অন্ধজন যখন জীবন খুঁজে পায়/রীনা মজুমদার
অন্ধজন যখন জীবন খুঁজে পায়
রীনা মজুমদার
আমরা শৈশব থেকে বাবা- মায়ের কাছে শুনে আসছি, বা দুই ব্যক্তির কথা বিনিময় শুরুই হয়-- কেমন আছেন? 'ভালো আছি।' আপনি ভালো তো! 'হ্যাঁ ভালো আছি'
কিন্তু ভালো আছির মাপ কি সবার কাছে সমান হয়? হয় না। আমাদের দৈনন্দিন যাপনে হৃদয়-দ্বারে নাড়া দেয় এই সত্য সার কথাটির মধ্যে। আমরা জীবন পথে মন্দকে সরিয়ে শুনতে ভালবাসি, বলতেও ভালোবাসি আর বলিও 'ভালো আছি।'
তেমনই আমার জীবন পথেও একই নিয়ম।
একবার ন্যাওড়া জঙ্গল ক্যাম্পে দুদিনের জন্য থাকার প্রোগ্রাম ছিল। গিয়ে দেখলাম এক আরণ্যক গোষ্ঠী একদল(২৫-৩০জন) অন্ধ ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নেচার-ক্যাম্প করাতে এখানেই এসেছে তিনদিনের জন্য। কিছুটা দূরে অরণ্য ভেদ করে তিরতির করে বইছে নদী। চারিদিকে ঘন অরণ্য আর ময়ূর ও পাখিদের কলতান।
আমরা দুপুরে গিয়ে দেখি সবাই একটি বড় গাছতলায় বসে মন দিয়ে আরণ্যক সদস্যের কথা শুনছে, আর সবার মুখগুলো এক উজ্জ্বল খুশিতে ভরা। না, ওরা এটুকু বুঝেছে ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে জঙ্গলে বেড়াতে এসেছে! একটু হইচই, পাশে একে অপরের কথা শুনে ওরা হাসছে। আমি স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন ওদের দেখে নীরব ছিলাম__ পৃথিবী সুন্দর। প্রকৃতির রূপ কিছুই যদি দুচোখ ভরে না দেখতে পাই! কিসের সুখ, কিসের আনন্দ! কী করে বলি, আমি ভালো আছি? কিন্তু ওদের খুশির মুহুর্তকে অনুভব করলাম।
পরদিন এগারোটায় দেখি মিষ্টি উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত ছেলে-মেয়ে গুলো জীবনের প্রতিকুল স্রোতের বাইরে এসে একে অপরের কাঁধে দুহাত রেখে লাইন করে, প্রথম জন সদস্যের হাত ধরে জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছে। আমিও গেলাম দেখতে ওরা কী করে জানতে---- ওদের হাত দিয়ে দিয়ে গাছ ও পাতার নাম চেনাচ্ছেন। ওরাও হাতের স্পর্শে কত সহজে ও অনুভূতিতে চিনে বলে দিচ্ছে! এই আলাদা শক্তিটুকু হয়তো ঈশ্বরই দেন।
আমিও ওদের মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে অনুভব করলাম, দেখলাম নতুন করে জীবন কে-- দুঃখে, সুখে, সন্তাপে শান্তির সব অবস্থার এক আনন্দ মুখরিত একঝাঁক পবিত্র মুখ, ওরা ভালো আছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে একজনের হাত ধরে নাম জানতে চাইলাম, সন্তানসম দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী হাত দিয়ে দিয়ে ছুঁয়ে আমাকে যেন দেখে নিল! একমুঠো হাসি ছড়িয়ে নিজের নাম বলে, আমার কী নাম জানতে চাইল।
সেদিন দুচোখ ভরা জলেও ওদের খুশির মুহুর্তে মনে হয়েছে, ভালো আছি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴