অনামী খামের চিঠি/কণিকা দাস
অনামী খামের চিঠি
কণিকা দাস
প্রিয় উত্তরাধিকারী,
আজকাল কেউ আর চিঠি লেখে না। এই ডিজিটাল যুগে কে আর কাগজ কলম নিয়ে বসে বলো? তাই তো কোন গলি-ঘুপচিতে লাল ইউনিফর্ম গায়ে চেপে হাতে গোনা কয়েকটি ডাকবাক্স দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। তাদের মলিন চেহারা আর অন্তঃসারশূন্য গর্ভাশয়। আজকাল আর কেউ ধৈর্য্য ধরে চিঠি পড়ে না তাই তোমাকেই লিখছি আমার ঠিকানাবিহীন চিঠি।
আজ তোমার অপেক্ষায় কেটে যাচ্ছে আমার কর্মব্যস্ত দিনগুলো। যেমন অপেক্ষা চৌদ্দশ একত্রিশ নতুন বছরের জন্য। নতুন বছরের নতুন বার্তা দিয়ে গেল পুরনো বছর। চৌদ্দশ একত্রিশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তোমায় নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে যাচ্ছি। তোমার ছোট ছোট হাত-পা নাড়িয়ে মিষ্টি দুটো ঠোঁট পাখির মত মেলে অ অ করে কথা বলার চেষ্টা আর তোমার বাবা-মায়ের গর্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি চলে যাব সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগের দিনগুলোতে। সেদিন তোমার বাবাও এভাবেই এই পরমৈশ্বর্য সুখে ভরিয়ে তুলেছিল আমাকে, আমাদের সবাইকে। তোমায় ঘিরে কত স্বপ্ন দানা বাঁধছে বুকের ভিতরে। চড়কের মেলায় যাব দু'জন দু'জনের হাত ধরে। তোমার কচি কচি হাত শক্ত করে ধরে রাখবে আমার হাত। নতুন কিছু দেখার কৌতূহল থেকে নানারকম প্রশ্ন আর অবাক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি যেন আমি চাক্ষুস করতে পারছি আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। কিন্তু একটা ভয় সব সময়ে ঘিরে থাকে মনকে। দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, নতুন নতুন মারণব্যাধি আর প্রকৃতির রোষানল তোমাদের ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা জানা নেই। তবে অনুভব তো করতে পারি। তাই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মনে... দিয়ে যেতে পারব কি কবি সুকান্তের ভাষায় তোমাদের বাসযোগ্য পৃথিবী? অঙ্গীকার তো সবাই করি কিন্তু পালন করি ক'জন? বাসস্থান নির্মাণ, রাস্তা বর্ধিতকরণ, এসবের জন্য যেমন গাছপালা কাটার দরকার হয় তেমনি বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস, বিশুদ্ধ জল, আর বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্যও দরকার। সেসব কিছু তোমাদের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে তো? নাকি মানুষের লোভ লালসা ও জনবিস্ফোরণের জন্য হারিয়ে যাবে তোমাদের মৌলিক অধিকারগুলো! সেই ভাবনা গুলো মনে রেখেও তোমার আগমনের অপেক্ষায় থাকলাম।
ইতি
তোমার পূর্বসূরী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴