সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
16-April,2023 - Sunday ✍️ By- সুমনা দত্ত ঘোষ 376

অরণ্যমাতৃকা/সুমনা দত্ত

অরণ্যমাতৃকা 
সুমনা দত্ত 
----------------

সত্তর ঊর্ধ্ব হুজুরবা (ঠাকুরদা)-র শরীরটা আজ ভালো নেই, রাহুল তাই একাই গরুর পাল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দুধ বিক্রি করাই রাহুলদের পারিবারিক ব্যবসা। রাহুলদের বাড়ি বনবস্তিতে তাই পার্শ্ববর্তী জলঢাকা নদীর চরে অথবা আম্বাখোলার পাশে গরুগুলো চরাতে নিয়ে যায়। অন্যান্য দিন স্কুল থাকে  রবিবার  ছুটির দিনে হুজুরবার সাথে রাহুলও যায়। রাহুলের ভীষণ ভালো লাগে। হুজুরবা ওকে গাছ চেনান, ফুল চেনান, পাখির ডাক শুনে বলে দেন কি পাখি। কত যে গল্প শোনান বনবস্তির বাসিন্দাদের সাথে জঙ্গলের নিবিড় বন্ধুত্বের গল্প। 
   কচি কচি সবুজ ঘাস পেয়ে গরুর পাল আপন মনেই খেয়ে চলে, কেউ কেউ পরম সুখে জাবর কাটে। সদ্য মা হারা বাছুর লালির মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দেয় রাহুল। আম্বাখোলার জলে পাথর ছুঁড়ে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ তোলে। কোমরের গামছা খুলে মাছ ধরার বিফল চেষ্টা করে। আম্বাখোলার পাশের সামান্য হালকা জঙ্গলটায় সাদা নীল হলুদ কত জঙ্গলীফুল ফুটে আছে ঘুরে ঘুরে সে ফুল তোলে।  শুকনো পাতার বিছানায় শুয়ে পাতাদের মর্মর ধ্বনি শোনে কান পেতে, শোনে পাখিদের কলকাকলি। গাছের পাতা ভেদ করে খানিকটা সূর্যের রশ্মি রাহুলের মুখে এসে পড়ে।  রাহুল দেখে বড় বড় পিঁপড়েরা দল বেঁধে কোথায় যেন চলছে , হয়ত কোথাও ভোজ আছে। ভেবে আপন মনেই হাসে রাহুল। সন্ধ্যা নেমে আসছে এবার ফিরতে হবে। গরুদের নাম ধরে ডাকতে থাকে রাহুল, একে একে অভ্যাস মতোই গরুর পাল বাড়ির দিকে রওনা দেয় ।
                            রাহুল হঠাৎই লক্ষ্য করে লালি ছুটতে ছুটতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে। রাহুল জানে ঐ জঙ্গলে যাওয়া নিষেধ, অনেক হিংস্র প্রাণীর বাস। তবু রাহুল লালিকে ডাকতে ডাকতে ওর পিছু পিছু ঢুকে পড়ে গভীর জঙ্গলে। অন্ধকার ততক্ষণে বেশ ঘন হয়েছে। এখানে দিনের বেলাও দীর্ঘ গাছের সারি ভেদ করে সূর্যালোক খুব একটা এসে পৌঁছায় না। বানরগুলো লাফালাফি করছে, যেন ওদের রাজত্বে অনাহূত কেউ ঢুকে পড়েছে। মাথার পাশ দিয়ে জংলি পোকারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, নাকে মুখে এসে লাগছে। শুকনো পাতায় খসখস আওয়াজ , মনে হচ্ছে পায়ের উপর দিয়ে কিছু একটা চলে গেল। রাহুল প্রাণপণে চিৎকার করে "লা.....লি , হুজুরবা......,আমা........" নিজের ‌চিৎকার জঙ্গলে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসে। এদিক ওদিক ছুটতে থাকে, গভীর অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলে রাহুল কাঁদতে থাকে। ক্রমে রাত বাড়ে,  রাহুল দেখে একদল হাতি তাকে ঘিরে ধরে চিৎকার করছে। সে জানে বস্তিতে ঢুকে হাতিরা ধান খেয়ে যায়, মানুষ মারার ঘটনাও ঘটে। হুজুরবা অবশ্য রাহুলকে বলেছেন খাবারের খোঁজেই ওরা বস্তিতে ঢোকে। ওদের কেউ কিছু না করলে ওরাও কিছু করে না। কিন্তু সে বার হাতির এক শাবক বনবস্তিতে হারিয়ে গেলে ঘর ভেঙে কেমন তান্ডব চালায় হাতির দল। তাই চোখের সামনে গভীর জঙ্গলে হাতির পুরো দল দেখে রাহুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
        সন্ধেয় গরুর পাল বাড়ি ফেরে। খানিক পরে ফিরে আসে লালিও। শুধু বাড়ি ফেরে না রাহুল! অবশেষে বন বস্তির সকলে মশাল টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ওদের খুঁজতে। খবর যায় ওয়াইল্ড লাইফেও। আম্বা খোলার পাড় জুড়ে চলে তোলপাড় খোঁজ। ফরেস্ট গার্ডেরা জঙ্গলে কিছুটা যেতেই দেখতে পেল রাহুলের গামছাটা পড়ে থাকতে। আরো খানিকটা যেতেই দেখল পড়ে আছে রাহুলের টুপি, আর বেশ কিছু বুনোফুল! জঙ্গল ক্রমশ গভীর হয়ে আসছে। কাছেই ক্ষিপ্ত হাতিদের ডাক শোনা যাচ্ছে আর এগোবার পথ নেই । মনে হচ্ছে যেন হাতিদের জলসা চলছে। অগত্যা ফিরতে হল। এই গভীর জঙ্গলে রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া কোনও মানুষ জ্যান্ত ফিরতে পারবে না এটা উপস্থিত সকলেই বুঝতে পেরেছিল। তাই কান্নার রোল ওঠে গোটা বনবস্তি জুড়ে।
         পরদিন ভোরের আলো ফুটতেই নিত্য দিনের মতো বনবস্তির একদল মানুষ বনদপ্তরের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চুপিসারে জ্বালানির জন্য জঙ্গলের শুকনো কাঠ খুঁজতে ঢুকে পড়ে। জ্বালানির কাঠ খুঁজতে খুঁজতে খানিক দূর থেকে এরা দেখতে পায়  দশ বারোটি একটি হাতির দল  চিৎকার করছে।  ভয় পেয়ে ফিরেই আসছিল হঠাৎ চোখে পড়ে একটা বাচ্চা মাটিতে শুয়ে আছে  আর তাকে ঘিরে ধরে চিৎকার করছে হাতির দলটি।  বেগতিক দেখে ঊর্ধ্ব শ্বাসে জঙ্গলের বাইরের দিকে ছুটতে থাকে ওরা।  জঙ্গলেই  দেখা হয়ে যায়  দিনের আলোয় রাহুলকে খুঁজতে আসা  ফরেস্ট গার্ডদের সঙ্গে।  ওনাদের সমস্ত ঘটনা জানালে  তারা রাহুলের হুজুরবাকে নিয়ে হাজির হন সেখানে।  বাজি পটকা ফাটিয়ে  দলটিকে তাড়াবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাতির দলটি খানিকটা দূরে গিয়ে  দাঁড়িয়ে পড়ে।  ঠিক যেন মানুষের গতিবিধির উপরে নজর রাখছে। গার্ডরা দৌড়ে রাহুলের কাছে যায়।  "রাহুল রাহুল" বলে ডাকতেই ধড়মড়িয়ে  ওঠে রাহুল।  দেখে মনে হল যেন  পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিল এতক্ষণ ! সারা রাত যে কি কান্ডটাই না ওকে ঘিরে হয়েছে সে যেন কিছুই জানে না। গার্ডদের সঙ্গে থাকা  রাহুলের হাজুরবা  রাহুলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রাহুল বলে - "কাঁদছ কেন  আমি তো ঠিক আছি!  কাল রাতে জঙ্গলে পথ খুঁজে পাইনি। হাতি দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরতে দেখি  ওরা চারিদিকে আমায় ঘিরে রেখেছে কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কিছুই করছে না। শুধু মাঝে মাঝে চিৎকার করে যেন সাবধান করছিল সকলকে যাতে কেউ আমার কাছে না আসে। অনেকক্ষণ বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না।" হুজুরবা  মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণামের ভঙ্গিতে বলেন,  "জয় মহাকাল বাবা"!  রাহুল প্রাণভরে অরণ্যের বুনো গন্ধ নেয় । এই গন্ধটা তার বড্ড প্রিয় মায়ের গায়ের গন্ধ যেন! হুজুরবা বলেছিলেন এই জঙ্গল ওদের মায়ের মতো।
          গার্ডেরা  রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসছিল জঙ্গল থেকে, দূরে তখনও হাতির দল দাঁড়িয়ে।  রাহুল ওদের দিকে তাকিয়ে  হাত নাড়ে  বিদায় জানানোর ভঙ্গিতে।  হাতির দলও একসাথে সুর তুলে চিৎকার করে, তারপর আরো গভীর জঙ্গলের দিকে এগিয়ে চলে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri