সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
30-November,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 293

হুলো

হুলো
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^

আপাতত রূপক ফের ''উড়তা-পঞ্ছি"। "নিও-নর্মাল" শব্দটির পোঁদে সপাটে লাথি মেরে, মাস্কটাকে নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পুনরায় সে ''সাবেক-নর্মাল''। চোদ্দ পুরুষ বটতলায়, নাটমন্দিরে, হুঁকোর আড্ডায়, চায়ের দোকানে, পাড়ার রকে যুগের পর যুগ যেভাবে আড্ডা মেরে এসেছে মুখে গ্যাঁজলা তুলে সেই প্রাণময় ঐতিহ্য সে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দিতে চায় না। নাকে মুখে ঠুলি পরে, ফিতে দিয়ে দু-গজ দূরত্ব মেপে মাঠে-ময়দানে যৌথ-পটি তে বসা যেতে পারে, আড্ডা হয় না। এ দর্শনে রূপক দৃঢ় বিশ্বাসী।
শালার ভাইরাস, গলায় বকলেস বেঁধে ঘরে আটকে রেখে কুত্তার হাল করে ছেড়েছিল!ভেতরে বৌয়ের কড়া নজরদারি, বাইরে পুলিশের লাঠির গুঁতো আর মিডিয়ার হল্লাবোল। চৌকাঠ পেরোনোই যেন দায় হয়ে পড়েছিল দু-দুটো বছর ধরে। অনেকদিন পর ফের সান্ধ্য-গেলাস -এ চুমুক দিতে দিতে কোভিডকালের কথাগুলো ভেবে রূপক কচি করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। চিন্তার শকট ট্র্যাক ধরে অতীতচারী হতেই মনে পড়ে যায় সেই রাতটার কথা। মনে পড়তেই গুঁড়ো মিছরিদানার মত পুলক ছড়িয়ে পড়ে দেহমনে।
বছর খানেক আগে সন্ধের মুখে সেদিনও বেরোনোর জন্য উসখুস করছিল রূপক। অন্ধকার যত গাঢ় হচ্ছিল ছটফটানির গ্রাফটা তত উর্ধমুখী হতে থাকে। কতক্ষণ আর মেয়ের মুখে আধো আধো রাইমস শুনে, মোবাইলে গেম খেলে আর পৌনে-পাঁচ-পা ব্যালকনিতে পায়চারী মেরে সময় কাটানো যায়। হতচ্ছাড়া বায়োলজিক্যাল ক্লকের অ্যালার্মটাও ঠিক এ সময়টাতেই ফাজিল ছোকরার মত সিটি মারতে থাকে থেকে থেকে। পেটের ড্রাই ট্যাংক জগজিৎ সিং এর স্টাইলে লাগাতার " হে RUM, হে RUM" জপে চলে। কিন্তু বিধি বাম। কোভিডের প্রকোপ বাড়তেই স্বেচ্ছাচারের ধকটা জিরো পার্সেন্টে নেমে গেছিল। বৌ আর পুলিশের রক্তচক্ষু রেড সিগন্যাল হয়ে বাইরে বেরোনোর রাস্তাটি পুরোপুরি ব্লক করে রেখেছে। কুছ পরোয়া নেই। তবু বেরোতেই হবে। কথায় বলে সব পথ বন্ধ হলে একটি পথ খোলা থাকে। সেই পথ খোঁজার নানান প্ল্যান মাথায় চরকির মতো পাক খেতে থাকে রূপকের।
ওদিকে কিচেনে চিকেনটা ম্যারিনেট করতে করতে আড়চোখে অনেকক্ষণ থেকে বরের ছটফটানিটা মনিটরিং করছিল মৌলী। আজ এত উসখুস করছে কেন লোকটা কে জানে। লকডাউনের সৌজন্যে অফিস ফেরতা ছাইপাঁশের আড্ডাটা তো গেছে। বাঁচা গেছে। সিগারেটও দিনে দুটোয় এসে ঠেকেছে। রেশনিংটা পুরোপুরি এখন নিজের হাতে। বারমুখো লোকটাকে আচ্ছা কব্জা করা গেছে। বেশ হয়েছে। সারাদিন এই সাতশো স্কোয়ার ফিটে বন্দি হয়ে থাকার জ্বালাটা বুঝুক এবারে। মনে মনে করোনাকে ধন্যবাদ জানায় মৌলী। তবে ঘরে থাকতে থাকতে হুলোপানা লোকটা দিনকে দিন কেমন যেন মেনিটাইপ হয়ে যাচ্ছে। মুখ দেখে মনে হয় টুয়েন্টি ফোর ইনটু সেভেন আয়ুর্বেদিক পাঁচন গিলে বসে আছে। মাঝে সাঝে প্রবল অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে কেবল ফ্যাসফ্যাসে গলায় 'ফ্যাঁচ' করে ফুঁসে উঠে জাত চেনায়। ব্যাস ওটুকুই। সেই হালুমপানা অ্যাটিটিউডটাই শুকনো মুড়ির মত মিইয়ে গেছে। দেখে কোথায় যেন একটা গোপন ব্যথা ঘাই মারে মৌলীর বুকের ভেতর।
মাস্ক না পড়েই পাঞ্জাবিটা গায়ে গলিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে যাচ্ছিল রূপক। মৌলী ডাকে, "এই যে, কোথায় চললে এই ভরসন্ধেয়। তাও আবার কোনো প্রোটেকশন ছাড়াই! বাঃ,বেশি মাস্তানি হচ্ছে, নাকি!"
-"কোথাও না...এই যে, সামনেই...ঐ ফার্মেসিটায়। যাব আর আসবো।" দরজায় হাত রেখে মিনমিন করে রূপক।
-"ওষুধ তো শেষ হয়নি। কাল আনলেও চলবে। এখন বেরোবে না বলে দিলাম। বসে বসে মিতুলকে রাইমস শেখাও। আমি চা করে আনছি।" চা-এর টোপ দিয়ে ট্র্যাপে ফেলে বারমুখো মেনিটাকে ঘরে আটকাতে চায় মৌলী।
মহা নিষ্ক্রমণের পথে এহেন বাধায় রূপক বিচলিত। দরজার ছিটকিনিতে একটা হাত। আরেকটি পাঞ্জাবির পকেটে। পা দুটো রমেন পালের টাল খাওয়া অসুরের মুদ্রায় কাঠামোর সাথে সেঁটে বসে গেছে যেন। বাবাকে দরজায় অমন ফ্রিজ হয়ে যেতে দেখে ছোট্ট মিতুল একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
-" কী হল? ওভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন হাবার মতো? ভেতরে এসো...মাস্ক নেই, গ্লাভস নেই, কোনও প্রোটেকশন নেই, বাবু চললেন বাইরে...ক্যাডাভেরাস কোথাকার!" অর্ধাঙ্গিনী খড়্গহস্ত।
-" না, ভাবছিলাম যে না গেলে যদি কিছু একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যায়। মামনি সদ্য দু' বছরের। অ্যাক্সিডেন্টালি কিছু ঘটে গেলে সামলাতে পারবে তো?" শেষপাতে জমাট মিষ্টি দই সযত্নে কেটে পাতে আলতো করে পরিবেশন করার মতো কথাটা পেশ করে রূপক। করেই ফ্রেঞ্চকাটের ওপর দু'আঙুল রেখে 'থিংকিং' ইমোজি জ্ঞাপনের ভঙ্গিতে গালে টুকটুক করে তাল ঠুকতে থাকে উদাসী বাউল মোডে।
-"মানে!" হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে মৌলী অবাক হয়ে তাকায়।
-"না, বলছিলাম যে নাক মুখের জন্যই কি শুধুমাত্র প্রোটেকশনটা জরুরি...আর কিছুর জন্য নয়?" রূপকের ঠোঁটে সুষ্পষ্ট ফালি চাঁদের দুষ্টু মিষ্টি চমক। সেকেন্ডের ভগ্নাংশ লাগে মৌলীর ইঙ্গিতটা বুঝে নিতে।
-"ধ্যাৎ, অসভ্য... " দ্বাদশীর তরমুজ ফালি এবারে দিক পাল্টে মৌলীর ঠোঁটে।
চটজলদি ভেতর থেকে মাস্কটা এনে হাতে ধরিয়ে দিতে দিতে মৌলী বলে, "তাড়াতাড়ি এসো...দেরি কোরো না কিন্তু...হুলো কোথাকার।"
মৌলীর হিসহিসে গলার কপট ভর্ৎসনায় চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ে রূপকের ঠোঁটজুড়ে। বৌয়ের চাহনিতে কপট শাসন ও প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে মেশানো এক চুমুক ক্যাপুচিনোর স্বাদ অনুভব করে রূপক। গুনগুন করতে করতে রূপক নেমে পড়ে নির্জন রাস্তায়। দম দেয়া টাট্টুর মতো পূর্ণ উদ্যমে পা চালায় ফার্মেসির দিকে।
ওদিকে চিকেন কষায় কাশ্মীরী গুঁড়ো লঙ্কাটা ধীর লয়ে মেশাতে মেশাতে অনেকদিন বাদে মৌলীর মনের ছাইচাপা তীব্র রিনরিনে ব্যথাটা ফের রিভার্স করে। সেটা অবশ্য জানতেও পারে না রূপক। জানবার কথাও নয়। শুধু ভোররাতে মাতামহের কথাটা একবার মনে পড়ে। কবিরাজ শশাংকশেখর আচার্যি খলে অনুপান পিষতে পিষতে কৈশোরে উপনীত নাতিকে বলেছিলেন, "সব ব্যথা কি আর ওষুধে সারে দাদু, রোগীর মনস্তত্ত্ব বোঝাটাই আসল কাজ। আর সেটা ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে।"
রূপক দেখে পাশে গভীর ঘুমে ডুবে থাকা বিজিত কেল্লার গায়ে সমর্পণের স্বস্তি লেগে আছে। ফ্যানের হাওয়ায় ফর্সা মুখে বিস্রস্ত চুলগুলো কেল্লার মাথায় যুদ্ধজয়ের নিশানের মতো উড়ছে ফরফর করে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri