সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-October,2024 - Sunday ✍️ By- চিত্রা পাল 110

অজানা অনুভূতি/চিত্রা পাল

অজানা অনুভূতি                                                          
চিত্রা পাল 

আমি আজ সবে হসপিটাল থেকে  বাড়িতে এসেছি। শরীর বেশ দুর্বল। এখন সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে হবে এমনই নিদান ডাক্তারের। সে ভাবেই আছি। এমনিতে দুর্বলতা ছাড়া আর কোন অসুবিধে নেই। কিন্তু সন্ধে হতে শুরু করলে আমার যেন কেমন গা শিরশির করে, কপাল টিপটিপ করে। আমি অমনি চাদরখানা গায়ে জড়িয়ে নিই। প্রথম দিন তেমন পাত্তা দিইনি।ভেবেছি শরীর দুর্বল তাই। পরের দিন সন্ধেয় ওই রকম অনুভূতি শুরু হলে আমি থার্মোমিটার দিয়ে দেখি হ্যাঁ, সামান্য উত্তাপ বেশি। তাতে ডাক্তারের কথামতো জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিয়ে আবার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি। কিন্তু এবার হল এক মজার কান্ড। আমি কোন বহুদূরে যেন চলে যাই, কোন ছোটবেলায় দেখা পিসিমার গ্রাম দাঁতনের মাটির দোতলা বাড়িটাকে দেখি একেবারে সেই রকম। বাড়ির সামনের দিঘীতে তেমনি হাঁসের দল তরতরিয়ে সাঁতার কাটছে। কোনদিন দেখি আমি সেই কবেকার দেখা রূপনারায়নের কুলের গেঁওখালি গ্রাম। এরমধ্যে একদিন কে যেন দেখা করতে এল আমার সঙ্গে। প্রথমে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, পরে বুঝতে পারলুম, উত্তরপাড়ায়  দেখা হওয়া সেই মানুষটি, যার সঙ্গে আমি খুব  গানের কথায় মেতে উঠেছিলুম। উনি গান বাজনা জানা পন্ডিত মানুষ। সেদিন যে গানের কথা জমে উঠেছিল, আজও তা ভুলতে পারিনি। 
   কথাটা উঠল এইভাবে। আমি বললুম, এবার অনেকদিন পরে দেখা হল যে। ও  একটা গান গেয়ে উঠল, অনেকদিনের পরে যেন বৃষ্টি হল। তারপর রবীন্দ্রসঙ্গীত। আমি বললুম, কথায় কথায় রবীন্দ্রসঙ্গীত কেন অন্য কোন গান গাওয়া যায় না? ও বলল, তোমরা সবাই এই গান পছন্দ করো তাই। কিন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক সময়ে আর একজন  দিকপাল বাঙালি সংগীতজ্ঞের আবির্ভাব ঘটেছিল এই পোড়া বাঙ্লায়,তার গান তেমন গাওয়া হয় না, তিনি আর কেউ নন সুর সাধক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। অমন বাংলা গানের মানুষ আমরা কপাল  করেই পেয়েছিলুম।  আমি বললুম, ও হ্যাঁ, আমিও ওনার গান  জানি। ধন ধান্য পুষ্প ভরা  আমাদের এই বসুন্ধরা। যে গান ভারত বাংলাদেশ দু দেশের বাংলাভাষী মানুষই প্রাণখুলে গায়। ও বলল, এ গানের সুরের কাঠামো কিন্তু ইংরেজি ধরণের। আমি বললাম, তাই হবে হয়তো। আবার দ্যাখো, আমরা এমনই এসে ভেসে যাই এ গানেও দেখা যায় বিলিতি সুরের আসা যাওয়া। ও তাই নাকি এটা তো খেয়াল করিনি। দ্বিজেন্দ্রগীতির এও এক মজা। এবার গানের মর্যাদার একট গল্প বলি। 
 একবার কলকাতা থেকে একজন বিদুষী রুচিশীল গায়িকাকে কোন এক ঘরোয়া সভায় আমন্ত্রণ করে  সেখানকার মানুষজন এনেছিলেন ভালো গান শুনবেন বলে। আমন্ত্রিত শ্রোতারা সবাই ছিল সঙ্গীত  মনস্ক। গায়িকা বিদূষী রুচিশীল। খুব শোভন পোষাকে এসেছেন আসরে। সঙ্গে আছে তবলিয়া, তানপুরা  বাদক। সবাইকে খুব সহবতের সাথে সালাম জানিয়ে শুরু করলেন সেদিনের সান্ধ্য আসর। তিনি খুব  নম্র মধুর স্বরে বললেন, এই আসন্ন সন্ধ্যায় প্রথমে আমি বাগেশ্রীতে আলাপ করব।‘
শ্রোতাদের মধ্যে কে একজন চটুল ছোকরা বলে উঠল, সে আপনার মুখশ্রী দেখেই মালুম করেছি।
ব্যাস, হয়ে গেল আসরের জলাঞ্জলি। অভিমানে শিল্পী উঠে গেলেন। তাঁকে আর ফেরানো গেল না। আমি বলি, বাবা, এত দর্প ছিল? হ্যাঁ, থাকবে না কেন? তাঁর সভ্যতায় ঘা লেগেছিল যে। তা তেনাদের আলাদা জানকারি ছিল। এমন ধারা হতেই পারে।  
কিন্তু আমার দুঃখু কি জন্যে জান, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা গান ছাড়া কত নাটক তখন থিয়েটার এর পাড়ায় সরগরম ছিল, সে সব নাটকের গান  সারা বাংলায় লোকের মুখে মুখে ফিরত। কিন্তু তাঁর নামে পরবর্তিতে  একখানা স্মারক ডাকটিকিটও  বের করা যায়নি। আর এত বড় নাট্যকারের নামে কোন  নাট্যমঞ্চও তৈরি হয়নি। আমি বলি এ বাবা, সে কেন। ও বলল, সে অনেক কথা, বলব আর একদিন।তারপরে,  কি একটা বলতে গিয়েও বলা হল না,দেখি ও ভ্যানিশ।  
এদিকে আমাকে দুদিক থেকে দুজনে ঠ্যালা দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। আমি ঘুম উঠে অবাক বিস্ময়ে বলতে গেলুম, মহাকবির কি যে হল! এরা জ্বর নেই তাও  মাথা ঠান্ডা করার জন্যে আবার জলপট্টি দিয়ে  শুইয়ে দিল। কি জানি, এ আবার অন্য রকম মাথা গরম কিনা, তাই ভাবল নাকি, কে জানে!   

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri