সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22-January,2023 - Sunday ✍️ By- মমতা পাল চন্দ 274

অন্তরাত্মার ডাক

অন্তরাত্মার ডাক
মমতা চন্দ
--------------------

দার্শনিকেরা বলেন এই কোলাহলময় পৃথিবীতে নাকি সত্যিকারের কোনো কিছু শোনা বা দেখার জন্য একটা গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন স্বত:স্ফুর্ত মন চাই আর চাই বেমিসাল একাকীত্ব। কারণ সাদা চোখে  নাকি সবকিছু দেখা যায় না। তার জন্য চাই অনুভবময় গভীর অন্তর্দৃষ্টি - তৃতীয় নয়ন বা Secondary Imagination. কেননা চোখের চাইতে মনের দৃষ্টি অনেক প্রশস্ত এবং সুগভীর। ঠিক তেমনি কোনো কিছু শুনতে হলেও মনটা জরুরি -  আর অনুভব করতে হলে নির্জনতা প্রয়োজন।  কেননা সাদা চোখ আর কান তো সব দেখে যায় শুনে যায় তাদের বাছবিচার কোথায় ? সব স্ক্যান করার মত   ভাবনা কোথায় ? তবে মন কিন্ত সেটাই দেখে বা শোনে  যা সে অনুধাবন করবে বলে মনে করে। আর সে অনুধাবন কখনো কখনো এত প্রবল হয় যে সে ডাকে সাড়া দেবার জন্য  অন্তরাত্মা উতলা হয়ে উঠে।

 আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি। একদিন নয়া দিল্লির করোল বাগের Sat Nagar এ মামা বাড়িতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শীতের রাত। ট্রেন যাত্রার ধকলে ক্লান্তি আর  অবসন্নতায় জড়িয়ে আছি। শেষ রাতে পাশেই কোনো গির্জায় ঘণ্টা বেজে উঠলো। ঘুম ভাঙতে মনে হলো এমন  মধুর প্রশান্তিময় ঘণ্টাধ্বনি জীবনে কখনো শুনিনি। কি এক আবেশে মনটা ছেয়ে থাকলো আমার। ওখানে যাবার জন্য কি এক ব্যাকুলতা অনুভব করতে থাকলাম।বারান্দায় বের হতে দেখে মামা  উঠে এলো। আমি ওখানে যাবো বলতে মামা ভোর বেলা নিয়েও গেলো সেখানে। মামা ফাদার এর সাথে কথা বলছিলেন চার্চের বারান্দায়। ফাদার চার্চের ভেতর নিয়ে গেলেন। আমি হাত তুলে প্রণাম করতে গেলে ফাদার দেখিয়ে দিলেন কি করে বুকের ওপর ক্রুশ এঁকে  হাত রেখে যিশু খ্রীষ্টকে শ্রদ্ধা জানাতে হয় আর প্রার্থনা করতে হয় - চোখ বন্ধ করে  অনুভব করতে হয়। বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম সেখানে। মামা ফাদার এর সাথে কথা বলছিলেন। ফাদার আমায় সেদিন যীশুকে দেখিয়ে যতটুকু বলেছিলেন এইটুকু বুঝেছিলাম  যে  যীশুকে চোখ দিয়ে নয় মন দিয়ে দেখ আর অনুভব কর ! "He has sacrificed his life for the benefit of Mankind". এটা মনে রাখবে। ফাদার আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। মামা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ফাদার এর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সেদিন মনের মধ্যে কি যেন খেলে গিয়েছিল আমার। এর পর থেকে কোথাও গির্জা দেখলেই ভেতরে  যাই আমি। মাতা মেরি আর যীশুর ছবির সামনে দাড়িয়ে থাকি আজও। অনেকটা সময় ধরে মনে হতো মাদার টেরিজার নির্মল হৃদয়ে চলে যাবো। সে ভাবনার কথা জানালে আমার এক দাদা আমাকে "সুতনুকা এক দেবদাসীর নাম" বলে একটি বই পড়তে দেয়। এবং এটাও বোঝায় যে ওসব ভূতের ভাবনা ছেড়ে পড়াশোনা  কর। বাইরে থেকে মন্দির গির্জার জীবন যত সুন্দর মনে হয় সেটা সব সময় সত্যি নাও হতে পারে ওখানেও মেয়েদের জন্য অনেক বিপদ অপেক্ষা করে থাকে। ফলে আমার ভাবনা কিছুটা বদলে যায়। পরিস্থিতি আমাকে ঘর সংসারেই নিয়ে আসে। কিন্তু  সিস্টারদের দেখলেই কি যেন একটা অনুভব হয় আমার। মনে হয় বুকের ভেতরে কে যেন একটা এখনও ডাকে। বাদামি শাড়ি ক্রুশ অথবা নীল পাড় সাদা শাড়ির প্রতি শ্রদ্ধা অমলিন। আজও আমার অন্তরাত্মা গির্জার সে ঘণ্টাধ্বনির পরম অনন্ত পিপাসু। এখনও গির্জার ঘণ্টাধ্বনি শুনি। কিন্তু কোনো ধ্বনিই সেদিনের মত নয়।

তবে নির্জনতা আর একাকীত্ব  আমাকে চিরকালই প্রলুব্ধ করে। নির্জন নদী নালা মাঠ ঘাট প্রান্তর দেখলে অন্তরাত্মা যেন বলে ওঠে দুহাত মেলে পাগলের মত  চিৎকার কর মন! আর গির্জা মন্দির মসজিদ  নির্জন হল এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ বসে থাক সম্পূর্ণভাবে একা। সম্পূর্ণ  নি:স্ব হয়ে - শুধু নিজের অন্তরাত্মার সাথে। কে যেন ডেকে বলে ওরে! প্রকৃতিকে যদি সত্যিকারের অনুভব করতে হয় তাহলে সেটা শুধুই একা। অনেকের সাথে মিলে অন্ততঃ আর যাই হোক প্রকৃতির সাথে আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয় না একাকী কথা বলাও হয় না। কে যেন নিভৃতে বলে যায় মন একা না হলে প্রকৃতির বুকে বিলীন হতে পারে না। কেননা প্রকৃতির  অপরূপা মোহময়ীর রূপ মন তখনই দেখে যখন তুমি একা। প্রকৃতি প্রেমও যে পূজা - সেও যে সাধনা। সে সাধনার ধন - সে অনুভবের মাধুকরী বুকের ভেতর একাই সঞ্চিত করে নিয়ে সে উপলব্ধি - অনুভবের প্রসাদ  নিজের ভাষার মাধ্যমে অন্যকে বিতরণ করতে হয়। নিজের অন্তরাত্মার ডাক হাজার মানুষের মুখের ভিড়ে খুব সঠিক শোনা যায় না। ভাবনার বুনোট ঠিক জমে না। তবুও কখনও কখনও অনেক মানুষের ভিড়ের মধ্যেও কেমন যেন একা হয়ে যাই আমি। সম্বিৎ ফিরতে বুঝতে পারি এতক্ষণ আমি আমার অন্তরাত্মার সাথেই ছিলাম। নিজের ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিলাম। অবগাহনের পরে ভেবে দেখেছি কেউ আমাকে ভেতর থেকে যেন ডাকে। হঠাৎ হঠাৎ নিজেই নিজের কাছে চলে যাই কত ভিড়ের মধ্যেও। লোকেরা  ফিরিয়ে আনে নিজের অবস্থানে। স্টেশন এ ট্রেন থামলেও নিজের ভাবনার মাদকতায়  ডুবে গেলে নামার কথা মনে থাকে না আমার। আবার নাগরাকাটা চা বাগান গুলোর শেষ প্রান্তে ভুটান বর্ডার এ কত যে একা বসে থাকি সে আমার অন্তরাত্মাই জানে। ড্রাইভার গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়েও পরে দু 'একদিন। অবশেষে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে ঝাঁপিয়ে গাড়িতে উঠে পালিয়ে আসি। আমার মত এ নির্জন বিচরণ  নাগরাকাটাতে যারা আসে অনেকেই করে। কারণ সুন্দরী নাগরাকাটাকে উপলব্ধি করতে হলে একাকীত্ব  খুব বড় সম্পদ।আবার কোথাও কখন যেন একদম মাথা নিচু করে নিজের মন মন্দিরে  ঢুকে পড়ি আমি। নিভৃতে কিছু চিন্তা ভাবনা সাজাই - নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি - নিজের অহঙ্কার ছেড়ে  নিজেই নিজের কাছে আত্ম সমর্পণ করি নিজের  সাথে কথা বলি। তবে কিছু কাজ তো করে যেতেই হয় অন্তরাত্মার ডাকে । নিজের অন্তরাত্মাকে যতটুকু পারি সম্মান করি - আর একমাত্র অন্তরাত্মার  ডাকেই সাড়াও দি এই ভরংহীন জীবনে।  কেননা জীবনে প্রসিদ্ধি না থাকলে আর অভিনয় না জানলে যে জীবনের কষ্টিপাথরে সবার কাছে শুধুই বিশুদ্ধতার প্রমাণ দিতে হয়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri