আমার মা/সাগরিকা কর্মকার
আমার মা
সাগরিকা কর্মকার
সময় অনন্তকাল ধরে বয়ে চলেছে নিজের গতিতে ।কালের স্রোতে প্রবাহিত সময় মহাকালের মোহনায় গিয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।এরই মাঝে কিছু সময় জীবনের স্মৃতির পাতায় মহা মূল্যবান।
বাঙলা সাহিত্যের ছাত্রী আমি ,সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালবাসা জন্মায় মায়ের মুখে বাঙলা গল্প, উপন্যাস শুনে শুনে। আজও যখন ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ে আমার মনে মেঘ জমে , মা ঠিক বুঝতে পারে সাথে সাথেই কবিগুরুর কবিতা আপনমনে সুন্দর পাঠ করতে থাকে নির্ভুল, হয়ত বা কোন উপন্যাসের কিছু কথা যেমন "শ্রীকান্ত" উপন্যাসের মেজ দা'র চরিত্র ...আর আমার মনের মেঘ আসতে আসতে কেটে যায়।
আমার বাবা ডিফেন্সে কর্মরত ছিলেন। Transferable job তাই কখনোই আমাদের বেশিদিন সময় দিতে পারেননি। বাবা তখন মিজোরাম, আমার বয়স মাত্র তিন বছর দাদু মা ও আমাকে বীরপাড়া নিয়ে আসেন নিজের কাছে। ওতটা মনে না পড়লেও কিছু কিছু মনে পড়ে, ও মায়ের মুখে শুনেছি মা সাহিত্যের জগতে ডুবে থাকত, রাত জেগে জেগে গল্প,উপন্যাস শেষ করতো। আর একটা চিঠির অপেক্ষায় সময় কাটতো ....সুদূর মিজোরাম থেকে । আজ বাবা নেই তবুও
মা মন না চাইলেও "গীতাঞ্জলি"র পাতা উল্টোতে থাকে ,একের পর এক কবিতা আপন মনে পড়তে থাকে । গান না শিখলেও আমি গানে একটু ভুল করলেই ধরে দেয়, বা বলে 'আর একবার যদি ভুল করেছ ,তোমার গান বন্ধ করে রাখ, ভাল করে শুনে তারপর গান করবে।' আজ যা লিখছি সবটাই চুপি চুপি মা'কে বলব না, না হলে খুব বকা খাব । মা বলে 'আত্মপ্রচার করোনা কখনও, তোমার ভাল ব্যবহার রাখ সবার সাথে।' আমি বড্ড খামখেয়ালি মেয়ে এই মেঘ তো এই রোদ মনে ।
মায়ের ছেলেবেলা ছিল এমন :
তেরজন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়ো আমার মা, ছোট ছোট ভাইবোনদের সব দায়িত্ব মায়ের ছিল। নিজের পড়াশোনা তার মাঝেই করে, দিদিমা খুব সাধারণ ছিলেন, রান্নাঘরেই সময় কাটতো সারাদিন। দোকানের কর্মচারী, জমির লোক সবাই'কে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াতেন। এত বড়ো বাড়ির মেয়ে হয়েও খুব সাধারণ ভাবেই জীবন কাটিয়েছে আমার মা। খুব সাহসী ও বুদ্ধিমতি আমার মা ।
জীবন চলছে সুখ;দুঃখের চক্রাকারে ........ মায়ের শাসনে, যা আমার বড্ড প্রিয়, মনে হয় কতটা শেখার আছে আরও মায়ের কাছ থেকে, কিছুই জানি না আমি। সবটুকু শিখে নিতে চাই মা, তোমার কাছ থেকে। মা, তুমিই আমার আদর্শ ও শক্তি ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴