সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
25-February,2024 - Sunday ✍️ By- দেবদত্তা 276

অনিমা তোমার জন্য/দেবদত্তা বিশ্বাস

অনিমা তোমার জন্য
দেবদত্তা বিশ্বাস 

          কুয়াশা ঘন শীতের সকালে এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের এক নিরিবিলি গ্রামে বসে অনিমা দেবী বাড়ির সামনে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ দিয়ে তাকিয়ে থাকেন অনেক দূরে।ছানি পড়া ঝাপসা চোখে চশমাটা একটু মুছে নেন,কুয়াশার স্তরের খাঁজে খাঁজে হাতড়ে বেড়ান অতীত স্মৃতিকে।এই অলস বার্ধক্যে স্মৃতিটুকুই তো নি:শব্দে অন্ত:সলিলা নদীর মতো বয়ে চলেছে কোনো এক গভীর খাত বেয়ে। যেমনি করে  সামনের পাহাড়ের খাঁজ বেয়ে নেমে আসা নদীর খানিকটা জলে আবেগের  অক্ষর বুনে বহু বছর আগে একদিন চিঠি পাঠিয়েছিলেন সমুদ্রের কাছে।এক হাঁটু  নোনা জলে কাদামাটি মেখে হেতালের ফাঁকে ফাঁকে কাঁকড়া ধরার মতোই লোফালুফি করে পাহাড়ি আবেগকে গায়ে মেখে নিয়েছিল আরেকটি মেয়ে।পাতার পর পাতা লিখেও অনিমা দেবীর রয়ে যেত অনেক কিছু বলার বাকি।অতএব আবার লিখতে বসা।ওরা যে পরস্পরের পত্র মিতালী।ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী হওয়া অনিমা দেবী সদ্য ভিটেমাটি ছেড়ে নতুন দেশের ভিড়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে নিতে ব্যস্ত সেই সব দিনে।চোখের সামনে নিজের প্রেমিককে দেখেছেন ভাষা শহীদ হতে। উথাল পাথাল মনে সে সময় একটু প্রশান্তি যোগায় সামুদ্রিক বাতাস। জীবিকার টানে মাঝ সমুদ্রে দিনের পর দিন মাছের খোঁজে যখন বাপের সাথে ভেসে বেড়াত বান্ধবী, একটার পর একটা চিঠি আসত উত্তুরে ঠিকানায়।আবার অনিমা দেবীর সামনে থেকে দেখা ভাষাপ্রেমীদের গল্প ,মন কেমনের ভাবনারা প্রশ্রয় পেত বান্ধবী কাছে।আর তারপর নিখাদ ছাঁচে ঢেলে যে অক্ষর প্রতিরূপ তৈরি হত বান্ধবীর হাত ধরে, সেসব গল্পেরা এক কাব্য হতে পারত।
         কোথায় গেল সেসব দিন? কোথায় গেল প্রিয় বান্ধবী?অনিমা দেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। খানিকটা রোদ এসে পরে টেবিলের উপর রাখা বই খাতার উপর।অনিমা দেবী হাত বোলান ওদের গায়ে পরম যত্নে।মনে পড়ে বইয়ের খাঁজে অনেক বছর আগে লুকানো গোপন প্রেমের চিঠির কথা।সে বড় কঠিন দিন।ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে তার প্রেমিক তখন । কেউ জানে না ওদের গোপন বিয়ের কথা।নবনির্মিত শহীদ  স্মৃতিস্তম্ভকে সাক্ষী রেখে অনিমা দেবীকে একসাথে নতুন পথ চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ঘর ছাড়া তখন প্রেমিক। গ্রেপ্তারির ভয়ে প্রেমিকের ডেরাবদল চলছে প্রতিনিয়ত।আজ ঢাকা তো কাল রাজশাহী।শেষ চিঠি এসেছিল কোন ছাত্র ব্যারাক থেকে। গা ঢাকা দিয়ে বিপ্লবীরা বেশ কিছুদিন সেখানে ডেরা বাঁধে।কিন্তু তারপর...? না অনিমা দেবীর চোখে জল আসেনি কখনো।বরং নিজের আবেগের বাঁধভাঙা প্লাবন শব্দ হয়ে ঝরে পড়েছিল পত্র মিতালীর দরবারে। কিন্তু সারা জীবন যাকে নিজের অনুভবে রাখতে চেয়েছিলেন সেই পত্র মিতালী ও হারিয়ে যায় জীবনের গোলকধাঁধায়।অনিমা দেবী স্মৃতির খাঁজে মানুষগুলিকে সযত্নে পালন করেন আজও।একাকীত্বকে উপভোগ করেন। কোনো অভিযোগ নেই তার জীবনের কাছে।
             বিকালের দিকে সামনের পাহাড়টা ধোঁয়াটে হয়ে আসে।ঝুপ করে সূর্য পাহাড়ের পিছে গা ঢাকার আগেই অনিমা দেবী সদর দরজায় খিল দেন।বয়সকালে পড়ন্ত বিকেলের শীতটা একটু বেশিই অনুভব করেন। আজ হঠাৎ সম্বিত ফিরে পান গেটের কাছে গাড়ির শব্দে। এই শেষ বেলায় স্পিড পোস্টে একটি প্যাকেট এসেছে তার নামে।প্রেরকের নাম ও ঠিকানা অনিমা দেবীর অচেনা ঠেকে। একটি বই উপহার এসেছে অনিমা দেবীর নামে।বইটির উপরে লেখা 'ভাষা শহীদের পরিণীতা। 'লেখিকার নাম দেখে খুব অবাক হন অনিমা দেবী।এ তো তারই হারিয়ে যাওয়া পত্র মিতালির নাম।তিনি উল্টেপাল্টে দেখেন বইটা পাগলের মত।ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ,ভিটেমাটিহীন একটি কিশোরী মেয়ে। বইটার প্রতিটি চরিত্র মিলে যায় তারই সাথে। আনন্দাশ্রু বইতে থাকে অনিমা দেবীর চোখ দিয়ে।চোখের জল আজ বাঁধ ভাঙে। দুই ফোঁটা চোখের জল পড়ে উপরের পাতায়।সেখানে পরম যত্নে বইটি উৎসর্গ করে লেখা 'অনিমা তোমার জন্য'...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri