সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

অপাঙক্তেয়/অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

অপাঙক্তেয়
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

বয়সের গাছ পাথর শরীর বেয়ে ঝুড়ি হয়ে নেমে এলে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে নাম যদি হয় ঠেসমূল, মানুষের গোত্রে সে তখন শুক্রা ওরাওঁ,জঙ্গল লাগোয়া বনবস্তির এককালের একচ্ছত্র সর্দার। তার মুখের বলিরেখায় সময় আঁচড় রেখে যায় অনেক অজানা গল্পের তহবিল সাজিয়ে। সে গল্পে স্মৃতিচারণ থাকে, আক্ষেপ থাকে, সেসঙ্গে একটা প্রচন্ড ক্ষোভ জঙ্গলে ঘুরতে আসা অনাহুতদের প্রতি। সাক্ষাতে অভ্যর্থনা তাই শুরুই হবে কিছু ব-কারন্ত, চ-কারন্ত শব্দে। অ্যাসিড টেস্টে উতরে গেলে সেই শহুরে বাবু-ই আবার তখন শুক্রার চোখে বিশ্বস্ত 'মরদ'। এই বিবর্তনে সময় কতটা গড়াবে তা পুরোটাই নির্ভর করে বাবুর ধৈর্য আর শুক্রার মর্জির সম্মিলিত সিঙ্ক্রোনাইজেশনে। সম্পর্ক অনিশ্চয়তার করিডোর ছেড়ে বন্ধুতার হাত ছুলে বেদীমূলে আহুতি বড়জোর দু-এক গ্লাস হাঁড়িয়া বা অকিঞ্চিত মহুয়ার রস, গেঁজানো অবশ্যই।

প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে কথার ধারা ছুটতে শুরু করবে বেপথে, 'বাবু' তখন নেহাতই শিক্ষানবিশ-
'এ জঙ্গল আমার পূর্বপুরুষের ভিটে, ঐ যে সব বড় বড় শাল, সেগুন গাছ সেসব আমাদের পিতৃপুরুষের সন্তান। সে জঙ্গলের ভেতর আমাদের দেবতার পূজা হয়, সারনা মাই-এর অধিষ্ঠান যেখানে। জংলি প্রাণীদের সঙ্গে লড়াই করে, গতর খাটিয়ে আমরা এই বসতি বানিয়েছি। আঁধার রাতে রাতপরীদের নাচ দেখেছি আমি জঙ্গলের ভেতর বনদেবীর চাতালে। সেই চাতালের কাছে ছুটে চলে এক পাগলাঝোরা, চাঁদনি রাতে হাতিরা সেখানে শুঁড় উঁচিয়ে জলের তুবড়ি ছড়ায়। কমবয়সে বুনো শুয়োরের তাড়া খেয়ে প্রাণ হাতে ফিরে এসেছি বহুবার তবুও প্রতিবছর ফাগ্ পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় বনের জন্তু শিকার করার নেশা ছাড়তে পারিনি সেসময়। এ জঙ্গল সাচ্চা জওয়ান মরদের, ভীরু-কাপুরুষের নয়। ঐ শ্যাওড়া গাছের ডালে কত রাত একা একা শুয়ে কাটিয়েছি! চিতাবাঘ নীচ দিয়ে হেঁটে গেলেও ডরাইনি কখনো। আজ সেই জঙ্গলও নেই সেই বুনো আদমিও নেই এই তল্লাটে।...শহর থেকে দলবেঁধে বাবুরা এখন আসে এই জঙ্গলে ফুর্তি করতে! লাল দারুর বোতল গড়াগড়ি খায় বাংলোর সামনে! জঙ্গলের অভিশাপ ওদের গায়ে লাগেনা, আমার শুধু হাত দুটো নিশপিশ করে! যদি, যদি ফিরে পেতাম যৌবনের শক্তি সবক'টার হিসেব বুঝে নিতাম ঠিকঠাক! পাঁচ মরদের শক্তি গায়ে ভর করলে শুক্রার চেহারা কী হয় তোরা আর কী জানলি!...'

একটানা এত কথা বলে শুক্রা তথন দৃশ্যতই উত্তেজিত। গলায় আস্তে আস্তে পানীয় ঢেলে সে শান্ত হয়ে আবার বলতে শুরু করে- '.. শুনছি,এই বসতি উঠিয়ে দেবে কিছুদিনের মধ্যেই। সাহেবরা  এসে আলোচনাও করে গেছে। আমি যাইনি ঐ সভায়। যে জমিন ছেড়ে আমি কখনও বাইরে বেরোয়নি, আজ শেষ বয়সে তা ছেড়ে কোথায় যাব? এই জঙ্গলের প্রতিটি গাছের সঙ্গে আমার কথা হয় চুপিচুপি, বাইরের লোকের ভাষা বুঝব আমি কীভাবে? এই বনবাদাড়ের মাটিতে আমার বাপ-দাদার শরীর মিশে আছে আমি তাদের ছেড়ে যেতে পারি? সরকার বলছে আমাদের টাকা দেবে। টাকায় কী আর জীবনের সবকিছুর হিসেব মেলে? মূল ছিঁড়ে নিলে বুড়া গাছ নতুন মাটিতে শেকড় বসাবে কীভাবে?'

এ পর্যন্ত বলে হাঁপাতে, হাঁপাতে অশক্ত শরীরে নিজের আস্তানার দিকে পা বাড়ায় শুক্রা। আমি অসহায় চেয়ে থাকি অশীতিপর মানুষটির চলে যাওয়ার পথের দিকে, যুগ যুগ ধরে এমনি কোন পথে বারবার বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছে প্রান্তিক মানুষ, পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে...কখনো দন্ডকারণ্যে, কখনো নর্মদা উপকূলে, কখনোবা জয়ন্তী-বক্সায়...আমি ভুবনগ্রামের বাসিন্দা, দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কীই-বা দিতে পারি পরিণামে!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri