আমার আকাশ/বনানী গোস্বামী
আমার আকাশ
বনানী গোস্বামী
সুপ্রিয় আকাশ,
বহুকাল বাদে তোমায় লিখছি আজ।
ছোট্ট বেলা থেকেই তো তুমি আমার পরম বন্ধু হয়ে আছ। কখনো কোনো বিচ্ছেদ হয়নি তোমার সাথে। আমার মন খারাপ মুহূর্তে কিম্বা মন ভালোতে তোমার অবদান আমার জীবনে অনস্বীকার্য। তুমি আমার চোখের তৃষ্ণা জুড়াও, শরীর, মনের ক্লান্তি দূর কর সবসময়। মনে আছে সেদিন স্কুল ছুটির পর...... হাঁটাপথে ফিরছি...চারদিক কিরম একটা হলদে-লাল আভায় ছেয়ে আছে; চোখ তুলে তোমায় দেখতেই দেখি...কী এক অপরূপ রঙ মেখে আছ। অদ্ভুত এক ভালোলাগাতে আচ্ছন্ন হলাম। তোমার রূপমুগ্ধতায়। কত রকমের পাখি যে আমার মাথার ওপর ডানা ঝাপটে দে দৌড়। গাছেরাও আলতো হাতে হাওয়া বিলোচ্ছিল পথচারীদের। আর সে বার যখন আশরীর মেঘ জড়িয়ে ডেকে যাচ্ছিলে আমায়..আমার বড়ো ইচ্ছে করছিল ঐ দোল খাওয়া গাছের ডালটা উঁচিয়ে তোমায় একটু ছুঁয়ে দিই। বলতে না বলতেই তুমি এমন দুষ্টুমি করলে...দুম করে শাওয়ারের ধারায় পুরো ভিজিয়ে দিয়েছিলে আমায়। এইতো পুজোর ঠিক আগেই...তুমি এত নীল রঙ মেখে সাদা তুলো গুলো সেঁটে ইশারায় হাত নেড়ে কাছে ডাকলে, অমনি আমি দৌড়ে মাঠ ঘাট নদী পেরিয়ে তোমায় ছুঁতে যেতেই মুঠোতে একরাশ কাশফুল তুলে ফেললাম, ধ্যাততেরি। এমন মস্করা তুমি আকছার করে আসছ আমার সাথে।ঘরে বসে থাকলে জানলার পর্দা সরাতেই সন্ধ্যায় তোমায় দেখছি, ওমনি তুমি দুহাতে জোছনা ভরে এনে আমার মুখে মাখিয়ে দিয়েই ছুট....আম্মো আপ্লুত হয়ে দু চোখের পাতা এক করে কতক্ষণ যে ছিলেম.... । ওহ্ ওটাতো বলা হয়নি... সেবার পাহাড়ে রাত কাটানোর সময়?খোলসা করছি: আমায় স্বর্গসুখ দিয়েছিলে!!! ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের শীর্ষে আমি, তার চারধারেও শুধু পাহাড় চূড়া, নীচে রুপোলি সুতোর মতো নদী টা... আর আমার মাথার'পর তোমার অসীম বিশালতা শুধু লক্ষ নক্ষত্র খচিত গহনাবৃত পরিসর দেখে আমি বিহ্বল, উৎফুল্ল হয়ে কতক্ষণ যে বাকরুদ্ধ .. স্থবির হয়ে ছিলাম জানি না!!! সম্বিত ফিরলে শুধু এটাই বুঝলাম যে এই তো স্বর্গ! কে বলে তা বহুদূর!
এখনো মনখারাপের ওষুধ - সে সুখ আমার চোখে সুরমার মতো লেগে থাকে: আমি মন ক্যামেরার রিল ঘুরিয়ে বারবার দেখি। আজ এতদিন পর তোমায় লিখতে বসে কী সব যে আগডুম বাগডুম বকে ফেললাম... সত্যি বলব? তোমার এমন দুষ্টুমি চিরকাল আমার প্রশ্রয় পাবে। এভাবেই সবসময় ভালো রেখো, ভালো থেকো...
অলমিতি-
বনানী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴