সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 520

ইতিহাস, পুরাণ, উপকথা এবং বাণিজ্যের শহর পেডং/গৌতম চক্রবর্তী

ইতিহাস, পুরাণ, উপকথা এবং বাণিজ্যের শহর পেডং
গৌতম চক্রবর্তী
---------------------------------------------------------------

লেপচা ভাষায় ‘পে’ কথার অর্থ সুগন্ধি গাছ এবং ‘ডং’ শব্দের অর্থ বিশ্রামস্থল। সব মিলিয়ে বাণিজ্যপথে সুগন্ধি গাছের নিচে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রামস্থল হলো আজকের পেডং। পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের বর্ডারের কাছে ৫২০০ ফুট উচ্চতায় পেডং এক সুন্দর জনপদ যা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সুদূর অতীতে ভারত থেকে তিব্বত পর্যন্ত বাণিজ্যপথ বা সিল্করুট ছিল পেডং এর ওপর দিয়ে। অতীতের বাণিজ্যপথ সিল্করুটের ওপর ছোট্ট জনপদ পেডংয়ের অবস্থান কালিম্পং থেকে লাভার পথে ১৮ কিমি দূরে। নাম শুনেই বোঝা যায় পাহাড়ের কোলে অম্লান সবুজের অপার্থিব এক গালচে বিছিয়ে দিয়েছেন ঈশ্বর। উত্তরে রক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, পাণ্ডিম। সেই চালচিত্রের মধ্যিখানে ওক, পাইন, বার্চ আর দেবদারুতে আকীর্ণ শান্ত স্নিগ্ধ পাহাড়ি গ্রাম পেডংয়ের সৌন্দর্যের তুলনা নেই। যে কোনও পাহাড়ি জায়গাই নিজের মতো করে সুন্দর। কিন্তু প্রকৃতির ক্যানভাসে যখন ইতিহাসের রং লেগে যায় তখন সেই বিশেষ জায়গাটির আকর্ষণ অন্য মাত্রা পায়। তেরোশো শতকে এই অঞ্চল ছিল সিকিমের রাজার অধীনে। তারপর ভুটানের রাজা এর দখল নেয়। ভুটানের রাজাকে হারিয়ে এই অঞ্চল ব্রিটিশের অধিকারে আসে উনবিংশ শতকে। ভুটানের রাজা এখান থেকেই ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গে টক্কর দিলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা ড্যামসাংয়ের পতন ঘটায়। ভুটান রাজা এই এলাকা সহ ডুয়ার্স অঞ্চল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ঔপনিবেশিকদের হাতে। ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারত তিব্বত বাণিজ্য পথের অন্যতম কেন্দ্র ছিল বলে তার সমৃদ্ধি ঘটে। নানা দেশের ধর্মপ্রচারকেরা চার্চ এবং স্কুল স্থাপন করে পেডঙে। পেডং বাজার থেকে একটু দূরে ২০ মাইল এলাকায় রিশি রোডের ঠিক পাশেই পাশাপাশি মোনালিসা হোমস্টে আর নীহারিকা হোমস্টে। জায়গাটা নিরিবিলি। পাহাড়ের ঢালে মোনালিসা হোমস্টেতে আমাদের রাত্রিবাসের আয়োজন। 

ডাইনিং রুমে জমিয়ে আড্ডা চলছিল। সামনেই বেশ বড় একটা মাঠ আর তারপরেই উঁচু সবুজ পাহাড় যার গায়ে মেঘ কুয়াশার চাদর। এই এলাকায় দু একটা হোটেল আর কিছু হোম স্টে রয়েছে থাকার জন্য। মজা হলো এখানে থাকার জন্য ঘরে হোটেলের প্রায় সব সুবিধাই আছে। তবে খাবার ব্যবস্থা মালিকের পরিবারের সঙ্গেই। হোটেলের মতো আলাদা রিসেপশন বা রুম সার্ভিস স্টাফ নেই। পরিবারের লোকেরাই অতিথিদের দেখভাল করে। সব মিলিয়ে বেশ একটা ঘরোয়া ব্যাপার। ওরাই রান্না করে খাবার পরিবেশন করে। রুটি, ভাত আমিষ, নিরামিষ সব ব্যবস্থাই আছে। ইচ্ছা হলে অতিথিও রান্নাঘরে গিয়ে হাত লাগাতে বা কিছু রান্না  করতে পারে। ফেব্রুয়ারির প্রথমেও পেডঙে বেশ ঠান্ডা। বড় একটা লোহার পাত্রে কাঠের আগুন জ্বলছে। মালিক দোকান সামলাতে সামলাতে মাঝেমধ্যে এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করে যাচ্ছে। এখানেই এর আগেরবার এসে ছিলাম সিল্করুট রিট্রিটে। হোম স্টেতে পৌঁছে স্নান সেরে পেটে কিছু দানাপানি দিয়ে রওনা দিলাম ব্রিটিশদের হাতে বিধ্বস্ত ড্যামসাং দূর্গের দিকে। সঙ্গে প্রচুর কমলালেবু, পর্যাপ্ত জল আর গ্লুকোজ, লেবু লজেন্স নিয়েছি গাইডের নির্দেশমত। ড্যামসাং ফোর্ট যাবার পথে একটা দোকানের সামনে চা পান করার জন্য থামলাম। এখান থেকে পাকা রাস্তা ছেড়ে বাঁদিকের পাথরে রাস্তায় বাঁক নিতে হলো। নামেই রাস্তা। বোল্ডারের ওপর দিয়ে যাত্রা বলা যেতে পারে। পাইন বন পার হয়ে রাস্তা গেছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। কোনমতে ঠোক্কর খেতে খেতে এগিয়ে চললাম। এই রাস্তার শেষেই ড্যামসাং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। বিপদসঙ্কুল পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে শুকনো পাতার মর্মর শব্দ তুলে নির্জনতার অবগাহনে হারিয়ে এসে পৌঁছলাম ড্যামসাং ফোর্টে। সাংচেন গুম্ফা থেকেও ট্রেক করে এলে এক কিমি ওপরেই ড্যামসাং দুর্গ। স্থানীয়দের কাছে দামসংগড়ি নামে পরিচিত ড্যামসাং ফোর্ট আকাশছোঁয়া গাছপালা দিয়ে ঘেরা একটি মনোরম জায়গা। এই দুর্গের সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, পুরাণ, উপকথা।

পেডং গিয়েছি একাধিকবার। জীবন থেকে চলে গেছে অনেকগুলো বসন্ত। পঞ্চান্নটি বসন্ত পেরিয়ে আজও যখন ট্রেকিং করে ডামসাং ফোর্টে উঠলাম তখন ফুসফুস হাপড়ের মতো ওঠানামা করলেও স্পষ্ট দেখতে পেলাম সেই বোহেমিয়ান সময়কালকে। সবচেয়ে উঁচু পয়েন্টের কাছে ড্যামসাং জঙ্গল ঘিরে রয়েছে ড্যামসাং দুর্গকে। এই দুর্গের ইতিহাস রোমাঞ্চকর। লেপচারা তৈরি করে এই দুর্গ। পরে ১৬৯০ সালে তা ভুটানের তৃতীয় রাজা তেনজিং রাবগের অধীনে যায়। রাজধানী থিম্পু থেকে অনেকটা দূরের এই দুর্গ দেখাশোনায় অসুবিধা হত বলে রাজা কয়েকজন লেপচা কেয়ারটেকার রাখেন যাদের দলপতি গেপ আচক। কিছু ভুটানি সৈন্যও ছিল। পুরনো মানুষেরা বলেন গেপ আচকের মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি ছিল। সম্ভবত ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন তিনি। ভয়ংকর উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন এই মানুষটি। ক্ষমতালোভী গেপ আচক একদিন সব ভুটানি সেনাদের মেরে ফেলে নিজেই হয়ে ওঠেন হর্তাকর্তা। নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করেন। এর পরের ইতিহাস রক্ত দিয়ে লেখা। ভুটানের রাজা তেনজিং রাবগে গেপ আচককে দমন করার জন্য সেনা পাঠান। সুকৌশলে বধও করা হয় তাঁকে। কথিত আছে, গেপ আচক হত্যায় কিছু অপকৌশলের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া গেপ আচককে হত্যা করা সম্ভবপর ছিল না। তবে সত্যিই তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে আজও সন্দেহ আছে। আসলে ইতিহাস ছাপিয়ে এভাবেই জন্ম নেয় উপকথা। আমাদের গাইড জানালো ড্যামসাং জঙ্গলে এখনও নাকি দেখা যায় আগুনমুখো ড্রাগনবেশী গেপ আচককে। সন্ধের পর সেখানে কেউ যেতে সাহস পায় না। দেখলাম ড্যামসাং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ফাঁকা। এই ঐতিহাসিক দুর্গটি এখন ধ্বংসের পথে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রাচীন এই দূর্গের দু-একটা ভগ্ন দেওয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। যারা হাঁটতে ভালবাসেন আর যারা ইতিহাস অনুসন্ধানী তারা ট্রেক করে ড্যামসাং দূর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখে আসতে পারেন।

আসলে পেডং এর যে সময়কালের কথা বলছি তখন চা পাতার আমদানি হতো চীন দেশ থেকে। অনেকেরই ধারণা ব্রিটিশরাই এদেশে চা শিল্পের পত্তন করে। কিন্তু ব্রিটিশরা এদেশে আসার অনেক আগেই ভারতের কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে চা-কে গুরুত্বের কেন্দ্রে নিয়ে আসে চিনারা। সেই সময় এই দেশে শতাংশের নিরিখে স্বল্প সংখ্যক মানুষের বিলাসিতা চা পান হলেও তাদের জীবন যাপনে চায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটাই। অর্থাৎ চায়ের চাহিদা তীব্র ছিল। শুধু তাই নয়, ক্রমশ সাধারণের মধ্যে চা পানের অভ্যাস বাড়তে শুরু করলো। চায়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথ গড়ে ওঠে পেডং অঞ্চলকে ঘিরে। প্রাচীন সিল্করুট ধরে ব্যবসায়ীরা আসতেন। কিন্তু দূরত্ব এবং দূর্গমতার কারণে একটা সময়ের পরে সেই ব্যবসায়ীদের কাছে বিষয়টা ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি  হবার মত হল। দীর্ঘপথ ধরে মালবাহী গাড়ি, পশুযান বা মানুষের পিঠে চাপিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া সেটাও কোন এক সময় বাস্তবের পক্ষে প্রতিকূল বলে মনে  হলো। আর এই জায়গা থেকেই এই দেশে চা উৎপাদনের ভাবনার উন্মেষ। সপ্তম শতকে কালিম্পংকে কেন্দ্র করে চীন, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বার্মা এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। নানাপ্রকার অসুবিধা, বাধা-বিপত্তি, দীর্ঘ এবং সময় সাপেক্ষ যাত্রাপথ ইত্যাদি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েই চীন থেকে আমদানিকৃত চা প্রথমে পৌঁছত উত্তরবঙ্গের ছোট্ট পাহাড়ি শহর কালিম্পঙে। যখন বিকল্প পথের খোঁজ শুরু হলো তখনই চীনা ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলে চা উৎপাদনের কথা ভাবতে শুরু করলো। চীনের ইয়েনান প্রদেশের জেলাগুলিতে মূলত চা উৎপন্ন হতো। চীন থেকে আমদানিকৃত চা কালিম্পং বাজার হয়ে সবথেকে বেশি পরিমাণে যেত তিব্বতের রাজধানী লাসাতে। তখনকার পরিবহন এবং পরিকাঠামোর নিরিখে চীনের ইয়েনান থেকে কালিম্পং হয়ে লাসাতে চা সরবরাহ করা ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই এক কঠিন কাজ। কারণ লাসার পথ ছিল ভীষণ দূর্গম।

এই প্রেক্ষাপটে যদি উৎপাদনের কাজটা কালিম্পঙে করা যায় এই ভাবনায় ভাবিত হয়ে চীন দেশের গবেষকেরা বেশ কিছু অনুকূল পরিস্থিতি খুঁজে বের করলেন ভাবনা এবং প্রয়োগের ভিত্তিতে। আর এইভাবেই এই দেশে তৈরি হলো চা শিল্পের প্রথম রূপরেখা। পরিকল্পনার শুরুতেই যেটা সব থেকে উল্লেখযোগ্য বলে উপলব্ধি করা হল সেটা হল চা চাষের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মাটি এবং জলবায়ুর উপযোগিতা। অঞ্চলটি তখন আংশিকভাবে ভুটানের অন্তর্গত ছিল। চা বাগানগুলো পল্লবিত হলো আলগাড়া, লাভা পেডং এবং জেলেপলাকে কেন্দ্র করে। লাসা যাওয়ার পথ হলো জেলেপলা। জমি তো উপযুক্ত ছিলই। দেখা গেল হিমালয়ের অন্তর্গত কুয়াশায় ঘেরা, ভেজা এবং ঠান্ডা আবহাওয়া চা চাষের জন্য দারুণ সহায়ক হচ্ছে। বীজ আনা হল চীন দেশ থেকে আর এই সম্পূর্ণ কর্মকাণ্ডকে ঘিরে এই ছোট্ট জনপদ জায়গা করে নিল ভারতের চা উৎপাদনের ইতিহাসের খাতায়। শুরুটা চীনারা করলেও পরবর্তীকালে ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলিও আগ্রহী হয়ে উঠল চা উৎপাদনে। ভারতের শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চায়ের উৎপাদন বিপণন এবং রপ্তানি এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিল। ১৮০০ সালে ভারত চীন এবং তিব্বতের মধ্যে তখন মৈত্রীর সুবাতাস বইছে। ফলে পরিকাঠামোগত দিক থেকে অভ্যন্তরীণ এবং অন্তর্দেশীয় সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে চা উৎপাদন এবং বিপণনের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে কোন সমস্যাই হলো না। রাস্তা তৈরি হল। যারা বাগান এবং কারখানায় কাজ করবেন তাদের থাকার জন্য জঙ্গল কেটে, পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করা হলো। বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হলো স্বাভাবিকভাবেই। একই সঙ্গে এখানে তখন এলেন খৃষ্টান মিশনারীরা। স্কটিশ মিশনারীদের উদ্যোগে গড়ে উঠল গীর্জা। গীর্জার পাদ্রীরা বুঝেছিলেন চা শিল্পকে ঘিরে যে জনবসতি তৈরি হয়েছে তার উন্নয়নের দিকটাকে প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পেডং এর ড্যামসাঙ উপত্যকাকে ঘিরে বিস্তার লাভ করল চা বাগানগুলো যা কালিম্পং থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত। এই ড্যামসাং উপত্যকার ওপরেই দাঁড়িয়ে ছিল ড্যামসাং দূর্গ আজ যা ধ্বংসাবশেষে পরিণত। তৈরি হলো স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি। সুইস ফাদারদের আনুকূল্যে পেডং-এ খ্রিস্ট ধর্মের উত্থান এবং প্রসার ঘটতে শুরু করল। তারই সঙ্গে আঞ্চলিক স্তরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এবং পরম্পরাগত ঐতিহ্যে ওরা সৃষ্টি করলেন এক নতুন প্রজন্মের সমাজ। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল। চীনাদের চা বাগান পত্তন, উৎপাদন, রপ্তানি ব্যাবস্থার সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়ী শ্রেণী যুক্ত হল এবং বসতি স্থাপনের পাশাপাশি সামাজিক বিবর্তন চলতে লাগলো কালের নিয়মে। এরপর দেশে ব্রিটিশ শাসনকালে আরও অনেক কিছুর মতই চা শিল্পের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল তাদের হাতে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলি এল চা শিল্পে। তার আগেই উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চল ছাড়াও আরো অনেক রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়ে গিয়েছিল চা উৎপাদন। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে রাজনৈতিক জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ক্রমশ বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেল এখানকার চা উৎপাদন এবং বাণিজ্য। অযত্ন, অবহেলা এবং যথাযথ দেখভালের অভাবে ধ্বংস হয়ে গেল একের পর এক চা বাগান। কালের গর্ভে হারিয়ে গেল পেডং এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের গৌরবময় চা উৎপাদনের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে একটি বাংলো যেখানে থাকতেন বাগানগুলোর পরিচালন আধিকারিকেরা। সেই বাংলো বহু ইতিহাসের সাক্ষী ড্যামসাং দূর্গের ভগ্নাবশেষের পাশেই ছিল এবং এখনো আছে। এক সময়ের ড্যামসাং টি এস্টেট হাত বদলের ফলে পরবর্তীকালে পরিচিত হয় ডুয়ার্স টি কোম্পানি নামে। এর পরে ভারতীয় চা উৎপাদন এবং বাণিজ্যের বৃহৎ ক্ষেত্রের বাইরেই থেকে যায় পেডং এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা। এদিককার চা বাগানগুলি প্রসারিত হয় তরাই এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে। 

পেডং এর চা বাগান এখন বিলুপ্ত। অবহেলিত থেকে গেছে গৌরবময় চা শিল্পের অধ্যায়টি। ইতিহাসের এক কোণে ঠাঁই হয়েছে তার। এখন উত্তরবঙ্গের পাহাড়ের চা বাগানগুলো দার্জিলিং জেলাকে কেন্দ্র করে। পেডং হারিয়েছে সেই গৌরব। চা উৎপাদন এবং বাণিজ্য শুধুমাত্র নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বহু মানুষের কর্মসংস্থান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়টিও। তারই সঙ্গে পর্যটন মানচিত্রে আন্তর্জাতিক স্তরের গুরুত্ব। নাথুলা খুলে গেছে। খোলা আছে প্রাচীন জেলেপলা। এই পথ ধরে আরও একবার যদি শুরু হতে পারে চা শিল্পের সেই অধ্যায়ের পুনরুত্থান তা কি হবে নিছক কষ্টকল্পনা? এতে যদি এই অঞ্চলের মানুষগুলোর জীবন এবং জীবিকায় সামান্যতম আশার আলো যুক্ত হয় তার থেকে ভালো আর কোন কিছুই হতে পারে না। একসময় যে মাটি জল এবং বাতাস চা বাগান গড়ে ওঠার অনুকূল ছিল তা কেন প্রতিকূল হয়ে গেল সেটা নিশ্চয়ই গবেষণাযোগ্য বিষয়। সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে উদ্যোগ নিলে উন্নত মানের চা হয়তো আবার উৎপাদন করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্য এবং দেশের সঙ্গে নতুন করে ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে। তাহলে উপকৃত হবে আমাদের এই উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের দরিদ্র এবং কর্মহীন মানুষ। তবে পেডং থেমে থাকেনি। তার মুকুটে যোগ হয়েছে নানা বর্ণের উত্থান-পতনের পালক। পেডঙের অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক গুরুত্ব মিলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে একে নিঃসন্দেহে এক অভিনবত্ব দিয়েছে। 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri