সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

আমাদের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ/ভাস্বতী শ‍্যামচৌধূরী

আমাদের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ
ভাস্বতী শ‍্যামচৌধূরী

জ্ঞান হবার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। প্রথম অক্ষর পরিচয় তাঁরই   সহজ  পাঠের  হাত ধরে_
অ আ 
"ছোটৌ খোকা বলে অ আ, 
শেখেনি সে কথা কওয়া। "
জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কবিতা 'হাট ':এই কবিতাটা সব বাঙালি  ছেলেমেয়েদেরই ভালোলাগার কবিতা। সবাই প্রায় মুখস্থ বলতে পারে। যেকোনো হাট আর গোরুরগাড়ি দেখলেই মনে পড়ে যায় -
"কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ি। 
বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি।" 
নদী দেখলেই মনে পড়ে যায় 
"আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, 
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে । "
ছোটো নদীর মতন রবীন্দ্রনাথ  আমাদের জীবনের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে রয়ে গেছেন ।শৈশবের অক্ষর পরিচয় থেকে কৈশোরের "বীরপুরুষ" কবিতা সব কিশোর কিশোরীকেই নাড়া দেয় ,সবাই মাকে রক্ষা করতে চায়, বীরপুরুষ হতে চায় ।   যৌবনে  রবীন্দ্রনাথের   গানের মধ্যে দিয়ে একটা প্রেম  পূর্ণতা পায় ।বার্ধক্যের রবীন্দ্রনাথ বন্ধু হয়ে ওঠেন তখনই বোধহয় তার কবিতার ,গানের প্রকৃত  অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।
 সুখে ,দুঃখে,আনন্দে ,বিষাদে রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ  যদিও  আমাদের বন্ধু কিন্তু  তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে ভয় হয়,সংকোচ  হয়,কতটুকুই বা জেনেছি তাঁকে। আমার এই ক্ষুদ্র সীমিত জ্ঞান নিয়ে তাঁর সম্বন্ধে আলোচনা করা ধৃষ্টতা  ছাড়া আর কিছুই নয়। 
তবু তাঁর কিছু কিছু রচনা মনের মধ্যে এমন ভাবে দাগ কেটে  গেছে যে সেই সব নিয়ে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে। 

আবহমান কাল ধরে এই পুরুষশাসিত  সমাজে নারীরা অবহেলিত; বিবাহের পর শ্বশুরবাড়িতে তারা লাঞ্ছনা ও অবহেলার শিকার হয়। কবিগুরুর সময়কালে  মেয়েদের অনেক অল্প  বয়সে বিয়ে হত। তারা পড়াশোনা করার সুযোগ পেত না,নিজের প্রতিভা বিকাশেরও কোন জায়গা ছিল না। অথচ সংসারে যখন অবহেলিত লাঞ্ছিত হত  তখন মুখ বুজে  সহ্য  করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। এভাবে সহ্য করতে করতে একদিন তারা  নিজেদের জীবন  বিসর্জন দিত। কবিগুরুর নিজের কন্যাদেরও   শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের   শিকার হতে হয়েছিল। তারপরেই হয়তো কবির কলমে   সৃষ্টি হয় "দেনা পাওনা"  গল্পটি। এই গল্পতেও নিরুপমাকে ওর বাবা পণ দিতে পারেনি বলে  রায় বাহাদুরের পরিবারে  লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে, তিল তিল  করে শেষ  হতে হয়েছিল।
পরবর্তীকালে মেয়েরাও যে প্রতিবাদ করতে জানে "স্ত্রীর পত্র ' গল্পের মধ‍্যেদিয়ে কবি এই কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ  বুঝতে পেরেছিলেন যে এইভাবে অবহেলিত, লাঞ্ছিত হয়ে  মেয়েদের জীবন অবসান হতে পারেনা, তাদেরও প্রতিবাদ করার অধিকার  আছে।
   
'স্ত্রীর পত্র' গল্পে মৃণাল অজ পাড়াগায়ের এক সুন্দরী মেয়ে।  তাকে বড়লোক বাড়িতে মেজ বউ করে আনা হয়ছিল কারন বড় বউয়ের রূপের অভাব ছিল। মৃণাল যেমন রূপবতী ছিলেন তেমনি বুদ্ধিমতীও ছিলেন। তবে সংসারে আসার  পর   তার  রূপের কথা ভুলতে বেশি  সময়  লাগেনি, কিন্তু তার বুদ্ধিকে বড় ভয় করে চলতো তার স্বামী  আর  পরিবারের লোকজন। মেজবউ লুকিয়ে কবিতাও লিখতো অথচ মৃণাল  যে কবি পনেরো বছরেও কেউ জানতে পারেনি। কেননা বাড়ির বউদের বুদ্ধি বা প্রতিভা কোনটাই থাকতে নেই।বাড়ির গোরুগুলির প্রতি তার  ছিল অপার মমতা সেটাকেও ভালো  চোখে দেখা হয়নি।
              
মেজ বউয়ের মেয়েটি জন্ম নিয়েই মারা গেল।  মা হবার দুঃখটুকু পেল কিন্তু মা হবার আনন্দটুকু পেলনা; সন্ধ‍্যাতারার মতন উদয় হয়েই অস্ত গেল। এইভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ বড় জায়ের বোন বিন্দু বিধবা মায়ের মৃত‍্যু পর তার  খুড়তুতো ভাইদের অত‍্যাচার সহ‍্য করতে না পেরে দিদির বাড়িতে আশ্রয় নিল,সবার মনে হল আপদ উড়ে  এসে জুড়ে বসলো। পতিব্রতা বড় বউ তাকে বিনে পয়সার দাসী হিসাবে নিযুক্ত করল। এই অবহেলা মেজবউ সহ‍্য করতে না পেরে তাকে সন্তানের মতন স্নেহ ডোরে বেধে নিজের কাছে রাখল। পরিবারের  কেউ তা ভালো চোখে দেখলনা।শ্বশুর বাড়িতে বউদের কাউকে ভালোবাসার  অধিকারও নেই।  তারা মেজ বউয়‍ের বুদ্ধিকে ভয় পেত  তাই বুঝতে পেরেছিল মেজ বউ থাকতে বিন্দুকে কিছুতেই বিদায় করা যাবেনা।তাই তারা এক পাগল ছেলের সাথে বিন্দুকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
     
         কদিন পর বিন্দু শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে দিদির বাড়ি আসে, কিন্তু সেখানে  তার আশ্রয় মেলেনা,তাকে আবার  শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে হয়। এই সময় মৃণাল শ্রীক্ষেত্রে তীর্থে গিয়েছিল ওর  ইচ্ছা ছিল বিন্দুকে তার  শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে নিজের কাছে রাখার।তাই তার  ভাইকে বিন্দুর শ্বশুরবাড়ি পাঠাল কিন্তু সে খবর আনলো বিন্দু আর নেই সে কাপড়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এই খবর মৃণালকে এক মুহূর্তে  স্তব্ধ করেদিল। সে ঘরের মধ‍্যে লুকিয়ে  কাঁদল কিন্তু সেই কান্নার মধ‍্যে একটা সান্ত্বনা ছিল মেয়েটাতো রক্ষা পেল বেঁচে থাকলে কী না হতে পারত। তারপর মৃণাল  তার  স্বামীকে লিখল __

শ্রীচরণকমলেষু
            তোমাদের  নামে আমি কোন নালিশ উত্থাপন করতে চাই নে-__ আমার  এ চিঠি সেজন‍‍্য নয়।
                      কিন্তু আমি আর তোমাদের  সাতাশ নম্বর মাখন বড়ালের গলিতে ফিরব না।আমি বিন্দুকে দেখেছি। সংসারের মাঝখানে মেয়েমানুষের পরিচয়টা যে কী তা আমি পেয়েছি।আর আমার দরকার নেই।তার পরে এও দেখেছি ও মেয়েমানুষ  বটে তবু ভগবান  ওকে ত‍্যাগ করেন নি। ওর উপরে তোমাদের যত  জোরই থাক্ না কেন,সে জোরের অন্ত আছে। ও আপনার  হতভাগ‍্য  মানবজন্মের চেয়ে বড়ো। তোমরাই যে আপন ইচ্ছামত আপন দস্তুর দিয়ে  ওর জীবনটা চিরকাল পায়ের তলায়  চেপে রেখে দেবে,তোমাদের পা এত লম্বা নয়। মৃত্যু তোমাদের  চেয়ে বড়ো। সেইমৃত্যুর মধ‍্যে সে মহান __সেখানে বিন্দু কেবল  বাঙালি  ঘরের মেয়ে নয়, কেবল খুড়তুতো ভাইয়ের  বোন নয়, কেবল অপরিচিত পাগল স্বামীর প্রবঞ্চিত স্ত্রী  নয়। সেখানে  সে অনন্ত।,,,,,,,,,,,,,,,,, 
 তোমাদের  গলিকে আর আমি ভয় করিনে।আমার সমুখে আজ নীল সমুদ্র, আমার  মাথার উপরে আষাঢ়ের  মেঘপুঞ্জ।
             তুমি  ভাবছ আমি মরত‍ে যাচ্ছি___ভয়       নেই অমন পুরোনো ঠাট্টা  আমি করব না।
         আমিও বাঁচব।আমি বাঁচলুম।"

                   তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন____
                                  মৃণাল 
দীর্ঘ চিঠির অংশ বিশেষ তুলে ধরলাম।
                          স্ত্রীর  এই পত্র সমগ্র লাঞ্ছিতা  অবহেলিতা নারীর  পুরুষ শাসিত সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।তৎকালীন সমাজে স্ত্রীরা স্বামীর  বিরুদ্ধে এইরকম প্রতিবাদ করতে পারত না। তারা লাঞ্ছিতা হতে হতে একদিন শেষ  হয়ে যেত, প্রতিবাদ করার অধিকার  তাদের ছিলনা। বর্তমান  যুগে  মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, পুরুষের  সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছে, তারা আর লাঞ্ছনা সহ‍্য করেনা । কিন্তু  গ্রামাঞ্চলে এখনও মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পায়না কারন তাদের অলপ বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। তারা নির্যাতিতা হয়ে তিল তিল করে শেষ হয়ে যায়। তাই বলবো এই পত্র এ যুগেও প্রাসঙ্গিক। কবিগুরু এই গল্পের  মধ‍্যে দিয়ে তাঁর কন‍্যাদের জীবনের লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ  জানিয়েছেন।  অনেক দুঃখ শোক সহনের মধ‍্য দিয়ে তিনি জীবনের চরম সত‍্যকে খুজে পেয়ে
অনন্তকে উপলব্ধি  কারেছেন এখানেই রবীন্দ্রনাথ  অনন‍্য।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri