অনিন্দ্য সেনগুপ্ত-র আলোচনায় কবি সন্তোষ সিংহ-র বই 'জিরানকাট ও অনন্ত খেজুর গাছ'
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত-র আলোচনায় কবি সন্তোষ সিংহ-র বই 'জিরানকাট ও অনন্ত খেজুর গাছ'
কবি সন্তোষ সিংহের লেখা আগে পড়া হয়নি। ২০২২ সালে প্রকাশিত তাঁর বই 'জিরানকাট ও অনন্ত খেজুর গাছ' শেষ করলাম আজ। খুব ভাল লাগল পড়ে। উত্তরবঙ্গের এক কবির হাত থেকে এত সুন্দর লেখা বেরিয়ে এলে আলাদা একটা ভাললাগা এমনিই কাজ করে। সবক'টি কবিতা যে বুঝে উঠতে পেরেছি তেমন নয় তবে 'সাপের চোখ' 'প্রতিবর্ত-ক্রিয়া' 'ঘরপোড়া গোরু' 'কালোনুনিয়া ভোগধান' 'মাস্ক' কিম্বা ' জিরানকাট ও অনন্ত খেজুর গাছ' ' কথাদের আয়ু' 'একটি প্রণামের অভাবের 'বাবা' 'শূন্যোত্তর মানুষ' 'শিরোনামহীন এই জীবন' 'আঁষবঁটি' 'বাইশে শ্রাবণ' 'কথাচাষি' ইত্যাদি কবিতাগুলো মন ছুঁল।
কবি জগদীশ আসোয়ার এই বইয়ের ব্লার্বে লিখেছেন, '...কোনো কোনো কবিতায় উদ্গীর্ণ হয়েছে এক ধরনের আদিমতা যা প্রতিটি মানুষের রক্তে ঘুমিয়ে থাকে। যখন তার ঘুম ভাঙে তখন তা আমাদের একেবারে স্তম্ভিত করে দেয়। বোঝা যায় civilisation-এর চেয়ে savagery-র শক্তি কী ভয়ংকর রকমের বেশি।...কিন্তু তার মধ্যেও ক্রিয়াশীল রয়েছে এক ধরনের aesthetic sense..।' যথার্থই মূল্যায়ন মনে করছি বইটি পড়ে। এই অবসরে, কয়েকটি কবিতার বেশ ক'টি ভাললাগার লাইন শেয়ার করছি পরবর্তী বিভিন্ন পোস্টে। প্রসঙ্গত এটাও জানাতে ভালো লাগছে যে কবি সন্তোষ সিংহ, আরো অন্যান্য পুরস্কার/সম্মানের সঙ্গে 'চিকরাশি সম্মান' (2016) প্রাপকও বটে।
@Sohoj Uthan দা'র প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল কবির কাব্যসৃষ্টি নিয়ে যদি বিস্তৃত আলোচনা করা সম্ভব হয় কখনো, ভাল লাগবে সবার।
#সন্তোষ সিংহের কবিতার কিছু লাইন...
' বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এলেন উনি
তিন দিন পর
মুখে মুচকি হাসির কনে-দেখা আলো
বসন্তের সাজ
বাড়িময় সেটাই খবর!
নিঝুম রাতের কোলে একফালি চাঁদের জোছনায়
জিরানকাটের রসে
ভাসিয়ে দিলেন উনি না চাইতে মেঘ
যেন বৃন্দাবন ভেসে গেল নবদ্বীপে
রাধাভাবে চৈতন্যের
হা-কৃষ্ঞ ঊর্ধ্ববাহুতে
........
........
( জিরানকাট ও অনন্ত খেজুর গাছ)
'কথাদেরও আয়ু থাকে
কোনো কথা স্বল্পজীবী, আগে মরে যায়
কোনো কথা দীর্ঘজীবী, সহজে মরে না
......
.......
ওই যে দূর সবুজ বনানী
আজ ছাইভস্ম হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ধু-ধু
তারও ছিল অনেক সজল কথা, তারা মরে গেছে বলে
দিগন্ত ধূসর...
একদিন সমস্ত গ্রাম, কথা ফুরিয়ে গেলে
চাঁদের পাহাড় হয়ে চেয়ে থাকবে নিষ্পলক
হুকুম প্যাঁচার মতো
........
.........
(কথাদের আয়ু)
' কে তারে পোড়াতে পারে
যে ভস্ম হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে
কে পোড়াবে তাকে?'
.......
........
(শূন্যোত্তর মানুষ)
' বস্তুতপক্ষে শিরোনাম-কাতরতা আমার কখনো ছিল না
না থাকাই ভালো
অর্জন জেনেছে শুধু,
প্রতিদিন আজও শিরোনামকে হতে হয়
শিরোনামহীন অন্যতর আলো...'
(শিরোনামহীন এই জীবন)
' আমি এক কথাচাষি
কথার আবাদ করি তাহাদের শ্রাবণে প্লাবনে।
কথা শস্যে ভরে যায় মাঠ।
কথাদের ডালে ডালে ফলে শুধু হৃদয়ের চাঁদ।
চাঁদ পারে পূর্ণ আলোর ঘ্রাণ নিয়ে
আর আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে
ইথারের উঠোনে উঠোনে-
আমি বড়ো লোভী।
কথায় কথায় কথার ডালকে ঝাঁকাই ।
আর পাকা চাঁদ পড়ে যায় টুপ
.......
.......
(কথাচাষি)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴