আনন্দময় বনবীথি/কবিতা বণিক
আনন্দময় বনবীথি
কবিতা বণিক
----------------------
অরণ্য মাত্রেই বন্য বন্য হয় জানি। স্বাভাবিক ভাবে আনন্দময় বনভূমি স্বচক্ষে দেখা, স্পর্শ করা, যেমন আছে , অনুভবে তেমন সামান্য কিছু হৃদয় আঙিনায় কুড়িয়ে পাওয়া সেই মাধূর্য কেও সব কিছুকে আক্ষরিক শিল্পে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা আমার নেই।
আশ্চর্যজনকভাবে গাছেরা সব জীবন্ত! কি পেলব গাছেদের শরীর! মাখনের মত। সে কারণে হয়ত দর্শনে যেতে হলে আমাদের বেতের খাঁচার মধ্য দিয়েই যেতে হয়। আমরা জন্তুরা যেন গাছেদের বিরক্ত নাকরি। তাই এই ব্যবস্হা। এখানে সূর্যরশ্মিপায়ীরা প্রত্যেকেই সবুজ ওড়না মাথায় যেন নৃত্যরতা।
নীল আকাশ তার শ্যাম অঙ্গে প্রতিটি বৃক্ষকে জড়িয়ে যেন সোহাগ রত। এত সোহাগ স্পর্শে মাঝে মাঝে মনে হয় যেন নাচতে নাচতে সব মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষুনি শুরু হবে তাদের নাচ।
মনে হচ্ছিল চর্মচক্ষুদুটোকে উপড়ে ফেলি। তাহলেও তো অন্তর্দৃষ্টি খুলবে না। আহা! ডাল পালাগুলো মাটির দিকে ঝুঁকে কেমন সুন্দর তাদের নৃত্য ভঙ্গিমা! কান পেতে মঞ্জীরধ্বনি শোনার চেষ্টা করি।
মনে পড়ল --
" নৃত্যের তালে তালে, নটরাজ,... তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম। "
খাঁচা থেকে বেরিয়ে যখন খোলা একটা ছোট চাতালে আমাদের নিয়ে এল তখন দু বাহু তুলে সবাই আনন্দে নাচছে গাইছে। অনেকে হাতে হাত ধরেও ঘুরে ঘুরে নাচছে গাইছে। সবাই আনন্দ রসে টইটম্বুর। খুব ছোট দু/ তিনটে শিশু তাদেরও একই ভাব দেখে অবাক হই। মনে হল এই যে নির্ভেজাল খাঁটি আনন্দ যা কেউ কাউকে দিতে পারে না। অন্তরের ভিতরের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা এমন আনন্দরস আস্বাদন করে শিশু তিনটিও কত আনন্দিত। মনে হল কোথায় পেল এই আনন্দ? কি ছিল চলার পথে যে এত আনন্দ সবার! উপনিষদের লাইন ভেসে উঠল মনের আয়নায়। -+" রসো বৈ সঃ। হ্যেবায় লব্দ্ধানন্দী ভবতি। "
অনন্ত আকাশ তাঁর প্রেমে সবাইকে জড়িয়ে রেখেছেন। তাইতো জীবন প্রবাহ চলছে। সব কিছু গতি পাচ্ছে। কোন কিছু থমকে নেই। অনন্ত আকাশই এই আনন্দ স্বরূপ। সে কারণে আমরাও সুখ স্বরূপ।
আনন্দ রসে টইটম্বুর হয়ে বেরিয়ে এলাম। সন্ধ্যের আগেই এই বনে ঢোকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ কোন ভাগ্যবানেও সেখানে তার ভাগ্যের চাকা খুলতে পারেনা। সুযোগ পেলে আবারও আসার ইচ্ছে পোষণ করে ফিরলাম।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴