সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-April,2023 - Sunday ✍️ By- বেলা দে 321

অরণ্য মোড়ানো আমার মেয়েবেলা /বেলা দে

অরণ্য মোড়ানো আমার মেয়েবেলা 
বেলা দে
-------------------------------------------

পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে দিনের সূর্য ঢাকা পড়ে থেকেছে জঙ্গল মলাটে। হিংস্র শ্বাপদসংকুল প্রাণের স্পন্দন সারাদিন। তাদের সাথেই আমাদের সহবাস। সাপ, বেজি, ময়ুর, শেয়াল, গিরগিটি ...  দিনের উঠোনেই ওদের হুটোপুটি। বিদ্যুৎহীন মিশকালো আঁধারে শক্তিমান চিতাবাঘের দৌরাত্ম্যে প্রায়শই রাতজাগা। টেনে নিয়ে গেছে আমাদের লালিগরুর বাছুর, ধলি ছাগলের ছানা, হাসমুরগিও বাদ যেত না।রাতের ভয়ংকরে সজাগ পাহারায় আমার বাবা মশাল হাতে আর দাদারা  টিনের বাজনায়। সবার মিলিত আর্তচিৎকারে কোনো দিন শিকার ছেড়ে চম্পট, সকাল হলে বোবা প্রাণীদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে খুব কাঁদতাম, ওরা যে আমার ছেলেবেলার খেলার সাথি ছিল সর্বক্ষণের। যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা গুল্মলতা থেকে মহীরুহ আমাদের ফলফলাদি গাছের সাথে প্রতিবেশীর মতো  বেড়ে উঠেছে। শ্যাওড়া,  জিগা ... সব প্রতিবেশীদের পরস্পরের সীমানাচিহ্ন। মায়ের হেঁশেলঘরের আঁশটে বেড়ার ফাঁক দিয়ে টেনে নিয়ে গেছে পায়ের থাবায়। রাতের আঁধারে লেপার্ডের উঠোনময় অবাধ পায়চারী, ওদের নিয়েই সেদিন গঞ্জের গার্হস্থ্য জীবনযাপন। বৃটিশ ছেড়েছে দেশ স্বাধীনতার পরবর্তী পর্বে কর্মসংস্থান মানে চা বাগান নাহয় স্কুলমাষ্টার। আমার মামারা কলকাতা থেকে এদেশে এসেছে  চা বাগিচায় কাজ করতে সে রুজিরোজগারেই হোক অথবা জঙ্গল ভালোবেসে। শুনেছি মনমাতাল সুগন্ধি চা পাতার মোহ ওদের আকর্ষণে  টেনে নিয়ে এসেছে। চালসায় মামীর বাপের বাড়ি আরও দুই মামা ছিলেন মোরাঘাট চা বাগানে মাসিমেসো তেলিপাড়া। পরবর্তীতে আমার তিন বৌদি বাগিচাকন্যা এক বৌদির বাপের থেকে আরেক বৌদির বাপের বাড়িতে চলে গেছি পায়ে হেঁটে গা ছমছমে পরিবেশে নিবিড় ঘন জঙ্গল পেরিয়ে একেবারে ম্যারাথন হাঁটার গতি নিয়ে ভয় পায়ে নিশ্চুপ মুখ বুজে। এক ভয়ংকর দিনের কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠে প্রাণ, রামঝোরা চা বাগানে বৌদির দিদির ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে নিমন্ত্রিত অতিথিরা সব চলে গেলে আমরা বাড়ির লোক খেতে  বসব তার ব্যবস্থা হচ্ছে সে মুহুর্তে একপাল হাতি এসে ঘিরে ফেলেছে কোয়ার্টার, পনের থেকে প্রায় বিশটার মতো। সে কি ভয়াবহ অবস্থা ওদের সম্মিলিত হুঙ্কারে গনেশ বাবাজীর স্মরণ করছি সবাই, কাজের লোক মংরা একছুটে শোবার ঘরে বাসনমাজা ছেড়ে। দলবেঁধে মরমর শব্দে ভাঙছে কাঠালগাছ, কলাগাছ। মাছ-মাংসের তীব্র গন্ধ পেয়ে ওরা হামলে পড়েছে সরাসরি উঠোনের মাঝখানে, কাঁপছে আমাদের বুক  কাঁদছে ছোটোরা। দরজাখানা ঠেলে দিতেই খাটসহ ভারী জিনিসপত্র দরজায় ঠেলে আমরা  তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছি। এরমধ্যেই মুন্ডাবস্তির লোকজন  মশাল জ্বেলে টিন বাজিয়ে হৈচৈ করে সামনে আসতেই তারা অন্য রাস্তা ধরে চম্পট। তবুও প্রচন্ড আতঙ্কে সে রাত জেগে পরের দিন রওনা হয়েও রাস্তায় ভয় কাটছে না এই বুঝি বেরিয়ে আসবে হুস করে বাবাজী এপাশ ওপাশ থেকে কারণ সর্বত্রই তো সেসময় আরণ্যক জীবন। 
তবুও কত আনন্দের জীবন প্রাণে প্রাণে মিলন, ফুরসত পেলেই ওই এক অনুভূতি চলো বিশুদ্ধ ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে আসি শান্তিটুকু ভরে রাখি বুকের খাঁচায়। এখন সংসার যাপনের বাস্তবতায় পুড়ে যাওয়া ছোট্ট জগত থেমে আছে আমার একফালি জানালায়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri