আ মরি বাংলা ভাষা/চিত্রা পাল
আ মরি বাংলা ভাষা
চিত্রা পাল
মোদের গরব মোদের আশা/ আমরি বাংলা ভাষা। সত্যি এর কোন তুলনা নেই।আমার মাতৃভাষা বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের সবচেয়ে মধুর ভাষা এমনও শুনেছি। মাগো বলে যখন ডাকি সে মা জননীকেই ডাকি,বা দেশমাতৃকাকেই ডাকি, বা জগত্জননীকেই ডাকি একেবারে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকেই সে ডাক, সে আহ্বান আসে, মায়ের কাছে সমর্পিত হয়ে। এমন মধুর ভাষা দুটি দেশের মাতৃভাষা। একটি স্বাধীন দেশের সরকারি ভাষাও। সে তো সহজে হয়নি। কত প্রাণের বিনিময়ে কত ত্যাগের বিনিময়ে হয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা আমাদের মাতৃভাষার জন্য এক স্বাধীন দেশের জন্ম হল। আর রক্তাক্ত ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি ঘোষিত হল সারা পৃথিবীর সবার মাতৃভাষা দিবসের সম্মান রূপে।
আমাদের এই বাংলা ভাষায় কি নেই? সব আছে। আছে ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের ইতিহাস, আছে তার বিপুল সাহিত্যের ভান্ডার, আছে কত ধরণের গান, আছে অসংখ্য পত্র পত্রিকা, নাটক,যাত্রা, লোক সাহিত্য, লোকগীতি। আমাদের নাট্য সম্ভার রীতিমত সম্পন্ন। কি নেই সেখানে, সব ধরণের নাটকে পূর্ণ সে সম্ভার। আমাদের ভাষার চলচ্চিত্র দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান ও স্বীকৃতির অধিকারী।
বাংলা ভাষা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সমানভাবে চলিত ত্রিপুরা আসাম, আন্দামান এসব স্থানেও। সুদূর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অফ সিয়েরা লিওনে ২০০২ সাল থেকে বাংলা ভাষা অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা্র স্বীকৃতি পায়। এছাড়া পাঁচটি ভিন দেশি ও ভিনভাষী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা পড়ানো হয়।
আমাদের দেশেও বরাক উপত্যকায় ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দানের জন্য প্রবল আন্দোলন হয়, আর এগারো জন বাঙালি সে আন্দোলনে মৃত্যু বরণ করে।
বিশ্বকবি আজীবন বাংলা ভাষার জন্য লড়ে গেছেন। ১৯৩৭ সালে তিনি প্রথাগতভাবে ইংরেজীতে ভাষন না দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এর আগে কখনও বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান হয়নি। মাতৃভাষা নিয়ে এই আবেগ অবশ্য জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারেই বহতা ছিলো। এই তো কিছুদিন আগে ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের জাতীয় সংগীত জন গণ মন হলো পৃথিবীর সেরা জাতীয় সংগীত।
এক জাতির পরিচয় তার ভাষা সংস্কৃতি দিয়ে। সেখানে আছে বাঙালির নিজস্বতা। যে নিজস্বতায় বাঙালী পায় তার নিজের ভিত্তি। সেখানে আজও বাঙালী উজ্জ্বল, আজও তার দৃঢ় অবস্থিতি। বাঙলা ভাষা বহু বিবর্তনের পরে আজ এখানে এসেছে। কিন্তু বাঙলা ভাষাকে বাঙলাদেশ যে মর্যাদা যে স্বকীয়তা দিয়েছে সেইটা এখানে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। বাঙলা ভাষা সেই ক্ষমতায় উজ্জীবিত হোক এই আমাদের বাঙালি হিসেবে চাওয়া।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴