অনিন্দ্য সেনগুপ্ত : যেমন দেখেছি/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত : যেমন দেখেছি
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
আমি অনিন্দ্যকে খুব বেশি জানবার সুযোগ পাইনি। চিকরাশির সূত্র ধরেই আলাপ। আসলে আমাদের বয়সের ফারাকটা ওকে কাছে আসতে দেয়নি হয়তো। একদিন গয়েরকাটার দাস স্যুইটসে ঢোকার পথে অনিন্দ্যকে দেখে ডেকেছিলাম। ভয়াবহ গরম সিঙ্গারা আর চা খেয়ে আমি মাদারিহাট চলে যাব ভাবছিলাম। ওর সঙ্গে কথা বলে মজা নেই, ভাবছিলাম ' নিজেকে এত কেন গুটিয়ে রাখ?' হঠাৎ ওকে জিজ্ঞেস করলাম 'তুমি কি জান গয়েরকাটা চা বাগানের ঠিক কোন কোয়ার্টারে সমরেশ মজুমদার থাকতেন?'
অর্গল খুলে গেল ও বলেছিল 'আপনি যাবেন?'
'হ্যাঁ' বলতেই নিয়ে গিয়েছিল চা বাগানের মন্ডপ সংলগ্ন কোয়ার্টারে। ভেতর থেকে একজন বয়স্কা মহিলা বেরিয়ে এলেন। তিনি আবার জলপাইগুড়ির তলাপাত্র বাড়ির প্রতিনিধি। কথা বলে বুঝেছিলাম মহিলা জানেন কোয়ার্টারটিতে বিখ্যাত কেউ থাকতেন। বলেছিলেন 'কিন্তু উনার খোঁজ খবর নিতে কেউ আসে না বললেই হয়।'
এরপর একবার চিকরাশির অনুষ্ঠানে আমরা কিছুটা সময় পাশাপাশি বসেছিলাম। কথায় কথায় মালবাজারের কথা এসেছিল। আমি বলেছিলাম মালবাজারের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমি শৈশবে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ও বেশ কিছুদিন মালবাজারে চাকরি সূত্রে বাস করেছিল এবং
মালবাজার ওর প্রিয় একটা জায়গা।
আমি বলেছিলাম চালসা ছোট্ট একটা বন্দর কিন্তু নদী, পাহাড়, চা বাগান, বিস্তৃত বনভূমির সৌন্দর্য অপার। ও বলেছিল 'সুযোগ পেলেই চালসা বা মেটেলি এখনও যাই। ওগুলো আমার প্রিয় জায়গা।'
হঠাৎ একদিন অচেনা নম্বর থেকে ফোন। দ্বিতীয়বার রিং শুনে ফোন ধরলাম বলেছিল 'বীরপাড়া থেকে অনিন্দ্য । মীরাদি কেমন আছেন? জানেন কিছু? অনেক দিন খবর পাইনি।' মীরাবাঈ সেন আমার অনুজাসম। আমি ওর একান্ত অভিভাবক। বলেছিলাম 'মীরা নেই।' ও গভীর দুঃখ পেয়েছিল।
ওদের 'টিম বীরপাড়া' দল বেঁধে আসত চিকরাশির অনুষ্ঠানে। পরস্পরের প্রতি সমর্থন ও ভালবাসা শিক্ষনীয়। এত তাড়াতাড়ি ওর চলে যাওয়ার কথা ছিল না। ঈশ্বরের বিচারও ত্রুটিমুক্ত নয়।
'............ হঠাৎ যায়।
মেঘের স্বাদ হারিয়ে যায় হাওয়ায়।
গাছ তলায় জমাট বাসি শিউলি ফুল রাশি রাশি।
দুই দিকের দরজা খোলা, কোথায় গেল চলে
অন্দরে না দেউড়িপারে?
আলোও দেখি পালায় !! '.............. বিষ্ণু দে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴