আমার চোখে ডুয়ার্স বন/সাগরিকা কর্মকার
আমার চোখে ডুয়ার্স বন
সাগরিকা কর্মকার
ভাগলপুরের গহন জঙ্গলমহলের এক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক' উপন্যাস। যা এই উপন্যাসের কখক সত্যচরনের চোখ দিয়ে দেখেছিলাম 'আরণ্যক'-এর পাতায়। যেখানে খুঁজে পেয়েছি আদিম অরণ্য প্রকৃতি আর মাটির কাছাকাছি কিছু সহজ সরল মানুষ দুইয়ে মিলে অরণ্য সত্তার পূর্ণ পরিচয়। যা মনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল।
'আরণ্যক'-এর পাতার অরণ্যকে খুঁজেছি আমার চোখে - আমার জন্মভূমি পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের মাঝে। ডুয়ার্সের সাথে রয়েছে আমার নাড়ির টান, দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সাথে রয়েছে আমার গোপন মনের ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই মাঝে মাঝেই ছুটে আসি ডুয়ার্সের বুকে।
ডুয়ার্স শিলিগুড়ি থেকে সামান্য দূরেই, ছোট বড় পাহাড় ঘেরা গুলমা, সেবকের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে খরস্রোতা তিস্তার বুক ছুঁয়ে এঁকে বেঁকে চলেছে রেললাইন । আঁধো আলো পরিবেশ অরণ্যের গভীরের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলেছে ট্রেন, দাঁড়িয়ে আছে শাল, সেগুন গাছ। চোখের সামনে ফুটে ওঠে অদ্ভুত দৃশ্য। পথে, পথের বাঁকে বাঁকে ডুয়ার্স নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে নিজস্ব ঐশ্বর্যে। গভীর অরণ্যের ভেতর গা ছমছমে পরিবেশ, নানান রকম পাখির কিচির মিচির শব্দ, এক অলৌকিক পরিবেশ যেন।
এমনিভাবেই অরণ্যের রূপ দেখতে দেখতে একসময় পৌঁছে গেলাম দলগাঁও স্টেশন (বীরপাড়া) যেখানে রয়েছে আমার দাদুর বাড়ি ।
ডিসেম্বর মাস, তাই একটা চড়ুইভাতি'র আয়োজন করা হয়েছে 'রোববারের সাহিত্য আড্ডার'র পক্ষ থেকে, ডুয়ার্সের অন্যতম মূল আকর্ষণ তাতাসি'র অরণ্যের মাঝে। এই অরণ্যের সাথে আমি আগেই পরিচিত, কারণ সরু গাঁয়ে( ধনীরামপুর) আমার দাদুর জমির বাড়ি রয়েছে। মাঝে মাঝেই আসা হয়। তবুও তাতাসি'র অরণ্য'কে যেন নতুন করে দেখেছিলাম একত্রিশে ডিসেম্বর চড়ুইভাতির দিন, খুঁজেছিলাম এক নতুন মুক্ত আকাশ।
এখানে জঙ্গলের বুক চিড়ে চলে যাওয়া রাস্তার আশেপাশে গভীর নির্জন, বাঘ, চিতা বা হাতির ও তেনাদের উপস্থিতি রয়েছে। এ অঞ্চলে সাঁওতাল জাতির বাস। এরা এখানে 'মদেশীয়া' নামে পরিচিত, এদের মাতৃভাষা 'সাদরি'।
এখানেই পরিচিত হয়েছিলাম এমন একজন মানুষের সাথে, যার সাথে মিল খুঁজে পেয়েছিলাম 'আরণ্যক'এর সাঁওতাল রাজা দোবরুপান্নার, যিনি অরণ্যের সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। এখানেও সোম টুডু সাঁওতাল জাতির, যিনি বাগানে কাজ করে রিটায়ার হয়েছেন। এই তাতাসি'র অরণ্যের মর্যাদার প্রতীক। সমস্ত অরণ্য যেন তাঁর প্রাণ, তার সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছি এই তাতাসি'র নদী জঙ্গলেই তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়েছে ।
জীবন এভাবেই এগিয়ে চলে কখনও অরণ্য কখনও বা দুটি পাতা একটি কুঁড়ি ছুঁয়ে .....ভালোবাসার প্রিয় মুখগুলির সাথে, প্রিয় মানুষের সাথে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴