সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-April,2023 - Sunday ✍️ By- মধুমিতা দে রায় 516

অরণ্য/মধুমিতা দে রায়

অরণ্য
মধুমিতা দে রায়
-------------------

ডুয়ার্সের বাসিন্দা হিসেবে সবচেয়ে বড় পাওনা হলো ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চাইলেই পৌঁছে যাওয়া যায় জঙ্গলে বা পাহাড়ে। ঘরে বসে একটু একঘেঁয়ে মনে হল, তো চলো বেরিয়ে পড়ি মুক্তির স্বাদ নিতে, ঘন নীল আকাশের নীচে সবুজের সামিয়ানায়, খোলা হাওয়ায়, প্রাণ ভরে স্বস্তির শ্বাস নিতে। কখনো লাটাগুড়ি, চাপড়ামারি, রামশাই। আর যদি জলশহরের বাইরে একরাত্রি যাপনের ইচ্ছে থাকে তো চিলাপাতা, জলদাপাড়া বা বক্সা জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়া। ভাগ্যবান হলে দেখা মিলতে পারে হাতি, বাইসন, হরিণের। এমন সৌভাগ্য হয়েছে বহুবার, কখনো গাড়ির সামনে দিয়ে লাফিয়ে চলে গেছে হরিণ, কখনো বাইসনের উঁকিঝুঁকি দেখেছি জঙ্গলের ভেতর থেকে, আবার কখনো হাতিরপালের ধুলোস্নান। আর গরুমারা, চাপড়ামারি বা জলদাপাড়ার বনবাংলোর সামনে তারা যেন স্বেচ্ছায় সাক্ষাত করতেই আসে। বঙ্গের আর কোথাও এমন কুয়াশা জড়ানো পাহাড়-নদী-জঙ্গল-চা বাগিচার সমন্বয় দেখা যায় কী? এ শুধু ডুয়ার্স বাসীকেই প্রকৃতির অকৃপণ উপহার। বেঁচে থাকবার প্রয়োজনের চেয়ে আরও কিছু বেশিমাত্রায় অক্সিজেন প্রাণ ভরে নিয়ে ফিরে এসে আবার দৈনন্দিন কাজের জগতে ফেরা। চোখের আরাম, মনের প্রশান্তি। 

   ডুয়ার্সের চা বলয়ের এই কন্যাকে কর্মসূত্রে যেতে হল আমের শহরে। প্রতিনিয়ত একঘেঁয়ে কাজে, আর নিজের শহর থেকে দূরে গিয়ে জলশহরের প্রতি অন্তরের টান যে কতটা তা উপলব্ধি করেছি। রুক্ষ-তপ্ত সেই অঞ্চলে, আমার অতি আপন এই জঙ্গল, নদী, চা-বাগিচার সৌন্দর্যের অভাববোধ করেছি। দু-তিন মাসের ব্যবধানে যখনই আসবার সুযোগ পেয়েছি নিজের শহরে, এসেই ছুটে গেছি ঘর থেকে অনতিদূরে লাটাগুড়ির জঙ্গলে। সবুজের সমারোহে সামিল হয়ে আবারও মন-প্রাণ উজ্জীবিত করে, বেঁচে থাকবার রসদ নিয়ে ফিরে গেছি কর্মজগতে।

   এমনিই একবার জলশহরে ফিরে এসে মন বড় উৎসুক হল কখন লাটাগুড়ি বনপথে যেতে পারব। সময় হল, গাড়ি ছুটল লাটাগুড়ির উদ্দেশ্যে, একরাশ আনন্দ বুকে নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশমুখের রেলগুমটি পেরিয়ে বনাঞ্চলে প্রবেশ করতেই চমকে উঠলাম! রাস্তার দুপাশে শুইয়ে রাখা হয়েছে বহু সুবিশাল বৃক্ষরাজীর শবদেহ। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ডাল পাতা। রাস্তার দুপাশের অরণ্যের অনেকটা অংশ কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। মুচড়ে উঠল ভেতরটা, নিরীহ প্রাণের এই মারণযজ্ঞ দেখে। শোনা গেল রেলপথের উপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্দেশ্যেই এই কর্মযজ্ঞ। বেদনাতুর মনে ফিরে এসেছিলাম সেদিন। গুটিকয় ট্রেন চলাচলের জন্য এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডের আয়োজন কেন তা তখন বুঝতে পারিনি, এখন, এতোদিন পরেও পারিনা। বিশেষ উপকারীতা নজরে পড়েনি। বর্তমানে শুনতে পাচ্ছি লাটাগুড়িতে তৈরী হচ্ছে অরণ্যআবাস। আবার চলবে গাছের ধ্বংসলীলা, সকলের চোখের সামনে দিয়েই। কেমন করে অনুমতি মিলেছে জানা নেই। প্রকৃতি প্রেমী স্বেচ্ছাসেবীদের নিস্পৃহতার কারনইবা কী তাও বুঝিনি। সরকার বাহাদুরেরা বলেন গাছ লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর কথা, অপরদিকে দেখা যাচ্ছে যাঁরা রক্ষক তাঁরাই ভক্ষক। 

   মনুষ্য সমাজ অগ্রসর হচ্ছে, বাসস্থান অপরিহার্য হয়ে পড়ছে, তাই যথেচ্ছভাবে অরণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতিও প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে, ভূমণ্ডলের উষ্ণতাবৃদ্ধি তার অন্যতম উদাহরণ। প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন 'চিপকো আন্দোলন' এর মতো আরেকটা প্রতিবাদ। নইলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের হাতে আমরা তুলে দিতে অক্ষম হব সুস্থ সুন্দর নির্মল এক পৃথিবী।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri