অজানা সেই ডাক
অজানা সেই ডাক
অলক পর্ণা সেনগুপ্ত ব্যানার্জী
====================
দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে গেল চার দশকের ও কিছু বেশিই। স্রোতের মতো এগিয়ে চলা সময়ের টানে এগিয়ে চলতে চলতে কোনো মুহূর্তের জন্য কোথাও সে ফ্রেমবন্দি হলো কিনা জানা নেই। কিন্তু তার মনে টুকরো টুকরো নানা রঙের কোলাজ চিত্র। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে আলগা হয়ে গেছে আত্মীয় বন্ধুরা, আবার নতুন সম্পর্ক বিচিত্র রঙের সম্ভার নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে, মুখে তাদের বিচিত্র মুখোশ!!
এত যাওয়া আসার মাঝেও তার কানে বাজে দূরাগত এক ধ্বনি। একটানা মাদলের দ্রিমি দ্রিমি আওয়াজ মতো সেই ডাক। ভেসে যেতে যেতে সেই পিছু ডাকে ও ফিরতে চায়, কিন্তু যা পেরিয়ে এসেছে আর কি সেখানে ফেরা যায় কখনো? সেই সময়, সেই ভালবাসার উষ্ণতা মাখানো হাতের স্পর্শ!! এ ডাক তবে কি তার ই? নাকি আরও দূরের সেই একা হয়ে যাওয়া ম্যাগনোলিয়া গাছটার ডাক? ধাঁধা লাগে, বুঝতে পারে না! মাঝে মাঝে মনে হয় এ ডাক সব নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে আসার ডাক। নিরাপদ ছাদের নীচ থেকে বার হয়ে আকাশ ভাঙা বৃষ্টিতে ভেজার ডাক, শীতের কুয়াশায় মাঠময় ছুটে বেড়ানোর ডাক, ও কিছুতেই খুঁজে পায়না তাকে, খুঁজে পায় ডিকশেনারির পাতার ভাঁজে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া গোলাপ ফুল। যার সুগন্ধ কবে কোন ঘুঘু ডাকা নির্জন দুপুরে হারিয়ে গেছে চিরকালের মতো। হলদে হয়ে আসা চিঠির ভাঁজেও ও সেই ডাক খুঁজতে থাকে, খুঁজতেই থাকে, ক্রমশঃ সেই অজানা ডাক সবার মাঝেও এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একা করে ফেলে ওকে। ও বুঝতে পারে এ ডাক ওর একা হয়ে যাওয়ার ডাক। যে ডাক ওর মনের গহীনে ছায়া ছায়া ভিজে মাটির এক অদ্ভুত ভাললাগার স্পর্শ জাগিয়ে রাখে। সব না পাওয়া, সব ভুল, সব কষ্ট আবছা হয়ে যায় একসময়, সেই অলীক মায়াময় ডাক জেগে থাকে শুধু, আর ও সেই ডাককে বুকের ভেতর নিয়ে বিপরীত এক ধূসর পথে চলতে থাকে...চলতেই থাকে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴