আমার গ্রামের জঙ্গল/ভাস্বতী রায়
আমার গ্রামের জঙ্গল
ভাস্বতী রায়
জঙ্গলের সঙ্গে আমার শেকরের টান আছে।জন্ম , বেড়ে ওঠা এবং কৈশোর কেটেছে জঙ্গলের কোলে। বাড়ির সামনে ননাই নদী আর তার পার ধরে সারি সারি সেজে খট্টিমারীর জঙ্গলের গাছেরা পুরো গ্রামটাকেই মোহময়ী করে রেখেছে। গাছেদের নিঃশ্বাসের শব্দ আজও শুনতে পাই। জঙ্গলের এক অমোঘ আকর্ষণে ছোটবেলায় বাবা মায়ের হাজার নিষেধের পরও লুকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়তাম জঙ্গলে।
জঙ্গলের শাল সেগুনের সবুজ ছায়া আর শুকনো পাতার মরমর শব্দ মাতাল করে রাখত।
বাড়িতে কোন অতিথি এলে তো কোনও কথাই নেই! তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম জঙ্গলে। শুধু ছেলেবেলা
বলছি কেন আজও মাঝে মাঝেই, বিশেষ করে এই বর্ষার সময় প্রচন্ড বৃষ্টির পর নীল আকাশে যখন সাদা মেঘের খেলা চলে, আমায় হাতছানি দেয় আমার গ্রাম, প্রিয় নদী আর খট্টিমারীর জঙ্গল।
জঙ্গলের সৌন্দর্যই দেখেছি এমনটা নয়। জঙ্গলের পাশে থাকার সুবাদে জঙ্গলের ভয়াবহ রূপ দেখার সুযোগও মিলেছে। জঙ্গল থেকে মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পরে হিংস্র জানোয়ার। হাতি বেশী দেখা যায়। মাঝে মাঝেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে হাতির দল। হাতির উপদ্রবে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কাঠের একটা করে দোতালা ঘর আছে। ছোট ছিলাম যখন হাতে গোনা তিনচারটে বাড়িতে এই দোতালা ঘর ছিল। তখন রাতে হাতি বেরোলে গ্রামের সকলে ঠাঁই নিত এই বাড়িগুলোতে। কত শোনা যেত গরুটা ছাগলটা বাঘে টেনে নিয়ে গেছে কিংবা কাউকে তুলে আছাড় মেরেছে দাঁতাল হাতি। আগে প্রচুর ফসল ফলত মাঠে। এখন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য তো আছেই সঙ্গে হাতির দৌরাত্ম্যে প্রায় কোনও ফসলই ফলাতে পারে না আমার গ্রামের মানুষ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴