আত্ম - দৈন্য - ব্রহ্ম - সত্য - আনন্দ/মনীষিতা নন্দী
আত্ম - দৈন্য - ব্রহ্ম - সত্য - আনন্দ
কাগজ কলম গন্ধ নিয়ে আজ বহুদিন পর তিলোত্তমা - ঘরে এই মন। নিজের চিলতে কোণটুকু জুড়ে নিংড়ে নিচ্ছে শুষে নিচ্ছে সবটুকু রস। এ ক'দিনে তানপুরাটায় ধুলোর পাহাড় জমেছে। পরতে পরতে বেসুরো বাজছে তারগুলো। যেন কতদিনকার অযত্ন - অভিমানের আসুরিক জলোচ্ছ্বাস। মুখের রক্ত তুলে শ্রমিক জীবন বেঁচে থাকে রাত বিছানা। ল্যাপটপ স্ক্রীন জুড়ে অক্ষর কথা মালা - ডিজিট্যাল রঙ ব্যবহারের বাহারে, দেখন - শোভার চাতুর্য্যে, শেষ ভোরে, ঘুমহীন সূর্যোদয়ে, চোখ দুটো ফুলে ফেঁপে ওঠে। রক্তাভ জল ফেলে। ল্যাবরেটরীর কেমিক্যালস ঘাঁটাঘাঁটি সাথে ট্রায়াল - এররে নিমেষে নিমেষে কেটে যায় সকাল - বিকেল - সন্ধ্যে। অর্ধসমাপ্ত থিসিসটা লোভীর মত চেয়ে থাকে। আরও আরও আরও চাই তার। তথ্যের খিদে বেসামাল করে সব বজ্রনির্ঘোষ। মাথা থেকে উপচে পড়ে ঘাম ক্লেদ। তবু শূণ্য এ বুক। শূণ্যতা গিলে খায় ভাঁড়ার ঘরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কীট পতঙ্গের ঘরবাড়ী ছাড়া আর বিশেষ কিছুই মেলেনা সেখানে। স্নানের ঘরে ঢুকতে ভয় হয়। খিদের ভয়।দিনশেষে অফিসিয়ালসের পাথর দৃষ্টি আর নিরাশার শব্দচয়ন ব্যতিরেকে অন্যকিছু খুঁজতে যাওয়াই বাতুলতা। ওপরমহল থেকে শীৎকার ভেসে আসে। বুকে বাজে "শূণ্য হাতে ফিরি হে নাথ পথে পথে..... চির ভিখারী হৃদি মম নিশিদিন ......"। এর ঠিক পরেই কর্ণ বিদারী বুকের এ ফোঁড় ও ফোঁড়। বলা হল, আমার শূণ্য হাতের স্রষ্টা আর কেউ নন, স্বয়ং আমিই। এ পৃথিবীর বুকে জাগতিক নিঃশ্বাসটুকুর সাথে আমার যেমন কোনো সম্পর্কও নেই, তেমন, আমার না আছে কোনো প্রয়োজন কিংবা প্রয়োজনের অনুভব। একটু পরেই পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান পরিবেশনের ডাক পড়বে। উদ্বোধনী সুরে ভরিয়ে দিতে হ'বে সবটুকু। জাগতিক হিসেব নিকেশের ভারে লক্ষ লক্ষ ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে মুখোমুখি হ'লাম "ওই মহামানবের"। "দিকে দিকে" বিপুল রোমাঞ্চে আমার কন্ঠের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম অনবরত, আক্ষরিকেই, সকল নিঃশ্বাসের সবটুকু পরিসরে। গেয়ে চলেছি চোখ বুজে........বিপুল বেদনার ভৈরবী সুর....
"লক্ষ্মী যখন আসবে, তখন কোথায় তারে দিবিরে ঠাঁই?
দ্যাখ রে চেয়ে আপন পানে পদ্মটি নাই।
ফিরছে কেঁদে প্রভাত বাতাস, আলোক যে তার ম্লান হতাশ
মুখে চেয়ে আকাশ তোরে, শুধায় আজি নীরবে তাই
পদ্মটি নাই ।
কত গোপন আশা নিয়ে, কোন্ সে গহন রাত্রি শেষে
অগাধ জলের তলা হ'তে, কমলকুঁড়ি উঠল ভেসে,
হ'লনা তার ফুটে ওঠা, কখন ভেঙে পড়ল বোঁটা
মর্ত্য কাছে স্বর্গ যা চায়, সেই মাধুরী কোথা রে পাই?
পদ্মটি নাই ।"
কে যেন এসে পরম আদরে মমত্বে আগলে নিলেন সেই শূণ্য দু'হাত। "তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে" তুমি নেই??আমার বুকে একনাগাড়ে বেজে চলে তোমার "সকল খেলা"। এ এক অভূতপূর্ব পরিশোধন। "অমৃতের সাগরে আমি যাব".... " তৃষ্ণা জ্বলিছে মোর প্রাণে"......
চোখের জলে ভেসে যেতে থাকে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ। কানায় কানায় ভরে ওঠে বসুমাতা, সত্য-জলের খরস্রোতে। তোমায় পদ্মাসনে বরণ করতে না পারি, তবু, কুঁড়িটুকু হয়ে যেন ঋজু থাকি আজীবন, কর্মযোগে, আনন্দ গানে, ভাবীকালের বুকে, সত্যের সন্ধানে.... "জয় জয় সত্যের জয়".... " জয় জয় আনন্দময়"।।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴