"তাই জনম গেল শান্তি পেলি না রে মন..... "/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
"তাই জনম গেল শান্তি পেলি না রে মন..... "
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
রবীন্দ্র সাহিত্যে মানুষ এক অসাধারণ বিষয়। সারাজীবন তিনি তাঁর পথ চলায় মানুষ কে চিনবার চেষ্টা করে গেছেন। শতসহস্র মানুষের সাথে মিশে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পূঙ্খানুপুঙ্খ দিকে নজর দিয়েছেন বললে ভুল হবে, আগাপাশতলা দেখেছেন,তাদের বোঝবার চেষ্টা করে গেছেন। সব কিছু থেকেও কিছুতেই মানুষের শান্তি নেই। সব মানুষই শান্তি নামক বস্তুটিকে কোথাও যেন ফেলে এসেছেন। তাই তিনি মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করার নিরন্তর প্রয়াস করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে তার বিখ্যাত উক্তি - "আমরা তাকাই কিন্তু দেখি না।" উল্লেখ করা যেতে পারে।
মানুষ কিসে খুশি হবে আর কিসে খুশি হবে না একথা ভেবে তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। তিনি তাঁর জীবনস্মৃতি তে সেকথা বার বার বলবার চেষ্টা করতেন। কথা ও কাহিনি তে বলেছেন, " এই দেশ, এই সমাজ যেমন চলিবার কথা ছিল, সেই মতো চলিতেছে না। এই কথায় অনেকটা শীত কালের রোদ পোহানোর মতো পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়। "
গল্পগুচ্ছের গল্প গুলোর প্রায় সবকটিতে তিনি মানুষের কথা, মানুষের ছবি এঁকে গিয়েছেন। বিখ্যাত গল্প "বলাই " এ লিখেছেন, " লোকালয়ের মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি,সেকথা জানা।বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে ---- আমাদের বাঘ গরুকে এক খোয়াড়ে দিয়েছে পুরে, অহি নকুলকে এক খাঁচায় ধরে রেখেছে। "
মানুষের জাত পাত নিয়ে তাঁর কলম রীতিমতো কেঁদে উঠেছে। তিনি বলেছেন, আমি হিন্দু আমি মুসলমান একথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। কিন্তু আমি মানুষ একথা কাউকে বলতে শুনি না। যারা মানুষ না, তারা হিন্দু হোক বা মুসলমান, তাদের দিয়ে জগতের কোন লাভ হয় না। "
উদারতার এবং মুক্ত চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে তিনি সারাজীবন সারা পৃথিবীময় তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে মানবতার বাণী শুনিয়ে গিয়েছেন। আজ বৈশাখে তাই তাঁর সঙ্গীত গেয়ে উঠি বার বার - "তোমার প্রকাশ হোক, কুহেলিকা করি উদঘাটন, সূর্যের মতো.... হে নূতন।"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴