সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-March,2025 - Sunday ✍️ By- বনানী গোস্বামী 101

অনিন্দ্য স্মরণে/বনানী গোস্বামী

অনিন্দ্য স্মরণে
বনানী গোস্বামী

আশৈশব কাটে আমার বীরপাড়া স্কুলপাড়ার চৌহদ্দির ঘেরাটোপে।  স্কুল, খেলা, বন্ধুতা - মাঠে লুটোপুটি খায় স্মৃতির আলেয়ায়। শৈশব, কৈশোর ছাড়িয়েও সে মাঠ, মানুষ, বন্ধু সব এখন স্মৃতিময়, একাকার। বহুকাল যোগাযোগহীনতায় থেকে সামাজিক মাধ্যমে আবারও এক যোগসূত্র রচে সেই মাঠ-মানুষ-বন্ধুদের সাথে। এভাবে একাত্ম হয়ে আছি দীর্ঘ পঁচিশ বছর বীরপাড়ায় না থেকেও। যাকে নিয়ে আজ স্মৃতিচারণ করছি সে অনিন্দ্য সেনগুপ্ত ওরফে আমাদের স্কুলের পার্থ ... যে স্কুলে আমার চেয়ে এক ক্লাস জুনিয়র ছিল। সেই সুবাদে বড়ো সমীহ করত। সমবয়সী হলেও অধ্যাবসায় অনুশীলন চর্চার পথে পান্ডিত্যে অনেক বড়। তেমনই পরিণত মনন, সংস্কৃতিমনস্ক। পার্থর বাবা শ্রদ্ধেয় অচিন্ত্য স্যার, কাকিমা, সোমা (পার্থর বোন) সবার  সাথে পারিবারিক সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। স্কুলজীবনে অতীব কৃতি ছাত্র; খেলার মাঠেও অনন্য নক্ষত্রসম প্রজ্জ্বল এক মুখ এই পার্থ চির শ্রদ্ধাসনে স্কুলবেলা থেকেই আছে।
বহুকাল বাদে সামাজিক মাধ্যমে আবার কনট্যাক্টে আসি বছর চার ধরে। এই সময়ের প্রবাহে পার্থর নানাবিধ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজকর্মের পরিসরে বীরপাড়াস্থিত কিছু উৎসুক ছেলেমেয়ে যারা নানান সমাজ সংস্কারমূলক কাজকর্মের পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণে সাহিত্য চর্চাকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ... তাঁদের উদ্যোগ ও উৎসাহে শান দিতে 'রোববারের সাহিত্য আড্ডা 'র জন্ম দিয়ে কর্ণধার হয়ে ওঠে পার্থ। 'রোববারের সাহিত্য আড্ডার'-- সকল সদস্য সদস্যার মনে অধিনায়কের স্থান করে নেয় সেটাও সবার অগোচরে। অগোচরে এ কারণেই --প্রচারসর্বস্বতা ওর স্বভাব বিরুদ্ধ। আমাকেও সে সদস্যা পদের আমন্ত্রণ জানায়। আমি সাগ্রহে সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করি শিকড়ের টানে ও মনের খোরাক জোটাতে।
স্থান দূরত্বে সব অনুষ্ঠান সভাতে থাকতে পারি না তবু ছুটে যাই যখনই সম্ভব হয়। এই সাহিত্য আড্ডার সান্নিধ্যে নানা আঙ্গিকে ওর পরিচয় পাই। কত গভীর জীবনবোধ, সহানুভূতিশীল, মহানুভবতা, প্রকৃতি ও জীবন যার দর্শনে সমতা পায় একমাত্রায়। এক দক্ষ কান্ডারীর মতো সবরকম কাজকর্ম সুচারুভাবে সামলে উঠতে দেখেছি- সাহিত্য আড্ডার গ্রুপ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ; বীরপাড়াস্থিত তরুণ, কিশোরদের নিয়েও 'অন্বেষণ' অভিযান (প্রধান উদ্দেশ্য : ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্ক্রিন টাইম থেকে বের করে এনে সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের সৃজন ক্ষমতার পরিচর্যা করা সর্বোপরি তাদের মনোজগতের বিস্তৃতি ঘটানো); তাতাসি'র প্রকাশ, সাহিত্য সভার বাৎসরিক অনুষ্ঠানে গুণীজন সম্মাননা....  তাতে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে আছি। দুর্দান্ত এক সংগঠক। যাঁর জীবন দর্শন প্রতিফলিত হত সাম্যবাদে, মানবতাবাদী মন্ত্রে। মানুষের পাশে থাকার মন্ত্রে জীবন উৎসর্গ করে রেখেছিল। 
সাহিত্য আড্ডা থেকে যেন গ্রুপের সবার সাথে আরও কাছের জন হয়ে আছি একটা সুন্দর পরিবারে। পার্থ বলত যে, আমরা তো সব এক পরিবারের। সবাইকে বেঁধে বেঁধে চলতে হবে। পরিবারের কারোর সুসময়েও  যেমন সবাই পাশে থাকবে তেমনি দুঃসময়েও। প্রমাণ পেয়েছি। আমার ও স্মিতার অসুস্থতার সময়কালে। পরিবারের সবার মধ্যে এমন এক অচ্ছেদ্য বন্ধন পার্থ তৈরি করে দিয়েছে যে সবাই সবার সাথে রোজকার কনটাক্টে থাকি। গ্রুপের বাইরেও নিয়মিত আছি, থাকি বন্ধুতায়, সমমনস্কতায়।

  'রোববারের সাহিত্য আড্ডার' দ্বিতীয়  বাৎসরিক সাহিত্য সভার কাজকর্ম নিয়ে তোড়জোড় চলছিল ডিসেম্বর থেকে। 'তাতাসি'র লেখা সংগ্রহে বেশ কয়বার আমায় ও হোয়াটসঅ্যাপ করেছে।  চটজলদি লেখা পাঠিয়ে রিভিউ এর অপেক্ষায় ছিলাম। সাধারণত পড়েই জানান দেয়। এবার বিলম্বের কারণ একদিন ফোনেই জানতে পারলাম। আমাদের স্যার- পার্থর বাবা অসুস্থ, তাঁকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে, বড্ড চিন্তিত। এই বিলম্বের কারণেও পার্থ দুঃখ প্রকাশ করল। এমন ভালো মনের বন্ধু ছিল! ওকে ভুল বোঝার কারোর সাধ্য নেই। গ্রুপে ওর অন্তিম পোস্টে দেখতে পাই শরৎ মুখোপাধ্যায়ের লেখা 'দূরত্ব' কবিতা : যে কবিতার মুখ্য দুটো লাইন  "চোখ থেকে চশমার দূরত্ব যতখানি/জীবন থেকে মৃত্যুর  দূরত্ব ততটাই" ...  ঠিক সাতদিন আগের পোস্ট। শিউরে উঠেছি!
প্রতিটি অনুষ্ঠান পরিচালনার সাথে চলত ওর নিঁখুত পর্যবেক্ষণ। কথা হত কোনও একটা বই নিয়ে -- হয় আমি পড়েছি কিম্বা ও- সেটা নিয়ে, আবার কখনও কোনো গান ধরে, গায়কদের নিয়ে, নানা ঘরানার মিউজিক নিয়ে, সমসাময়িক ঘটনা ধরে। অবাক হতাম সাহিত্য, নাটক, থিয়েটার, সঙ্গীত সব বিষয়ে ওর পরিশীলিত জ্ঞানের বহরে।
সবসময় একটাই কথা বলত -- যখন যেটা পড়ে ভালো লাগবে গ্রুপে দেবে। সবাই পড়বে, জানবে। কী আন্তরিক প্রয়াস গ্রুপকে সমৃদ্ধ করার! নিজে নিয়মিত একটা করে পোস্ট রাখত গ্রুপে, সবাইকে সমৃদ্ধ করতে। প্রত্যেকের সৃজনী প্রতিভার বিকাশে ছিল অনলস প্রেরণা, উৎসাহ। যে ক'টা সভায় উপস্থিত থাকতে পেরেছি - ঘরে ফিরেছি একরাশ ভালোলাগা নিয়ে। পার্থর আরও এক মহৎ গুণ ছিল--অনুষ্ঠান শেষে ও ফোন করে জানতে চাইত কেমন লাগল। আরও ভালো কী করে অনুষ্ঠান/কর্মশালাতে কিছু সংযোজন করা যায় কিনা... চলে যাবার ঠিক আগের দিনে  'তাতাসির' লেখাটার পর্যালোচনার কাজ সম্পন্ন করে দিয়ে গেছে, এটাও বলেছিল যে ওর নিজের লেখাটাও এখনো লিখতে পারেনি, আদতেও পারবে কিনা... এমন সংশয় রেখেছিল। ব্যাস শেষ কথা।
দুম করে যখন রাতে মধু কাঁদো কাঁদো স্বরে জানালো... বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো দুমরে মুচড়ে ভেঙে পড়লাম। আমার সদ্য হাত বসানো ভায়োলিনটা তখনও  হাতে.... এ কি পরিহাস!! নিস্তব্ধতা ... কোনো কথা নেই আর...ভয়াবহ শোকাবহতায় ডুব.. গ্রুপ পরিবারের সবারই ফোন ধরে কথার বদলে শুধু কান্নার শব্দ শুনছি!!! কিসের এত তাড়া ছিল রে তোর?? বলেছিলি- ভাগ্নের ম্যান্ডোলিন বাজানো শুনবি বাড়ি এসে একদিন  -- কথা রাখতে পারলি না। আমার  কথা শব্দ সব হারিয়ে ফেলেছি ব্যথা ও শোকের মিশ্রণে। এক বুক শূণ্যতা গ্রুপের  বুকে বয়ে চলেছে বসন্তের প্রারম্ভিকে প্রহরের পর প্রহর। কে জানত ডিসেম্বরের ঐ চড়ুইভাতির অস্তগামী সূর্য তোকে ইশারায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নদীর বুকে! গ্রুপে রাখা অন্তিম পোস্ট শরৎ মুখোপাধ্যায়ের 'দূরত্ব' কবিতাটি, যার মুখ্য দুটো লাইন "চোখ থেকে চশমার দূরত্ব  যতখানি জীবন থেকে মৃত্যুর দূরত্ব ততটাই" ..... ঠিক চলে যাবার সাত দিন আগে!!
বারবার স্যার, কাকিমা, সোমার মুখ ভাসছে চোখে। ওঁরা কী করে সামলে উঠবেন এ শোক!! আমরা সবাই একসাথে যখন ওর বাড়িতে গেলাম স্যারের বুক চাপড়ানো কষ্ট .. আমাদের দেখে কান্নায় ভেঙে .. দেখতে পেলাম ঐ স্টিয়ারিংটা স্যারের বুকে... কী কষ্ট...কাকিমা, সোমা... ফেরার সময় সবাই সজল চোখে বাড়ি থেকে বেরোলাম। এখনও দিনে কতবার যে মনে করিয়ে দিস তোর এই প্রস্থান বারে বারে হোঁচট খাই আর তোর মুখভরা হাসিটা চোখে ভাসে রে। মাস তিনেক আগে, আমার বাড়ির এক কাকি (ডাকতাম- 'সোনামা '), তাঁর আকস্মিক চলে যাওয়ার ক্ষত তখনও সামলে উঠতে পারিনি ... গ্রুপ থেকে তুই জেনে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলি 'শক্ত থেক, সামলে ওঠ'..... বল তো এবার কী করে সামাল দিই?? অনেকদিন কথা না হলে যেমন জানতে চাইতাম 'ভালো আছিস তো?' জিজ্ঞেস করলেই ওপার থেকে তোর স্বর শুনতাম 'বিন্দাস আছি'। এখনও বলছিস রে 'বিন্দাস আছি????' সত্যি সত্যিই বিন্দাস থাক। চৈত্রের  রুখাসুখা দিনগুলোয় তোকে স্মরণ করতে যতবার লেখার চেষ্টা করছি- উথালপাথাল এক দমকা হাওয়ায় সব উড়িয়ে নিয়ে ... তবু ভেবে চলেছি তোর ইচ্ছে পূরণে আমরা 'রোববারের সাহিত্য আড্ডা' তোর দেখানো পথে। আবারও ঐ বাৎসরিক সাহিত্য সভার আয়োজনে তোকে নিয়ে তোর উদ্ধৃত করে যাওয়া কথাগুলো নিয়ে "so much is to do so little is to be done" মনে রাখব।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri