সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-November,2023 - Sunday ✍️ By- মমতা পাল চন্দ 235

আমাদের দুর্গাপূজা ও শিল্পকলা/মমতা পাল চন্দ

আমাদের দুর্গাপূজা ও শিল্পকলা
মমতা পাল চন্দ

পৃথিবীর যে কোনো শিল্প বা স্থাপত্য আসলে সে জাতি বা দেশের ইতিহাস - সংস্কৃতি - ঐতিহ্য বা ধর্মব্যবস্থা থেকেই মূলত সঞ্জাত। আর তার বর্তমান প্রায়োগিক দিক দিয়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে বিশেষ করে দুর্গাপুজোতে তার প্রতিফলন ও নব যে চেতনার  উন্মেষ তা যেন মানুষের শিল্প  মূল্যবোধকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এবং এর গভীর প্রভাব বিস্তার মানুষের চেতনাবোধ  - বিশেষ করে শৈল্পিক চিন্তা চেতনার এই ফাইন আর্টকে এক নতুন উচ্চতায় উচ্চ কোটির দর্শনে উন্নীত করেছে। আসলে চারুশিল্প , কারুশিল্প,চিত্রাঙ্কন, স্থাপত্য  ভাস্কর্য, মৃৎশিল্প ইত্যাদির এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এর মধ্যে। চিত্রশিল্প তো একজন মানুষের সৃষ্টি বা কীর্তি আর স্থাপত্য বহু যুগের বহু মানুষের কীর্তি। এ কালের দুর্গা মন্ডপগুলোতে যা ঘটে তা হল চিত্রশিল্প ও স্থাপত্য শিল্পের সমন্বয়ে - করস্পর্শে এক অভূতপূর্ব শৈল্পিক চেতনার নান্দনিক প্রকাশ। আর সত্যিই তো একটি সর্বাঙ্গীন সুন্দর আর্টের মধ্যেই তো রয়েছে সত্যিকার মন মাধুরীপূর্ণ সত্তার প্রকাশ।  দুর্গা পূজায় এই যে মাতৃমূর্তি ও  তার অনবদ্য সুষমা ফুটিয়ে তোলেন যারা তাদেরকে কেউ বলে চিত্রকর, কেউ বলে পটুয়া, অতি ভদ্রভাষায় মৃৎশিল্পী। অথচ তারা যে মূর্তি গড়েন তার মূল্যায়ন কোথায় হতো ? কোথায় হয় ? তাদের বারমাস্যায় অন্য কোনো দিন যাবো। আজ যাবো প্যান্ডেল হপিং এ।

যারা পুজো প্যান্ডেল তৈরি করেন বিভিন্ন থিমের পুজোর তাদের বলে চিত্র শিল্পী বা চিত্রকর। আর যারা  বিভিন্ন স্থাপত্য তৈরি করেন তাদের বলে রূপকার। যাই হোক না কেন সবাই তো আসলে শিল্প বা আর্টের উপস্থাপক।

এবার যদি বলা হয় নান্দনিক শিল্পের কথা । ধরা যাক যে শিল্প মানুষকে প্রশান্তি দেয় - যে শিল্প মানুষকে আকর্ষণ করে - তার মনলোভা  সৌন্দর্যের সামনে ধরে রাখতে পারে - যেখান থেকে কিছুতেই যখন মন যেতে চায় না তখন তো বলতেই হবে এ শিল্পের শৈল্পিক মূল্য অনস্বীকার্য। আসলে অন্তরাত্মার অন্তঃস্থল থেকে  বাহ: শব্দটি যে বস্তু বার করে আনতে পারে - অর্থাৎ যা কিনা হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং তাকে দেখবার জন্য মনকে ব্যাকুল অস্থির করে তোলে তাই  তো আশ্চর্য গভীরে পৌঁছবার আসল আন্তরিক টান যেখানে জন্ম নেয় কালজয়ী সৃষ্টি। যা মানুষের সৌন্দর্য্য চেতনাকে স্পর্শ করতে- জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। সেখানেই তো প্রশান্তি - পবিত্রতা। সত্য শিব আর সুন্দরের ত্রিবেণী সঙ্গম।
আর এই ত্রিবেণী সঙ্গমটা ঘটলো কোথায় ? না, মানুষের মন মন্দিরে। তাহলে তো বলতেই হয় আধুনিক কালের দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল বা স্থাপত্য জাতে কৃত্রিম হয়েও যে রূপের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তা অবশ্যই দর্শনার্থীর সৌন্দর্য্য চেতনার সপ্ত প্রদীপ যা হলো কিনা সত্য ,শক্তি, সৌন্দর্য্য, আত্মবিসর্জন, জীবন, নম্রতা, এবং স্মৃতির এক সম্মোহিত জগতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মানুষকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। শুধু কি সম্মোহন ? নাহ ওই কৃত্রিম স্থাপত্য একেবারে স্মৃতির কোনো এক সম্মোহিত অচিনপুরে নিয়ে হাজির করে - সেখানে হাওদা পড়া হাতি - রাজপ্রাসাদ - চিত্রপট - সুদূর  অতীতের কোনো  সৌন্দর্যে আত্মবিসর্জন হয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও মনে হয় থেকে আহা কি দেখলাম ! কোথায় এসেছি - সমস্ত চেতনা কয়েক মুহূর্তের জন্য বাস্তব রহিত হয়ে সত্য - শক্তি - আর সৌন্দর্যে অবগাহন করে। তাই সাবেকি বনেদিয়ানার বা কোনো মন্দিরের বা  রাজকীয় স্থাপত্যের পুজোগুলো সত্যিই যেন রিয়েল আর্টের থেকেও বেশি শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। কারণ ওই থার্মকল , খেজুর নারকেল পাতার রাজবাড়ী আপামর জনগণের মনে সত্যিই তার অন্ত: প্রকৃতি - নিজ সত্তা - সৌন্দর্য্যনুভূতিকে ছুঁয়ে যায়- স্পর্শ করে। তাও আবার তা বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন নেশার আপামর জনগনকে। একে কি বলা যাবে মানুষ যে  আখেরে অমৃতের পুত্র -  আর তার ভেতরে যে এক ঐশ্বরিক শক্তি আছে - সৌন্দর্য্য আছে তারই একরূপ আত্মদর্শন ? এই যে আর্টের প্রতি মানুষের এত উৎসারিত অনুরাগ এ কিসের সঙ্গে তুলনীয় ? ওই বলা হয় না আকাশ বাতাস আলো করে মর্তে এলেন মা, যাতে করে তার সন্তানেরা কয়টি দিন অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠে। এই সত্যটিকেই যেন পূর্ণতা দান করছে এ যুগের স্থাপত্য সৃষ্টিকারী পুজোগুলোর অনবদ্য রূপায়ণশৈলী।

আবার এই শৈল্পিকবোধ বাড়িয়ে তুলতে আলোকসজ্জা আর সঙ্গীতের সুর মূর্ছনা সে যে মাধুকরী সেও আর এক অক্ষয় সম্পদ। আবার মূর্তির মুখের আদল আর তার সাজসজ্জা , ডাগর নয়ন কি যে মনহরণ সে সন্তানেরা জানে। আর ওই ঢাকের ড্যাম কুরাকুর হৃদপিণ্ড ছোঁয়া মাদকতা। সঙ্গে সঙ্গীতের সমারোহ আর তার মোলায়েম পরিতৃপ্তি। এ যুগের পুজো প্যান্ডেল তাই শুধু আর্টের জন্যই আর্ট নয়। যেন সমুলেই আর্টের জন্য জীবন হয়ে যায়। আসলে মানুষের জীবন আশ্রয় করে যে আর্ট গড়ে ওঠে - প্রসার লাভ করে তা যদি মানুষকে আনন্দ দেয় - মানসিক সুখ দেয় - প্রশান্তি দেয় , খুশি করে, মানুষের ভেতরকার চেতনাকে প্রশস্ত করে এমন আর্টের চর্চা চলুক না মানুষের জীবনভর। আর তা যদি হয় পুজোকে কেন্দ্র করে তাহলে সে নিবেদন- সে সমর্পণ আর সে উপস্থাপন স্বর্গীয় হতে বাধ্য। মাত্র কয়েক দিনের শিল্পীর মন ও আত্মার সুনিপুণ নিবেদনের ফলেই তো গড়ে ওঠে এমন এক এক আশ্চর্য কাগজের স্থাপত্য। মাটি থেকে চূড়া পর্যন্ত এক সুষমায় মন্ডিত। এখানে আর একটু ভাবার বিষয় হলো মূল শিল্পীর সঙ্গে অসংখ্য কায়িক শ্রমিক তাদের মননিবেশ আর আত্মিক চেতনাও কি অবলীলায় শৈল্পিক হয়ে ওঠে। শিক্ষিত প্রশিক্ষিত মানুষের কথা তুলে রেখে যদি একটু ভাবে কেউ তাহলেই বুঝে যাবে প্রত্যেক মানুষই আসলে শিল্পের আঁকর - শিল্পের আঁধার। আর মানুষের যে জিনিস বা বোধ মানুষের আনন্দের অনুভূতি জাগায় তাই হলো শ্রেষ্ঠ আর্ট বা শিল্পকলা। তাই শিল্প সৃষ্টির সব চাইতে বড় উদেশ্য হলো শ্রোতা পাঠক দর্শক আনন্দ পেলেন কিনা সেটা যেমন দেখা তেমনি তা থেকে অনুপ্রাণিত - উৎসাহিত মানুষ যারা তৈরি হল তারা অবশ্যই নতুন সৃষ্টির মাইলফলক।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri