উৎসব ও অনুভব /পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসব ও অনুভব
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাপ ও পূণ্যের দোলাচলে আমাদের জীবন। কখনো কখনো শোনা যায় আমাদের পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাহলে পূন্য অর্জন করবার রাস্তা কোথায়? এত উৎসব, এত আলো এত আনন্দ, তাতে কি পূন্যের ভান্ডার পরিপূর্ণ হবে না। তাহলে একবার দেখা যাক শাস্ত্র কি বলছে। বাপ ঠাকুরদার আমলে একটি প্রচলিত শ্লোক শুনতাম, যে শ্লোকটি কালের যাঁতাকলে হারিয়ে যেতে বসেছে :
"বুড়োর চৌদ্দ, বুড়ির আট
এই নিয়ে কালকাট
তাও যদি না পারিস
ভগার খালে ডুবে মরিস"
বুড়ো বলতে দেবাদিদেব মহাদেব এর কথা বলা হচ্ছে। তাঁর চৌদ্দ অর্থাৎ শিব চতুর্দশীর কথা বলা হচ্ছে। শিবচতুর্দশী ব্রত খুবই কঠিন ব্রত প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা নির্জলা উপবাসে থাকতে হবে। সন্ধ্যায় নীল এর ঘরে বাতি জ্বেলে। শিব লিঙ্গে কাঁচা দুধ ঘী মধু ডাবের জল দিয়ে স্নান করিয়ে পাঁচ ফল ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে ফলমূল খাওয়া যায়। রাতে শিব এর ব্রতকথা পাঠ করে, পরদিন সকালে নিজের হাতে রান্না করে ব্রাহ্মণ্ কে ভোজন দক্ষিণা সহ ভোজন করিয়ে ব্রত সমাপ্ত করা।
বিজ্ঞানে অবশ্য উপবাসের কথা বলছে। মাঝে মাঝে উপবাস করা ভালো। কিছু কিছু অসুখ থেকে বাঁচতে তারাই উপবাস করতে পারবেন যাদের বয়স কম এবং রক্তে শর্করা জনিত কোনো অসুখ নেই। কখনো কখনো পুরহিত মশাই পুজোর মন্ত্রোচ্চারণের ফাঁকে ধুমপান করে থাকেন এই বিষয়টা নিয়ে মনে নানান প্রশ্নের উদয় হয়ে থাকে।
যদি শিব চতুর্দশী ব্রত না করা সম্ভব হয়, তবে বুড়ির আট অর্থাৎ দূর্গা অষ্টমী ব্রতেও পূন্যার্জন সম্ভব। কিন্তু নিষ্ঠাভরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেবার থেকে সাজ গোজ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে, ভুল মন্ত্রোচ্চারণে সবটাই বিফলে যায়। মন্ত্রো পাঠ ডিজে বক্সের চটুল হিন্দি গানে ঢাকা পড়ে যায়। এক জন বিধবাও বলছেন " পুত্রাং দেহি, ধনং দেহি" একজন কুমারীও বলছেন " পুত্রাং দেহি ধনং দেহি " পুরহিত নিজেই জানেন না কথাটা "পুত্রান দেহি " অর্থাৎ হে মা দূর্গা পু নামক নরক থেকে আমাকে পরিত্রাণ করো। পরিত্রাণের এর প্রার্থনা মা দূর্গার কানে পৌঁছানো ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হয়ে যায়।
তাহলে বুড়োর চৌদ্দ বুড়ীর আট যদি সম্ভব না হয়, তাহলে শাস্ত্রে নিদান দিয়েছে " তাও যদি না পারিস ভগার খালে ডুবে মরিস " অর্থাৎ ভগীরথ যে খাল কেটে গঙ্গা এনেছিলেন, সেই গঙ্গায় স্নান করলেও শিবচতুর্দশী বা দূর্গা অষ্টমীর সম পরিমাণ পুণ্যার্জন সম্ভব।
আজকাল ঢাক ঢোল পিটিয়ে "নমামী গঙ্গে" উৎযাপিত হচ্ছে। দিকে দিকে গঙ্গা পূজন অনুষ্ঠিত হলেও গঙ্গা আজ আর সেই পবিত্র জায়গায় নেই। গঙ্গাদূষন বা আদি গঙ্গার ভয়াল ভয়ংকর রূপের বিষয় আলোচনা করলাম না। এই বিষয়টা কোন একজন নদী বিশেষজ্ঞের আলোচনার ওপর ছেড়ে দিলাম।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴