সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
30-March,2025 - Sunday ✍️ By- অমিত কুমার দে 128

আমার অনিন্দ্য/অমিত কুমার দে

আমার অনিন্দ্য
অমিত কুমার দে

পাঁজর চুরমার করে দিল স্টিয়ারিং। জানো অনিন্দ্য, আজও শিলিগুড়ি যাচ্ছিলাম, দু'মুঠোয় স্টিয়ারিং।  গোটা রাস্তা আমার পাঁজর আর স্টিয়ারিংয়ের মাঝখানে তুমিই থাকলে। অত বড় শরীর নিয়েও দিব্যি এঁটে গেলে!

সহজ উঠোন আর চিকরাশির কারণে প্রতিদিন অনেক লেখা পড়তে হয় আমায়। আমার নিকটজন অনেকেই জানেন 'সহজ উঠোন'-এর 'ত্রিরত্নের' কথা আমি বারবার বলি। যাঁদের মধ্যে আমি অফুরান সম্ভাবনা দেখি। যাঁদের লেখার জন্য আমি অপেক্ষা করি। দ্বিতীয় নামটা ছিলে তুমি। তোমাকেও বলেছি সে কথা। অথচ অহংকারের বদলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছ দাদার কথা। স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ে। বলেছ - "না দাদা, ধারাবাহিক লেখার যোগ্যতা বা সময় আমার এখনো হয়নি।" অথচ দ্যাখো, সাহিত্যের ময়দানে এখন অযোগ্যদের আস্ফালন চলছে। বড় লেখক হতে হলে সংযমী হতে হয়, সাধক হতে হয়। ... কাকে বোঝাব? তোমার মতো কে আর বুঝতে চাইবে? তোমাকে দিয়ে কত কাজ করিয়ে নেব ভেবেছিলাম। ...

হঠাৎ করেই আমাদের আরেক গর্ব নূর-কে (মিত্র ও ঘোষ) নিয়ে  আমার 'দোতারা'য় একটা অপরূপ সন্ধে সঙ্গে নিয়ে এলে। পপিকে প্রথম দিন থেকেই 'দিদি' বলে ডেকেছ। ওর ছোট্ট বাগান দেখে কী আন্তরিকভাবে বললে "দিদি, আমি তোমায় অনেক নতুন গাছ দেব।" এবার চিকরাশি সাহিত্য উৎসবে তেমন একটি চারাগাছ দিয়েও গেলে। তোমার দিদি এখন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে গাছটা বাঁচিয়ে রাখতে। একটা চারাগাছ হয়ে আপাতত তুমি আমার বাসায় রয়ে গেলে...

সেই সন্ধেয় তোমাকে প্রথম স্টিয়ারিং হাতে দেখলাম। একটা দুরূহ জায়গায় পার্কিং করেও কী যত্নে গাড়িটা বের করে আনলে। কত সাবধানী চালক ... মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। আসলে আমি তো এমন সাবধানী হতে শিখলামই না। বেপরোয়া চালক বলে আমার একটা অখ্যাতি ছড়িয়ে আছে!

দেখার বদলে ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার সঙ্গে কথা হয়েছে। যে আমি ফোনালাপে প্রায় থাকিই না, সেই মানুষটিই তোমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করতাম। কারণ সে ফোনের মধ্য দিয়ে আমিও সমৃদ্ধ হতাম যে।

আমার ভালো লাগা আমার 'সহজ উঠোন'-এর মধ্য দিয়েই তুমি সাহিত্যে এভাবে এলে, এতগুলো সাহিত্যমনস্ক মানুষের পরম প্রিয়জন হয়ে উঠলে। সাহিত্য-সংগঠক হলে।  এত অল্প সময়ে। বিগত বছরগুলোতে বেশ কজন কৃতী লেখক চলে গেছেন। কিন্তু এভাবে স্মরণগাঁথা সাজানোর তাগিদ তো অনুভব করিনি!

অগাধ বিস্ময়ে এখন তোমায় নতুন নতুন করে জানছি। ফুটবলার অনিন্দ্য, পোস্টমাস্টার অনিন্দ্য, পদার্থবিদ্যার মেধাবী ছাত্র অনিন্দ্য, বন্ধুবৎসল অনিন্দ্য, ছোটদের আস্থা অনিন্দ্য, পাঠক অনিন্দ্য, সঙ্গীতপ্রিয় অনিন্দ্য, গুছিয়ে থাকা মানুষ অনিন্দ্য, আড্ডার অনিন্দ্য, অনেকের ভরসা অনিন্দ্য, বোনের দাদা অনিন্দ্য, মায়ের অনিন্দ্য ...

তুমি চলে যাবার পর তোমার বাসায় প্রথম গেলাম। তোমার মা বাবার সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। যেমন তোমার শবদেহের সামনে দাঁড়াবার দুঃসাহস আমার ছিল না। কিন্তু সেই সন্ধেয় তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে উপলব্ধি করছিলাম এমন মায়েরই এমন সন্তান হয়। আবার যাব তোমার মায়ের কাছে। যেতে হবেই যে।

চলে যাবার দিন কুড়ি আগে আমি তোমার মুখেই জানলাম তুমি বিয়ে করোনি। ফোনে কথা বলতে বলতে চেঁচিয়ে পপিকে বলেছিলাম - "আজ থেকে তোমার কাজ বাড়ল! ভাইয়ের জন্য পাত্রী খোঁজ।" তুমি কেমন আড়ষ্ট হয়ে কথাটা ঘুরিয়ে দিলে। তোমার মৃত্যুর পর তোমার দাদা কিন্তু তোমার অবিবাহিত থাকার কারণটা খুঁজে বের করে ফেলেছে। সেটা আবিষ্কার করে তোমাকে আরো বেশি করে ভালোবেসে ফেলেছি ভাই। এমন গল্পের মতো জীবন কজনা যাপন করতে পারে বলো? 

কাউকে কোনোদিন বলোনি, কিন্তু মৃত্যু জানিয়ে দিয়ে গেল কতগুলো অসহায় মানুষের কেমোথেরাপি চলত তোমার টাকায়,  অসহায় মায়ের কান্নার কথা জেনে নিমেষে বত্রিশ হাজার টাকা তুলে দিতে এক মিনিট ভাবতেও হত না তোমাকে, বাড়ির কাজের মানুষটির চোখের সার্জারির দায়িত্ব যে নিজের সে কথা অনিন্দ্যর মতো ছেলেকে ভাবতেও হয় না। দুঃস্থ প্রতিবেশীর বাবার অন্তেষ্টির দায়িত্বও তাঁর - সে কথা অনিন্দ্যকে অনিন্দ্যই বলে দিত। এমন দুর্লভ মানুষকেই তো দেবতা বলে, তাই না অনিন্দ্য?

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri