হত্যা
হত্যা
মালবিকা মালবিকা
^^^^^^^^^^^^
টেলিফোনটা বাজছে...I
আজকাল মাঝরাতে টেলিফোনের বেজে ওঠায় আর ভয় লাগে না, কেবল একটু চিন্তা থাকে। কেমন যেন জানা হয়ে গেছে দু বা তিন মাস ছাড়া এ ফোন আসবে।
প্রথমবার মাঝরাতে যখন ফোনটা বেজে উঠেছিল, সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ফোন রিসিভ করেছিল।
.....বোলপুর থানা থেকে বলছি।
......বোলপুর!!
......আপনি তমালিকা নামে কাউকে চেনেন?
......তমালিকা!
......দেখুন, উনি নিজের নাম ধাম ঠিক ঠাক বলতে পারছেন না। এখানের একটি রাস্তায় ওনাকে বারবার হাঁটতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা ওনাকে থানাতে নিয়ে আসি।
ওনার কল লিস্টে আপনার নাম্বারটাই প্রথমে আছে।
...... কিন্তু...!!
......ওনার ফোটো আপনাকে হোয়াটস্ আপ করছি।
সেদিন তনয়ার ফোটো দেখে চমকে উঠেছিল সে।
বেশ লম্বা, বেশ কালো কিন্তু অসম্ভব তীক্ষ্ণ চোখ, নাক, মুখ, চাহনি মেয়েটি কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওর বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে সেদিন তনয়াকে ফিরিয়ে এনেছিল মধুরা।
তারপর থেকে কতবা..র যে এমনি ফোন এল! কখনো থানা, কখনো পথচারী! তনয়া শুধুমাত্র ওর নামটিই বা ফোন নাম্বার মনে রাখতে পারে এমন পরিস্থিতিতে!
......তনয়া প্রথম যেদিন মধুরার কাছে টিউশন নিতে এল, সেইদিনই বুঝেছিল এ আসলে একটা নদী। শান্ত স্বভাবের মধুরা খুব খুশি হত ঝকঝকে তনয়ার উপস্থিতিতে। তনয়া যেন সকল স্থবিরতাকে পলক ফেলে উড়িয়ে দিত। একে অপরের কাছের হয়ে উঠতে তাদের খুব দেরি লাগেনি। সে মেয়ে জীবন ছড়িয়ে দিত চলার বোলে, কথার ছন্দে। এমনি মেয়ে যখন নিঃশব্দে নিজেকে পরিস্থিতির কাছে সমর্পণ করে দেয় তখন বুঝি সকল বিস্ময় ও থমকে থাকে!
বাবা --মা তনয়ার বিয়ে ঠিক করলেন প্রত্যন্ত গ্রামে। ছেলেটি থাকে অন্য প্রদেশে। মেয়েটির গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হল না! একাধিক রকমের শাশুড়ি - শ্বশুর, ভাসুর- দেওর, ননদ নিয়ে শুরু হল সমারোহের সংসার। মাস চারেক পর ফুরসৎ মিলল তার, মধুরার সাথে দেখা করার। কত কত মেঘ যেন এসে তার সারা শরীরে জমাট বেঁধে গেছে ......।
তারপর একদিন রাতে এমনি ফোন। থানা থেকে। উদ্ভ্রান্ত তনয়া পালিয়ে এসেছে শ্বশুর বাড়ি থেকে। মধুরার কাছে দুদিন ছিল। এই দিন দুটিতে অনেক কথা হলেও চলে আসার কারণ তনয়া জানাতে পারেনি। মধুরা তাকে সময় দিয়েছিল।
তনয়া জানিয়েছিল। শ্বশুর বাড়ির আম, লিচুর বাগানটা তার একমাত্র প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে। সন্ধেবেলা সেখানে ঘুরে ঘুরে সে গুনগুন করে গান গায়, খুব র্সন্তপণে। এটা, ও বাড়ির লোকের কাছে 'ভুতে পাওয়া'। সংসার সামলে সে রাত জেগে গল্পের বই পড়ে, যা ওদের কাছে মাথা খারাপেরই সামিল। আর আছে স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন এক তুতো শ্বশুরের তার ওপর হামলে পড়া। এ সব কিছু থেকেই বাঁচতে চেয়েছিল। আশ্রয় পেতে চেয়েছিল বাবা- মা- ভাইয়ের কাছে। আর চেয়েছিল সকলের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা তার প্রিয়তম মানুষটির কাছে নির্ভরতা। পায়নি।
শুধু কেমন করে যেন সে মধুরাকে জেনেছিল।
এসবের পরেও তনয়া এখন দু সন্তানের জননী। 'তাহার সকল শিক্ষা বুঝি পুরা হইয়াছে।' সে এখন নড়েও না, চড়েও নাI শুধু সংসার করে আর মাঝে মাঝে অ্যাসাইলামে কাটিয়ে আসে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴