অকপটে তোমায় খোলা চিঠি/অতনু চন্দ
অকপটে তোমায় খোলা চিঠি
অতনু চন্দ
------------------------------------
সখা,
তোমাকে তো শয়নে স্বপনে প্রতিদিনই কতশত চিঠি লিখে চলেছি কিন্ত আজ তোমাকে খোলা চিঠি লিখতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠছি যেন! ভাবছি কী লিখব, কী লিখব! তোমার এই বিপুল সমুদ্রসম সাহিত্য সম্ভারের কতটুকু জানি আমি! এতদিন তো শুধু সে সমুদ্রের তীরে তীরেই ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্ত এই সমুদ্রে পাড়ি দিতে পেরেছি কই!
আমার এক সমবয়সি মামা এক সময়ে আক্ষেপ করে বলত, কি মুশকিল বল তো, একটা প্রেমের বা বিরহ কিম্বা আনন্দের চিঠি লিখব তা নিজের থেকে লিখতে পারি না। উনিই দেখছি আগেই আমার মনের মতন সুন্দর ভাবে লিখে গেছেন তাই ওনাকেই অবশেষে অবলম্বন করতে হয়। সত্যিই তাই! এভাবেই মনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তোমাকে যতটুকু জানা।
তোমাকে একটা চিঠি লিখতে গিয়ে এত ভাবছি অথচ তুমি অবলীলায় এত লেখা এমন অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখে কিভাবে লিখলে ঠাকুর! ভাবতেই অবাক লাগে।
ছোট থেকেই তোমার কিছু গল্প, উপন্যাস পড়ে এবং কবিতা, নাটক ও গান শুনে বড় হয়েছি কিন্তু এক একটা বয়সের স্তর পেরিয়ে এসে তা আমার কাছে নতুন নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তোমার লেখা 'গোরা' এখনো পর্যন্ত যে কত বার পড়েছি তার ঠিক নেই ! এ বয়সে এসে যখন আবার 'গোরা' পড়ি তখন আমি তার থেকে নতুন ভাবনা চিন্তায় প্রভাবিত হই এবং তখন আমার আগের সব পড়া ও চিন্তা ভাবনা বৃথা মনে হয়! এ তো বড় মুশকিল হল! তুমি কতদিন আগে লিখেছ তবু এখনো আমাদের চিন্তা ভাবনা থেকে কয়েক শত যোজন এগিয়ে আছ বল তো? হয়ত এজন্যই এখনো তুমি প্রাসঙ্গিক ও সর্বকালীন।
এখন নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা নিয়ে কত চিন্তা ভাবনার কথা হয়। আমি দুই কন্যার পিতা চিন্তায় তো আমিও থাকি কিন্ত তোমার লেখা ছোট গল্প "অপরিচিতা"তে তুমি যে ভাবে 'শম্বুনাথ' ও তাঁর মেয়ে 'কল্যাণী'র চরিত্র এঁকেছ তা থেকে আমি অনেকটা শিক্ষা নিয়েছি। আমারও মনে হয় মেয়েরা যদি কল্যাণীর মতন করে নিজেকে তৈরী করে তাহলে অচিরেই অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
পরিশেষে বলব, তুমি এখন যেখানেই যে অবস্থায় থাক না কেন,ভালো থেক। তুমি ভালো থাকলেই আমরা সকলে ভালো থাকব কারণ তুমি তো আমাদের অভিভাবক, বন্ধুসখা ও শক্তি, অনুপ্রেরণা এবং শেষ অবলম্বন।
অবশেষে, গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো দিয়ে তোমাকে শ্রদ্ধা ও প্রণয় জানাই - "আজ প্রণমি তোমারে চলিব নাথ, সংসার কাজে/তুমি আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তর মাঝে।"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴