আমার রবীন্দ্রনাথ/নূপুর রায়
আমার রবীন্দ্রনাথ
নূপুর রায়
রবিঠাকুর,
জানতে চাও তোমার সাথে আমার কী করে পরিচয়?
আসলে তোমার আমার সম্পর্ক যে জন্মসূত্রে।
হ্যাঁ তুমি তো আমার জন্মদাতা।
আশ্চর্য হচ্ছ? না না,এটাই তো সত্যি।
আমি রবিঠাকুরের মেয়ে। গ্রামের সবাই যে আজও তাই বলে ডাকে।
আধো আধো কথা বলতে শিখেছি যখন, তখন থেকে শুনে আসছি- "ও তুই রবিঠাকুরের মেয়ে"! আর বলত - "তুই কিন্তু রবিঠাকুরের মতো হস নাই! না গায়ের রং পাইছস, না উঁচালম্বা হইছস।" শুনে খুব মন খারাপ হত!
ছোটো বেলায় আমি নাকি খুব রুগ্ন থাকায় স্কুলের দরজায় পা দিয়েছি প্রায় সাত বছর বয়সে। আমাদের স্কুলঘরে মাথার উপর টিনের চাল ছিলো, কিন্তু বেড়াগুলো নিচের দিকে প্রায় ছিলোই না। কাঠের ফ্রেমটা ছিলো, ওতে ধরে ধরে দোল খেতাম আমরা। ক্লাসে মাস্টারমশাই আসলে ওই ভাঙা বেড়ার নিচ দিয়েই ঢুকে বসে যেতাম বেঞ্চে।
প্রাইমারি স্কুলেই ২৫শে বৈশাখে পরিচয় হল রবিঠাকুরের সাথে। এক নতুন রবিঠাকুর।! যাঁর সাথে আমার বাবার চেহারার কোনো মিল নেই। ভাবলাম সবাই যে আমাকে রবিঠাকুরের মেয়ে বলে তাহলে?
এই রবিঠাকুর তো দাড়িওয়ালা একটা উঁচু লম্বা লোক! তিনিই নাকি আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! তাঁর জন্মদিন মানে ব্ল্যাকবোর্ডে তাঁর ছবি, স্কুলঘরের পাশে থাকা মাধবীলতা ফুল গাছ থেকে ফুল তুলে মালা গেঁথে সাজানো স্কুলঘরের স্টেজ আর বাড়ি থেকে টগর ফুল তুলে সুন্দর একটা সাদা ধবধবে মোটা মালা যা পরানো হতো বিশ্বকবির ফটোফ্রেমে। আর আমরা মেয়েরা, মায়ের একটা বড়ো শাড়িকে পেঁচিয়ে নিতাম শরীরে। দুজন চারজনের দল বেঁধে কোমড় দোলাতাম কখনো "ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল বা খরবায়ু বয় বেগে চারিদিক ছায় মেঘে" অথবা "পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয় আয় আয়" গানের সাথে।
আবার "আতা গাছে তোতাপাখি" "কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি" কবিতা কখনো"শরৎ" কখনো "প্রশ্ন" বলতে বলতে মাঝপথে ভুলে যাওয়া! এভাবেই প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল গিয়ে ধীরে ধীরে বাঙালির স্রষ্টা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রবিঠাকুরের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম।
(বি:দ্র:- আসলে আমার বাবার নাম স্বর্গীয় রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কোচবিহার জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। রবিঠাকুর নামেই বাবার পরিচয়)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴