আমার জানা অনিন্দ্য/অনিতা সেন
আমার জানা অনিন্দ্য
অনিতা সেন
পার্থকে আমি চিনতাম একই পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে। কিন্ত ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম সাহিত্য সভায় যোগদানের পর থেকে। কিন্ত এক বছর পূর্ণ না হতেই যে তার এইভাবে যবনিকা ঘটবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, মনে হয় ঐ তো বসে আছে সভার একপাশে ! সভায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই পার্থর অর্ডার করা চা চলে আসবে এখুনি!
খুব স্পষ্ট করে মনে আছে আমার প্রথম সাহিত্য সভার কথা। লিখেছিল পার্থ - "এবারের সভায় আমরা মূলত রবীন্দ্র নজরুল বিষয়ক চর্চা করব।রবীন্দ্রনাথ নজরুলের প্রভাব আমাদের নিজেদের জীবনে কিভাবে পড়েছে বা তাঁদের সাহিত্য কীর্তি কীভাবে আমাদের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে আছে তা নিয়েই আড্ডা হবে ঐদিন। "
আমরা যে যার মতো রবীন্দ্রনাথ নজরুল নিয়ে নিজের ভাবনা নিজেদের মতো করে বললাম ও শুনলাম। সর্বশেষে পার্থর কাছ থেকে জানলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু অজানা মূল্যবান তথ্য।
তারপর শুরু হলো বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও শীতের আড্ডা।
প্রকৃতির রং ও রূপের সাথেই আমাদের সভা সেজে উঠেছিল খুব সুন্দরভাবে।
আর এই সভার মধ্য দিয়েই পার্থ চেয়েছিল বর্তমান সমাজকে সংস্কার করতে। সে অন্তর থেকে চেয়েছিল বীরপাড়ার আগামী প্রজন্মকে একটা সুস্হ, স্বাভাবিক, সুন্দর জীবনপথে পরিচালিত করতে।
সেই উদ্দেশ্যে ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে সাহিত্য সভাতে তৈরী হ'ল "অন্বেষণ এক" আর "অন্বেষণ দুই "। যেখানে বাচ্চাদের সাহিত্যে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি গান, আবৃত্তি এবং অঙ্কন শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল
এইভাবেই বীরপাড়ার বর্তমান প্রজন্ম কে একটা সর্বাঙ্গীন শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছিল সে নিঃস্বার্থভাবে।
পার্থর সাথে আমাদের শেষ সভা হয়েছিল জানুয়ারি মাসে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষ্যে।আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে শেষ গান গাইল সে "আয় রে আয়, লগন বয়ে যায়....."
তখনও কী আমরা জানতাম, যমরাজ চুপিসারে এসে কড়াটা নাড়িয়ে দিয়ে গেছে !!!
পার্থবিহীন বসন্তের আড্ডায় ছিল জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সেই গান "কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস/আমি বলি আমার সর্বনাশ!!!..."
পার্থ, তোমার মৃত্যু হয়নি, হতে পারে না। তুমি আজীবন আমাদের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তোমার মহৎ কর্মে, তোমার আদর্শ চিন্তাভাবনায়। তুমি অনবদ্য। সার্থক তোমার নাম অনিন্দ্য।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴