করি। আমি চাই খুব একটা শক্ত কাজ। বাজানোটা বুঝি একটা কিছু নয়। বিপ্রদাস বলে, দলিলে নাম সই করার চেয়ে এসরাজ বাজানো অনেক বেশী শক্ত কাজ। আন্‌ যন্ত্রটা। কুমু যখন মৃত্যুর কল্পনা মনের মধ্যে আঁকড়ে ধরলো তখন জীবনের ভার দুর্বহ নাবার জন্যে গাইলে গুনগুন করে গান।   বিপ্রদাস সব কথাতেই সঙ্গীতের তুলনা টানে। যখন রুগ্ন বিপ্রদাসকে কুমু বলছে এখন কালুদার সঙ্গে তর্ক বিতর্ক করলে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তখন বিপ্রদাস  বলছে, শ্রুত সঙ্গীত মধুর অশ্রুত সংগীত মধুরতর তেমনি শ্রুত সংবাদ অশ্রুত সংবাদ। কুমু তার দাদাকে এই কথা  বলে রাখছে, আমি পনের মিনিট পরেই আসবো, আর তখন তোমাদের কথা শেষ নাহলে এস্রাজ বাজাবো –ভীমপলশ্রী।  
    সেদিন সকালে কুমু অনেকক্ষণ গানবাজনা করেছে। ওর মনে হয়েছে, সকালবেলাকার সুরে নিজের ব্যক্তিগত বেদনা বিশ্বের জিনিস হয়ে অসীম রূপে দেখা দেয়। ব্যথার নদীগুলো ব্যথার  সমুদ্রে গিয়ে বৃহত্‌ বিরাম লাভ করে। তার বন্ধন মুক্তি ঘটে।যেদিন কুমু চলে আসবে তার শ্বশুরবাড়িতে সেদিন বিপ্রদাস কুমুকে ডেকে পাঠালে। কুমু এসে দ্যাখে বিপ্রদাস বিছানায় বসে, একটি এসরাজ আছে কোলের উপর, আর একটি পাশে শোয়ানো। কুমুকে বললে, নে যন্ত্রটা আমরা দুজনে মিলে বাজাই। উপন্যাসটি শেষ হয় কুমুর সন্তান সম্ভাবনা নিয়ে। তৃতীয় পুরুষের  আবির্ভাব সুর অসুরের, সুন্দর অসুন্দরের মেল বন্ধন ঘটাবে কিনা জানিনা। সবই ভবিষ্যতের মধ্যে। 
এই উপন্যাস যদিও আগামীর কোনো স্বপ্ন দেখার সূত্র বা মধুর স্বপ্ন দেখার রক্তিম আভা। জানি না তাও কিনা। তবু যখনই সংগীত ছুঁয়েছে কোন প্রান্ত তখনই যেন ইশারা দেয় সেই সুন্দরের আসঙ্গ। এটাই বড় প্রাপ্তি।                                

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri