আবেগের দিনরাত /উত্তম চৌধুরী
আবেগের দিনরাত
উত্তম চৌধুরী
আবেগের অনেক সময়।সন্তানকে দেখতে দেখতে,কেবল লাইনের প্রোগ্রামে চোখ রাখতে রাখতে তার সময় পার হয়ে যায়।এখন সোমালির রান্নাঘরেও তার হাতের ছোঁয়া।নিজেই যেচে টুকিটাকি কাজে হাত লাগায়। অথচ কয়েক মাস আগেও এমন ছিল না।একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করত।পরীক্ষায় ফেল করেও স্থানীয় নেতার দৌলতে এবং লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি কিনেছিল সে।কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়ায় এখন আবেশ বিধ্বস্ত বেকার। শহরের সবাই সেটা জেনে গেছে।মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।ভাগ্যিস স্ত্রীর স্কুলের চাকরি রয়েছে,না হলে অথৈ জলে পড়ত সে।
সোমালি যথেষ্ট স্বাবলম্বী।নিজের কাজ নিজেই করে।তবে ছোট্ট মেয়েটিকে দেখভালের জন্য একজন মাসি রেখেছিল। আবেগের অনাগ্রহে তাকে ছাড়িয়ে দিতে হয়েছে।
অ্যাশট্রেতে সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে আবেশ যখন ডিসকভারি চ্যানেলে শার্কমেনের কার্যকলাপ দেখছিল সোমালি সামনে এসে বলল,প্লিজ---লন্ড্রি থেকে আমার শাড়িটা এনে দাও না,একদম সময় পাইনি গো,আর ভুলেও গিয়েছিলাম। তার স্বরে আহ্লাদের ঝরনা যেন। কিচেনের দিকে এগোতে এগোতে একটু টেনে টেনেই সোমালি বলল,সময় নেই কিন্ত। আমাকে আবার তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে।আজ স্কুলে স্পোর্টস।
আবেশ চোখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলল,শাড়ি!কোন্ শাড়ি!
---ওই যে হালকা ঘিয়ে রঙের শাড়িটা,পাড়ে গোলাপি লাইনিং।মনে নেই!তোমার খুব পছন্দের।
---সিওর!
---তাই তো বলছি।
পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতে পরতে,আয়নার সামনে চুল ব্রাশ করতে গিয়ে এবং ঘড়ি,মোবাইল, পার্স এসব অনুষঙ্গে আবেশের আরও কিছু সময় খরচ হল।মেয়ের কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে সে রাস্তায় নেমে যায়।শহরের যানগুলোকে সযত্নে অতিক্রম করে চলতে লাগল আবেশ। হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে চোখ এদিক ওদিক উড়ে যায়।গানবাড়ির ছাদে মেয়েদের পোশাক উড়ছে।সে দেখছে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে কামিন মহিলা।অজস্র সাইকেল,অজস্র মুনিশ।ব্যস্ত শহর। বাইরে বেরোতে তার যেন লজ্জাই হয়।সে যেন একা,অলস,কুঁড়ের বাদশা।শুয়ে-বসে পিঠ কেমন ব্যথা হচ্ছে না!সোমালির সময় কোথায়!আহা,যদি স্নেক ম্যাসাজ নেওয়া যেত।আহা,সেই বর্ণময় স্কুলের দিনগুলো,পিকনিক, পার্টি---টুকরো টুকরো ছবি হয়ে মনের পর্দায় নেচে ওঠে।
লন্ড্রিতে গিয়ে শাড়ির কথা বললে লোকটি বলল, সেই বিধবা মেয়েটি তো যার একটি বাচ্চা মেয়ে আছে!আবেশ প্রথমে ভ্যাবাচাকা খেয়ে পরে হাসতে হাসতে বলল, হ্যাঁ-হ্যাঁ,ওই মেয়েলোকটিই।কিন্ত সে বিধবা নয়।
---কী বলছেন!আমি চিনি না!এত বছর ধরে এখানে কাপড়-চোপড় দিয়ে যায়।
সোমালির শরীর বিবাহিত জীবনের কোনও স্মারক বহন করে না।ফলে লন্ড্রির লোকটির অমন ভাবা খুবই স্বাভাবিক। আবেশ বলল,তুমি তো আমাকে দেখছি মৃত বানিয়ে ছাড়বে!
---মানে!মেয়েটি আপনার ইস্তিরি।আপনি হাসবেন আছেন!
---তবে আর কী বলছি!
ধোবিওয়ালা জগন কাপড়ের ডাঁই থেকে সোমালির শাড়িটি বের করে এমনভাবে হাতে তুলে দিল যেন তার পালিত মেয়েটিকে আবেশের হাতে বহু যত্নে তুলে দিচ্ছে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴