অপেক্ষার ভোর/বেলা দে
অপেক্ষার ভোর
বেলা দে
আলো না ফোটা ভোরে নি:শব্দ নৈসর্গিক প্রকৃতি জুড়ে সমস্ত ভাললাগা ছড়িয়ে দিতে দিতে হাঁটছেন সরলদন্ডী পথে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চন্ডীদাস বাগচি। গঙ্গা বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, পিতৃতর্পণ করতে চলেছেন, এসে আবার মহালয়া শুনতে হবে। বছরের এই দিনটি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন। মহালয়ার ভোর অনাবিল প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন তর্পণে, পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন ফলে প্রতি বছর পিতার জন্য এই কাজটা তিনিই করে থাকেন এদিকে মহালয়ার সময় প্রায় হয়ে এলো না : আর সাতপাঁচ ভাবা নয় তুরন্ত হাঁটা দিলেন তিনি। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে ঝরবে শারদীয় মায়ের আবাহন, জগন্মাতার আবাহন বার্তা নিয়ে শাস্বত সনাতনী সুরের রাগে ঝংকৃত হবে হৃদয়তন্ত্রী। এ নিবেদন বিবর্ণ করা যায় না কোনওভাবেই। এমনিতেই এই মাসটা এক আকাশ জ্যোৎস্না মাখিয়ে রাখে দুই প্রবীণ দম্পতির মনে, পুত্র ঐহিক আসে লন্ডন থেকে সপরিবারে, দিল্লি থেকে আসে সকন্যা শ্রীময়ী সেও এবারে আসতে পারবে না জানিয়েছে, ওদের আবাসনের দুর্গাপূজার দায়িত্ব পড়েছে এবার তার উপর।
শুধু নাতনীটার জন্য মনটা একটু খচখচ করছে, কত বড়টা যেন হয়ে গেছে। খোকা মাসখানেক আগে ফোনে জানিয়েছিল সে এবার আসছে গত পূজায় আসতে পারেনি ছুটির কারণে। এবারেও নাকি বস গাইগুই করছে ছুটির ব্যাপারে, মহালয়ার দিন বিস্তারিত জানাবে বলেছে।
মহালয়ার সকালে ফোন করার কথা সে তাগিদেই তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরা। সহধর্মিণী সুলগ্না তো আবার কানে খাটো রিং হয়তো ঠিকঠাক শুনতেই পেল না।
কয়েকদিন থেকে অদ্ভুত সুখানুভূতির ভাবতরঙ্গ বইছিল প্রবীণ মানুষটার ভিতরে। সুলগ্না তো কেবল কাজের জগতে চড়কিপাক খায়, এছাড়া হার্টের অসুখের মানুষটাকে অনেক ব্যাপার আড়াল করতে অন্তরালে ঢেকে রাখে অস্থিরতা কমাতে, একাকীত্ব যে ওদের নিত্যসঙ্গী সে অভ্যাস করেও নিয়েছে যাপনের সাথে। কদিন থেকে চন্ডীবাবু বলেই চলেছে কচি কচি হাত পা নেড়ে খোকার ছেলে ঘরময় চেঁচিয়ে বেড়াবে কলধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে আমার ঘর এই না হলে সংসার বলো তুমি।
ব্যালকনিতে আরামকেদারায় বসে মহালয়া শুনতে শুনতে উৎকন্ঠায় কান খাড়া করে রেখেছে কখন খোকার ফোন আসে। ভাবতে ভাবতেই সজোর হাঁক ল্যান্ডফোন, "বাবা ও বাবা শুনতে পাচ্ছ", "হ্যাঁ রে কবে আসবি, আমি তোর জন্য নলেনগুড় এনে রেখেছি আর মা নাড়ু বানিয়েছে" "না বাবা এবারেও আর যাওয়া হল না, ছুটি নেই গো"
হঠাৎ করে একটা বাজ পড়ার মস্ত আওয়াজ, টেবিলের নিচে ঝুলছে রিসিভার সুলগ্না চেঁচিয়ে ওঠে, তখনও ইথার তরঙ্গে ভেসে চলেছে "বাবা শুনছো তুমি কষ্ট পেয়ো না আমি সামনের বার-- কী হল বাবা ও বাবা--"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴