'সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে'/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
'সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে'
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
কাঁটাতার পার করে বা টপকে ওদেশে যাওয়ার সাধ তো কতদিনের! ফেব্রুয়ারি মাস পড়লেই এত বেশি মনে পড়ে ঐ মাটির কথা, কেন? আযাদ র বেশিরভাগেরই অরিজিন ঐ মাটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার।প্রথম যখন চ্যাংরাবাঁধা বর্ডার দিয়ে 'নন্দিনী'র ডাকে আমরা সাতজন মহিলা ওদেশের মাটিতে পা রাখি,মনে হয়েছিল পুনর্জন্ম হল যেন।তার আগে বহু কাঠ খড় পুড়িয়ে লোকজনের ভরসা করে ভিসা করানো। তার আগে পাসপোর্ট,আর খানিকটা দক্ষিণাও দিতে হয়েছিল। সে দিতেও একপায়ে খাড়া তখন।২০০৯ সাল আর ১৯শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের পরই ২১শের সেই ঝলমলে রোদ সকাল।আমরা হাঁটছি বিরাট মিছিলে। শহীদ চত্বরের দিকে।ফুলে ফুলে সাজানো। কালো পাড় সাদা শাড়িতে ভরে গেছে সবদিক। ঐ মাটিতেই সেদিন কলকাতার কর্মী ও নামী মানুষ বরুনদার সঙ্গে আলাপ,উনি প্রতিবছর এ সময়টা বাংলাদেশেই থাকেন, তাঁকে দেখে,আলাপ করে পরিপূর্ণ হলাম যেন। সঙ্গে 'সুলতানা রিজিয়া', যিনি বাংলাদেশের অধিকাংশ শহর, গ্রামের নদীর নামে নন্দিনীদের নিয়ে এক বিরাট সংগঠন করেছেন।আমরাও তিস্তার কন্যারা সেদিন অভূতপূর্ব এক সম্মাননা অনুষ্ঠানে ছিলাম। সাহিত্যিক বর্ষীয়ান আবদুল মতিন ছাড়াও অন্যান্য নন্দিনীর ভিড়ে সব নদী যেন সেদিন প্রেক্ষাগৃহে বন্যা তৈরি করেছিল।
অন্যচোখে পৃথিবীকে দেখছিলাম। চলে গিয়েছিলাম জাতীয় পরিষদ মাঠে কবিতার আয়োজনে।সাহিত্যিক সহীদুল্লাহর কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল।সন্ধেয় মিমি আপার বাড়ির দাওয়াতে উপস্থিত থেকে গান কবিতায় মুখর হলাম।জোনাকি সিনেমা হলের বিপরীতে বিরাট হোটেলে থাকা খাওয়া,অতিথি আপ্যায়নে কোন ত্রুটি নেই।আর তখন এপারে মোবাইলের সিম চেঞ্জ করে দিনান্তে একবারই কথা বলা সম্ভব। এখনো মনে পড়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে আমার গানের সঙ্গে কন্ঠ দিয়েছিল বাংলাদেশের এক কন্যে,কলকাতার এক যুবক বন্ধু। দর্শক আসন ও গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠেছিল"ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা"....
প্রাণ মন এধারের সজনে ফুল পাতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। পরদিন ঢাকা শহরের যা কিছু দেখবার ক্ষিপ্র গতির সুদৃশ রিক্সায় চেপে সব দেখেছিলাম। কতগুলো রিক্সা যে সেদিন রেস দিয়েছিল! ভয়ে ভয়ে শক্ত হাতে ধরেছিলাম রিক্সার সিট আঁকড়ে। মুজিবের বাড়ি এখন মিউজিয়াম।তখনো। সুমহান ব্যথায় ভরে গিয়েছিল মন ধানমুন্ডির সেই বাড়ির দালানে গুলির দাগ আর রক্তের শুকিয়ে ওঠা জমাট ছবিতে। পাশের ঘরে নব বিবাহিত পুত্র পুত্রবধূর মৃত্যুর পরিস্থিতি একই ভাবে রেখে দেওয়া।সব যেন সদ্য ঘটেছে।
সেবার মেঘনা নদীর বিশাল গভীরতায় নৌকোয় বসে মনে হয়েছিল আমরা কতনা ক্ষুদ্র! রিক্সাঅলা আলম, নৌকোর মাঝি গালিবকে ভুলিনি এখনো, এতগুলো বছর পরেও।
একসময়ের বাংলাদেশের রাজধানী "সোনার গাঁও" এর প্রতিটি দর্শনীয় জায়গা,রাজার বাড়ি(যা মিউসিয়ম) সর্বত্র ঘুরিয়েছিল আলম। সেখানকার পথ'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' যেন। সেই কতযুগ আগের রাজবাড়ির প্রতিটি ঘরে রেখে দেওয়া সে সময়কার ব্যবহৃত জিনিস, পোষাক,মাটির কলস,তৈজস,অলঙ্কার সব। মুগ্ধ হয়েছি। ২০০৯ এ বিডি আর এর তীব্র গোলমালে পড়তে হয়েছিল অনেককেই। আমাদের মধ্যে যারা কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়েছিলেন তারা বাংলাদেশে ছ সাতদিন আটকে গিয়েছিলেন। আমি এবং আর একজন ফিরে এসেছিলাম গোলমালের ঠিক একদিন আগের সকালে।চ্যাংরাবাঁধা এবং বাংলাদেশের মাঝের বর্ডার অংশে বাস দাঁড়ানো মাত্র খবর পেয়েছিলাম গোলাগুলি চলছে। সাতজনের পাঁচজন থেকে গিয়েছিল কয়েকদিন।
শ্যামলী বাসের ড্রাইভার,কন্ডাক্টরের গলায় তীব্র আগ্রহ ও হতাশার সুর এখনো কানে ভাসে। হৃদয়ে তো জায়গা করে নিয়েছে ওদের হাহাকার। কন্ডাক্টর ভাই বলেছিল,'জানেন আপা, ঐ তোমাদের দ্যাশে আমার ঠাক্ মা আজো আমার এক ভাইকে নিয়া থাহে।এতডা যে বড় হ ইছি, একবারের জন্যি আসতে পারিনাই তোমাগো দ্যাশে, এইখান থিকাই ফিরতে হইছে।...না ভিসা নাই। হয় নাই, কে দিবে আমাগো অতগুলান ট্যাকা!!'
ফিরেছিলাম আর জলভরা চোখ,গলা ধরে আসা কথাগুলো ভুলিনা কখনো।
২. এপারে চাকরী করি।ছাত্রী পড়ানো ভালবেসে।ফিরতেই হত দ্রুত।নদী যেমন জোয়ার ভাঁটায় জল এদিক ওদিক করে, তেমনি মানুষও বদলে যায়। কত স্বপ্ন পাল্টায়, কত কথা উড়ে যায় বাতাসে, কেউ রাখে কেউ রাখে না। কিন্তু মনের আবেগ আর অক্ষর তো মরে না। সে সব কবিতা হয়। গদ্য উপন্যাসে পরিনত হয়। সুলতানা রিজিয়া এধারে জলপাইগুড়িতে দু তিন বছর পর আসেন। আমি শুনিই কেবল। আর মনের ভিতর যন্ত্রণায় মরে যাই যে যাঁর স্নেহ উপহার আদর নিয়ে ফিরেছি, তাঁর সঙ্গে সামান্য দেখাটুকুও হলোনা! কেউ জানালোও না যে আমি নিদারুণ অসুস্থতায় মেরিনা নার্সিংহোমে ভর্তি।গল্ড ব্লাডারে স্টোন ধরা পড়েছে। অপারেশন ঠিক পরদিন। সেদিন দু'পা দূরত্বে সুলতানা রিজিয়া সুভাষ ভবনে(মেরিনার ঠিক বিপরীতে নির্মল বসু মঞ্চে)। আমি অবধারিত জানি, সেদিন যদি ওনাকে আমার কথা, অনুপস্থিতির অসুস্থতা জনিত কারণ জানানো হত, ওঁর মতো ব্যক্তিত্ব অন্তত একবার এসে দাঁড়াতেন,হয়তো জুড়িয়ে যেতাম কিছুক্ষণের জন্য হলেও। না, বরং নেতিবাদী বহুকথা ও শব্দ ব্যবহারে আমার সম্পর্কে নানা কথা তাঁর কাছে দায়িত্ব নিয়ে বানিয়ে তৈরি করেছিলেন গুটিকয় মানুষ।তারা আখেরে লাভবান হয়েছিলেন কিনা জানা নেই, আমি মানুষ চিনেছিলাম।
যাইহোক, পরে সুলতানাদি ভুল বুঝে আমাকে ফোন ও করেছেন যেতেও বলেছেন আবার,আমার মন সাড়া দেয়নি। আমি তো এই তোর্সি তিস্তার হয়েই আছি, কে সরাবে সে স্রোতোস্বিনী নদী!....
৩. সেইআবার,কতদিন, কতগুলো বছর পর আবার সুযোগ এল পর পর দু'বার আহ্বান। ২০১৭ সালে একবার,ততদিনে আমি প্রধান হয়ে দায়িত্ব নিয়ে সুনীতি একাডেমী, কোচবিহারে। কলকাতা থেকে জানালেন শ্রদ্ধেয় কবি শ্যামলকান্তি দাস।ডেকে পাঠালেন।বাংলাদেশের কবি মেহবুব কামাল এর আহ্বান পত্র পেলাম। যথারীতি বহু চেষ্টা করেও হাইকমিশনে পার্কসার্কাসে চেষ্টা করেও ভিসা পেলামনা। আসলে আমার কলকাতা অফিশিয়াল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পত্র হাতে পেয়েছিলাম অতি বিলম্বে।
বাদ পড়ে গেলাম সে বছর।পরের বছর ২০১৮ সালে।২০১৭ ও ১৮ আমার জীবনের কতগুলো বিশেষ মনে রাখার সময় ভাল মন্দে। সে বছর যখন জেনেছি ডাক এসেছে, হাতে পেয়েছি চিঠি, দেরি হয়ে গেছে।শ্যামলদার উৎসাহে, বকুনিতে, তাড়ায়, স্নেহের আতিশয্য ও আমার ইচ্ছের মিশেলে এবার বেনাপোল হয়ে সেই বর্ডার ধরে বাংলাদেশ। আহা! সেই প্রিয় নাম সাগরদাঁড়ি, সেই কপোতাক্ষ নদ, যত ই শুকনো হোক দেহ তার,উদ্বেল হয়ে উঠেছি।
দেখতে দেখতে আমাদের বাস লঞ্চে উঠে পড়েছে।বিরাট বিশাল পদ্মার উন্মত্ত জলে ভাসতে ভাসতে এগিয়েছে পথ। আমরা বন্ধুরা আনন্দে উত্তেজনায় যেন কিশোরী তখন।
এবার পৌঁছলাম টাঙ্গাইলে,সেখানে কবিতা ও সাহিত্য উৎসবের নেতৃত্বে মেহবুব আলম দাদা, তাঁর আতিথেয়তার তুলনা নেই।এবার পরিক্রমণে আমার একাধিক গানে গানে কেটেছে।অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। বাস থেকে শুরু।সঙ্গী কবি বন্ধু শবরী। মঞ্চে একের পর এক অনুরোধে গাইছি রবীন্দ্রনাথ।আর বিকেল থেকে কবিতায় ডুবে থাকা। এরই মধ্যে পুরস্কার প্রপক প্রিয় লেখক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কথা সাহিত্যিক নলিনী বেরা, প্রিয় কবি শ্যামলকান্তি দাস তাঁদের সম্মাননা দেখছি একবার মঞ্চে,অন্যদিকে জায়ান্ট স্ক্রিনে।সেখানে আমরাও আছি।অদ্ভুত আড়ম্বরে কেটেছিল উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এই যে নানা ব্যবস্থাপনা 'ব্যুরো' বাংলো প্যাটার্নের অদ্ভুত সুন্দর এক হোটেলে আমরা থেকেই, আতিথেয়তা নিয়েই করেছি।সেখানে থাকা খাওয়া,অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সবটাই সময় মেপে।আবার ফিরে এসে বিপুল আড্ডা আর গানে সময় কেটেছে মূল্যবান।ব্যুরো থেকে যে পথে অনুষ্ঠান মঞ্চের দিকে যেতাম,সরু মাটির কাঁচা রাস্তা।পাশে পুকুরের কাকচক্ষু জলে ফুটে আছে পদ্ম।আহা! এখানে গবাদি পশু ইতস্তত চরছে।পুকুরে ছেলেরা সাঁতার দিচ্ছে। অভিভাবক স্থানীয়েরা স্নান সেরে আচমন করছেন,সূর্য প্রণাম করছেন।আমরা দলবলে হেঁটে চলেছি মঞ্চের দিকে। ব্যুরো থেকে বেরিয়ে বাঁ হাতি আধপাকা রাস্তা পেরোলে মেয়েদের বিদ্যালয়।নিয়ম করে সেখানে ঘন্টা বাজছে।আমার মন কিছুক্ষণের জন্য উতলা হল স্কুলের কথা ভেবে।...ওদিকে ওখানকার সাংবাদিক মশায়রা জোর খোঁজ করছেন আমার, যখন তখন ফোন,খবর বেরিয়েছে,'আদৌ কি তিনি দেশে আছেন'!! ইত্যাদি।
মৌন থাকাই বাঞ্ছনীয় পথ ভেবেছি,কারণ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র সঙ্গে আছে, তোমরা কে বা কারা!!...এবার মাথা থেকে সব চিন্তা চাপ ঝেড়ে রেখে এক জায়গায় আটকে গেল চোখ।"হাতের লেখা শেখানোর স্কুল"(সুন্দর ভাবে ধরে ধরে এখানে হাতের লেখা শেখানো হয়) অবশ্যই বাংলা। মন ভ'রে গেল।প্রাইভেট শিক্ষায় এখানে এটা মুখ্য।
পিছিয়ে গেলাম আমার ছোটবেলায়।আমার ছেলে মেয়ের তৈরি হওয়ার কালে আমার ঠিক এভাবেই লেগে থাকার কথা মনে পড়ল। বাবা শেখাতেন নিয়ম মেনে আমাকে, গরমের বন্ধ,পুজোর বন্ধে স্কুল বাড়ির কাজ দিয়েছে হাতের লেখা একমাস জুড়ে। সেইমত আমিও শিখিয়েছি,স্কুলে থাক আর না থাক, প্রথমে মেয়েকে(তার স্কুলে এ নিয়ম ছিল), কয়েকবছর পর ছেলেকে নিজের চেষ্টায়। পিছনের দিনগুলো আছে বলেই তো সাহিত্য আছে আর কবিতার জন্য একটা ফিক্সড্ ডিপোজিট' আছে বুকের ভেতর,ব্যাঙ্কের মত। শব্দভান্ডার,নানা চিত্রের জলছবি, স্মৃতি কথার ঘর। সব নিয়ে একখানা ভাঁড়ার। হাতের লেখা শেখার স্কুলে ছাত্রছাত্রী নিয়ম মত লেখা শেখে বাংলাদেশে।দূরাগত এক কষ্ট ধ্বনি উঠল বেজে। ছুটির দুপুরগুলোয় সেই হাতের লেখা মকশো করার সময় কোথায় তাদের@ বড় বেশি যন্ত্রানুষঙ্গে ওরা বলে উঠবে, দরকারটাই বা কি!!!,নেই স্কুলের ও কোন লেখা দেখিনোর চাপ, কারেকশন করে দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার স্যাপার।কিন্তু বড় আশ্চর্য এ ছবিগুলো তুলে রাখলাম মন ক্যামেরায় তো বটেই, প্রয়োজনে মোবাইলেও।
টাঙ্গাইলের অনুষ্ঠান শেষে পাট চুকিয়ে ময়মনসিংহের কবিতার দাওয়াতে চলেছি।বাস থেকে ধুলো মাখা রাস্তা দেখে নিতে নিতেই দেখছি, "যত্ন করে বাংলা হাতের লেখা ও অক্ষর শেখানো ও চর্চাকেন্দ্র" সত্যি বলতে কি মুগ্ধতা এল। বার বার মনে হ'ল, গল্পের বই শুধু নয়, সব ধরণের পত্র পত্রিকা, প্রবন্ধ নিবন্ধ, শিশু উপযোগী সাহিত্য পাঠ যেমন জরুরী তেমনি জরুরী লিখতে শেখা ও চর্চা করা।নয়তো ভাষা আয়ত্তে আসবে কি করে!শুধু বাংলা কেন, সব ভাষার ক্ষেত্রেই এইকথা। বাংলাদেশ এগিয়ে আছে অনেক মাতৃভাষা লেখা শেখা ও চর্চায়।
৪. পেরিয়ে তো গেছি বেশ কয়েক বছর, কেবল অনুতাপে কিছু লাভ নেই, যতদিন পড়িয়েছি ততদিন লিখিয়েছি, সংশোধন করেছি আমাকে যেমন শিখিয়েছেন আমার স্যারেরা। পরে দেখেছি, শুনেছি,লিখতে গেলে সময় নষ্ট, থাক বাবা। ঐ টাইপ করে বা করিয়ে নেব অথবা, ঐ খন্ডাংশটা গুগল্ খুলে পড়ে নেব।
না, কোন পাঠ্যবই দরকার হয় না। 'সহজপাঠের' সহজ কথা, গল্পের মণিমানিক্য অথবা কবিতা বা পদ্যের মাধুর্য অন্তরে নেওয়া তো দূর, যেটুকু আজও কিশলয় সহজপাঠ পড়তে হয়, অত্যন্ত জোর করে।রিডিং হচ্ছে না বলে ভালও লাগছে না।
"বাদল করেছে। মেঘের রঙ ঘন নীল"... অথবা, 'কাল ছিল ডাল খালি/আজ ফুলে যায় ভরে', কিংবা
ঐখানে মা পুকুর পাড়ে,জিওল গাছের বেড়ার ধারে, হোথায় হব বনবাসী/কেউ কোথ্থাও নেই...'
কে আছে এখনো এসব ছবি দেখতে পায় চোখের সামনে! মনে পড়ল, সহজ পাঠের প্রতি পৃষ্ঠার প্রথম লাইন ধরে মেয়ের খাতায় লিখে দিতাম, গোটা গোটা করে ধরে যাতে লেখা শেখে আর বিন্দু বিন্দু চিহ্ন দিয়ে সেগুলো জুড়ে দিতে দিতে এক একটি হরফ শিখে যেত ওরা।
ময়মনসিংহে কবিতা গানের পরই ঢাকার দাওয়াতে চলে আসি। বন্ধু কবি সালেম সুলেরীর উদ্যোগে সেখানে'তিনবাংলা সাহিত্য সম্মান' পেলাম। মন পূর্ন হল। রাতটুকু থেকে ঐ বাংলোর চত্বরে বহু ফুল বহু সবুজের মেলায় নতুন রোদে যেন নিজেকে খুঁজে নিলাম। এবার বিদায় বাংলাদেশ।আবার কারেন্সির অদল বদল, বাংলাদেশ থেকে ভিড় ভিড় দলে ভারতে ফেরা। ঢাকাতেও একহাত দূরে দূরে বাংলা শিরোনামে সেই স্কুলের ছবি আর ও দু'চারটে পেলাম। মন ভরে সে সব দৃশ্যাবলী টুকে নিয়েছি আগেই।... অ্যাডমিন্সস্ট্রেশনে থাকা আমি দুবেলা'গুড মর্ণিং ম্যাম' আর গুড ইভিনিং এর চাপে যখন চাপা পড়েছি ঠিক তখন রুটিনে থাক আর নাই থাক কিশলয়দের ক্লাসে গিয়ে আবার লেখা দিতে শুরু করলাম। বোর্ডে ঐ হাতের লেখা মকশো করে নিতে ছোটদের বিপুল উৎসাহ দেখেছি। পদ্মার অন্ধকার জল, মেঘনার ছুয়ে থাকা নিয়ে আজ ও পরিপূর্ণ আমি, ডাকের অপেক্ষায় কান পেতে আছি ঢেউয়ে "আর কি কখনো কবে, এমন ও সন্ধ্যা হবে..."
বাংলাদেশের পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নায় কিংবা আধো অন্ধকারে জেগে উঠব জোনাকি মেলায় একদল শিশুর মতো....
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴