সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
14-July,2024 - Sunday ✍️ By- দেবদত্তা বিশ্বাস 260

আমায় জড়িয়ে ধরে স্মৃতির শিকড়- বাকড়গুলি/দেবদত্তা বিশ্বাস

আমায় জড়িয়ে ধরে স্মৃতির শিকড়- বাকড়গুলি
দেবদত্তা বিশ্বাস

         মন কেমনের মেঘলা দিনে দূরের ওই শ্যামল সবুজ অরণ্যরাজি মন ক্যানভাসে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে যখন খানিক ঝাপসা হয়ে ওঠে, আমার মন তখন ক্যানভাসে আঁকা আঁকাবাঁকা পথের পাহাড়ি ঝোরাটির খাঁজ কাটা পথে বাঁক নিয়ে কোনো এক অতীত স্মৃতিতে খুঁজে বেড়ায় এক অন্য বন্য আমিকে।
             ছেলেবেলা থেকে গাড়োয়াল হিমালয়ের প্রতি আমার জিজ্ঞাসা  জিম করবেট ঘেঁটে ঘেঁটেই। গা ছমছমে সব বন্য গল্প পড়ে গাড়োয়ালের প্রকৃতিকে নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছিলাম মনে মনে। সুযোগ এলো আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে। উঁচু উঁচু পাহাড়ি পথ বেয়ে একদিন পৌঁছে গেলাম গাড়োয়ালের ঠিক পাশে হিমাচলের রাস্তায়। কুলকুল শব্দে বয়ে চলা শতদ্রু নদীর দুপাশের ঢাল বেয়ে উঠে গেছে উঁচু সব পাহাড় আর ঝোপ জঙ্গল। সবুজের রকমফের নিয়ে আমি তখন বড়োই বিচলিত। বৃষ্টি বাদল লেগে থাকা ডুয়ার্সের ঘনসবুজ অরণ্যের তুলনায় এই সবুজ অন্য কাহিনী লেখে। পাইন, জুনিপারের মাঝে বাঁশ গাছের ঝোপ পাহাড় থেকে ঝুঁকেঝুকে স্বাগত জানায় এ পথের পথিককে।হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার ছোট্ট এক পাহাড়ি গ্রাম দেহের। আপাতত কিছু মাসের ঠিকানা আমার এখানেই। কম ঘনবসতিপূর্ণ এক একটা ছোটো ছোটো গ্রাম ঘিরে সবটাই জঙ্গল। শিবালিক হিমালয়ের জঙ্গলের মাথা ছুঁয়ে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের  রাঙা রশ্মি শতদ্রুর জলে যে মুহূর্তে অপরাহ্ণের ছবি আঁকে ঠিক সেই সময়েই জঙ্গলের কোন এক গোপন কঠোর থেকে ময়ূরের কেকা ধ্বনি পাহাড়গুলিতে প্রতিধ্বনিত হয়ে শুভরাত্রি জানায় আমাদের। আমার পাশের ঘরের ছোট্ট দুষ্টু মেয়েটির দুষ্টুমিতে ক্লান্ত মা যেদিন পাহাড়ি ভাষায় ভয় দেখায় 'তেন্দুয়া আজা খাইলে' আমার বুঝতে বাকি থাকে না আশেপাশের এই জঙ্গল চিতাবাঘেদের নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্র।আমার সব আশঙ্কা সত্যি করে একদিন সত্যি সত্যিই তিনি এলেন। আকাশে রাখি পূর্ণিমার চাঁদ আর বাড়ির উঠোনময় গভীর রাতে তার নিঃশব্দ উপস্থিতি শুধুমাত্র গোয়াল ঘরের প্রাণীগুলোই টের পেল। তাদের ছটফাটানি বাড়ির মানুষগুলো বোঝার আগেই গোয়ালে হানা দিল চিতাবাঘ। পরদিন সকালে দেখতে পেলাম গোয়াল ঘরের সামনে থেকে একটা রক্তের শিরা উঠে গেছে পিছনের পাহাড়ি জঙ্গল পর্যন্ত। আর সেখানে খুবলে খাওয়া একটা ছাগলের মৃতদেহ।
                 এরপর থেকে গোটা গ্রাম ভয়ে কাঁটা। রাত নামলেই শহুরে আমি ঘরের বাইরে বের হবার সাহস পাইনা। ঠিক দিন পনেরো পর। অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার জংলি ঝোপে জাঁকিয়ে বসেছে সেদিন। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই এক অজানা আতঙ্ক বারে বারে গ্রাস করছিল আমাকে। পরিবেশ থমথমে। গাছপালাগুলো যেন সামান্য নড়তেও ভয় পাচ্ছে। আমার ষষ্ঠেন্দ্রীয় বারে বারে আমায় অন্য কিছুর আভাস দিচ্ছিল। রাত বাড়তেই কুকুরগুলো বাড়ির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অস্থিরভাবে ছুটতে শুরু করে। ভয়ে আমি দরজায় খিল আঁটি সন্ধ্যা রাতেই। আবারও সব আশঙ্কা সত্যি করে তাকে ভোর রাতে দেখা যায় পাশের বাড়ির দাওয়ায়।এই ভয়ংকর সুন্দর এক সময় আমার অভ্যাসে পরিণত হয়।
            নানা জাতের নানা রকম পাখির কলতান আমায় বন্য আমেজে মুগ্ধ করে রাখত সে সব দিনে। কখনো কখনো  জংলি বাঁকে হাঁটা চলার মাঝে পায়ের ফাঁক দিয়ে ছুটে চলে যেত রঙিন বন মোরগ। বাহারি রংয়ের বিশুদ্ধতা শুধু বোধহয় এমন পবিত্র পরিবেশেই অনুভব করা সম্ভব । একসময় আবার ঋতু বদলের খেলায় জঙ্গলগুলো সতেজতা হারায়। যতদূর চোখ যায় হিমাচলী পাহাড়ের গায়ে সে সময় শুধুই শুকনো ঘাস। দাবানল যে কত ভয়ংকর হতে পারে আমার ধারনা পরিষ্কার হয় পাতা ঝরার দিনে পাহাড়ের পর পাহাড়ি জঙ্গল চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখে। জঙ্গল পুড়ে যাচ্ছে , গ্রাম পুড়ে যাচ্ছে, সরল পাহাড়ি মানুষ গুলোর বুকে ফসল পোড়ার হাহাকার। দূরে দাঁড়িয়ে সেই মুহূর্তে মন কেমন করে ওঠে জঙ্গলের ভিতরে থাকা প্রাণীগুলোর জন্য। ওরা তো বাস্তুহারা সে দিন গুলোতে।
             আজ এতগুলো বছর পরে অতীতের স্মৃতিচারণায় মনে পড়ে উঁচু উঁচু দেবদারু গাছগুলোর কথা। নগরায়নের উল্লাসে শুনেছিলাম একদিন আমার সেই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের বুক চিঁড়ে  চলে যাবে দিল্লি থেকে লেহ পর্যন্ত তৈরি হওয়া নতুন জাতীয় সড়ক। শতদ্রু কি আর আজও তেমন স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পেরেছে পেট্রোলের ধোঁয়ায় ভরে যাওয়া আকাশটার নিচে আর? পাখিরা কি আজও গান গায়? ময়ূর কি নিভৃতে পেখম মেলে আজও? নাকি বন্য পশুরা অভিমানে চলে গিয়েছে দূরে আরো অনেক দূরের পাহাড়ি জঙ্গলে? অনেক প্রশ্ন মনে ঘোরাফেরা করে আমার ফেলে আসা অতীতকে কেন্দ্র করে । কখনো নিভৃতে আজও আমার মন ঘুরে বেড়ায় জংলি পথের আঁকে বাঁকে। আমি ফিরতে চাই সূর্যোদয়ের পর পাইনের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেওয়া প্রথম সূর্য রশ্মির খোঁজে, জঙ্গলের গভীর খাঁজে ময়ূর ময়ূরীর ভালোবাসার গানের সুরে সৃষ্টিকে খুঁজে পেতে, নিশ্চুপ দুপুরে গাছে গাছে বাঁদরের লাফালাফিতে ঝরঝর পাতা কাঁপবার আওয়াজে। আসছি, আমি আসছি খুব শীঘ্রই.......

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri