সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-December,2022 - Tuesday ✍️ By- আশিস কুমার খাজাঞ্চি 150

সমুর বিলাস

সমুর বিলাস
আশিস কুমার খাজাঞ্চি
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

চৈত্রের সে বিকেলে রোদের তেজে সবে কোমলতা এসেছে। মায়ের আচমকা মনে হল বাড়িতে কিছু একটা কম কম লাগছে। তার খেয়াল হল সমুকে অনেকক্ষণ বাড়িতে দেখা যাচ্ছে না। দুপুরে খাওয়ার সময় শেষ তাকে দেখা গেছে। শোয়ার ঘর, বারান্দা, বাগান কোথাও নেই। এমনকি পাশের বাড়ির বন্ধু সঞ্জুও কিছু বলতে পারল না। বাবা সবে ফিরেছেন। সূর্য ডুবুডুবু। এমন সময় সমু নরম নরম পা ফেলে গোয়ালের পাশ দিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। হাতে একখানা গুলতি। "দাঁড়া ওখানে। কোথায় ছিলি এতক্ষণ ?" বাবা গম্ভীর স্বরে জীজ্ঞেস করলেন। সঞ্জুদের বাগানটা প্রায় বিঘে পাঁচেকের। ছোট বড় হরেক গাছ সেখানে। বাগানের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বিরাট এক দিঘি আছে। লোকজন খুব প্রয়োজন ছাড়া ওদিকে যায় না। দীঘির চার পাড়ে উক্যালিপটাস, অর্জুন, সোনাঝুরিরা দাঁড়িয়ে। সঞ্জুর কাছে সমু একসময় শুনেছিল ঐ পুকুরে বড় বড় মাছ আছে। পুকুর পাড়ের বড় এক অর্জুন গাছের নীচের দিকের একটা মোটা ডালে ও বসেছিল গুলতি দিয়ে মাছ শিকারের অপেক্ষায়। "তুই গুলতি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলি? কোথায় না কোথায় তোকে খুঁজেছি। তা কটা মাছ মিলল দেখি," ওর মা রাগে ফেটে পড়ল। "মা, কয়েকটা পুঁটি মাছের দেখা পেয়েছিলাম। সাত-আটখানা কাচের গুলি ছুঁড়ে একটাকেও ঘায়েল করতে পারিনি।"
উদ্ভট কল্পনায় সমুর কাছেপিঠে কেউ নেই বললেই চলে। সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলোতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে একটা সময় দেদার ঘুড়ি ওড়ানো হত। চারকোণা বড় আয়তাকার ঘুড়ি। শহরের ঘুড়িগুলোর মত এমন নয়। বাঁশের মোটা মোটা শলাকা, পুরু কাগজ দিয়ে বানানো হত। ওড়াতে একটু মোটা শক্ত সুতা দরকার হয়। বলিষ্ঠ টানা হাওয়া চাই। যদি হাওয়া সঙ্গত দেয় এ ঘুড়ি সারা দিনরাত ওড়ে। সেদিন বিকেলে ভাল হাওয়া বইছিল। সমু উঠোনের এক পাশে বসে একান্তে কোন এক কাজে মগ্ন। মোটা মোটা কিছু লাঠি, কাগজ, দড়ি, এক বাটি ভাত ওর পাশে রাখা। ওর ছোট কাকা গাছে জল দিচ্ছিল। সমুর দিকে নজর পড়তেই ওর দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে গেল। আবার কিছু ঘটতে যাচ্ছে নিশ্চয়ই। সরঞ্জাম দেখে আন্দাজ করতে সময় লাগেনি কাকার, তবে বিশ্বাস করতে ঘাম ঝরে যাচ্ছিল। "এগুলো দিয়ে কি বানাবি, বাবা সমু ?" "কেন, ঘুড়ি বানাচ্ছি।" "এত স্বাস্থ্যবান সব লাঠি দিয়ে ঘুড়ি বানাবি? এমন মোটা লাঠি দিয়ে ঘুড়ি বানাতে দেখেছিস কাউকে?" "আরে তুমি এসব বুঝলে তো হত। এই ঘুড়ি ভাঙবেও না ছিঁড়বেও না।" "আচ্ছা, এই অদ্ভুতুড়ে বুদ্ধি তোকে দিল কে? তোর এই ঘুড়ি ওড়াতে সাইক্লোনও হার মানবে রে।" কে কার কথা শোনে। "কাকু, মা না সুন্দর কুমড়ো ফুলের বড়া ভাজছে। তখন তোমায় ডাকছিল।"
প্রতি বছর ঘটা করে নারায়ণ পূজার চল সমুদের চন্দনপুরের বাড়িতে। বছরের ঐ দিনটাতে আত্মীয় কুটুমের হাট বাড়িতে। মামা, মাসি, পিসি আর তাদের বাচ্চারা মিলে বাড়িতে তখন এক উৎসব উৎসব সৌরভ। পূজা চলাকালীন কারুর কোত্থাও যাওয়া চলবে না। ঠাকুরের সামনে জোড় হাতে বসে থাকাটা রেওয়াজ। পূজা শেষে সবাইকে প্রসাদ পেতে হবে। এরপর বহু ব্যঞ্জন যোগে নিরামিষ খাওয়া দাওয়া। দিনভর ধকল। নৈনিতাল থেকে সমুর ছোট মাসি সৃজা এই প্রথম তার দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে এ বাড়ির পূজাতে যোগ দিয়েছে। সমস্ত কাজ সেরে ঘুমোতে যেতে সকলের বেশ দেরি হয়। অনেক লোকজন, তাই কিছুজনকে ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে শুতে হল। সৃজা সমুকে ডেকে বলল, "মশারিটা টাঙিয়ে দে তো, সোনা।" মশারি টাঙিয়ে সমু চলে গেল। মাঝ রাতে সৃজার ছেলে মশারির এক দিকে গড়িয়ে যেতেই ঝম ঝম করে আওয়াজ হয়। সৃজা ধড়ফড় করে উঠে দেখে মশারির এক কোন খুলে পড়ে আছে। আরও দুই একজন দৌড়ে এল। আলো জ্বেলে দেখে টেবিল-ল্যাম্পটা মেঝেতে পড়ে চৌচির। ল্যাম্পের ছোট স্ট্যান্ডটার গায়ে মশারির দড়ি বাঁধা আছে।
থেকে থেকে খুটখাট দুএকটা শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। যেমন ওভেনের ওপর স্ট্যান্ড বসানোর শব্দ, গ্যাস লাইটার জ্বালার শব্দ ইত্যাদি। "কে রান্না ঘরে ?" "মা,আমি সমু।" কিছুক্ষণ বাদে পোড়া গন্ধ ছড়াতে থাকে। মা বারান্দায় কাঁথা সেলাই-এর কাজ ফেলে রান্না ঘরে চলে গেলেন। ওভেনের উপরে এবং চারপাশে যেন পৃথিবী সৃষ্টির আদি অবস্থা। শুধু এটুকু বোঝা গেল একটা গোটা ডিম ফেটে ছড়িয়ে ছত্রখান। ওভেনের উপর বসানো একটা তারজালি । মা তাড়াহুড়ো করে গ্যাসটা নেভালেন। রান্নাঘরে তো কেউই নেই।"সমু, সমু।" ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে এল সমু। কখন অপকম্মটি করে গেছে মনেও নেই। মা চিৎকার করে উঠলেন, "এগুলো কি?" "মা, ডিম পোড়াচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে।"
পড়ার ঘরখানা সব সময় সমু সাজিয়ে রাখে। ভীষণ আপনার ওর। হলে কি হবে একটানা আধা ঘণ্টা ওখানে থাকা ওর ব্যাকরণের বাইরে। সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় ঘন্টা দুই-আড়াই পড়ার ঘর ছেড়ে বেরোয়নি। দাদু বার কয়েক ডেকেও কোন সন্তোষজনক উত্তর পেলেন না। উত্তর এল,"আমাকে এখন কেউ ডাকবে না। আমি ব্যস্ত।" দুদিন বাদে বিনাপানীর পূজা। পরের দিনও খাওয়ার সময় ছাড়া বেশির ভাগ সময় ও ঐ পড়ার ঘরেই রইল। মায়ের সন্দেহ হল। চুপিসাড়ে ছেলের ছোট্ট ঘরে ঢুকে গেলেন। ইতিহাস, ভূগোল, জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান বইগুলোর কাটা পাতারা মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। মায়ের মাথা ঘুরে এল। "সমু, কি করছিস এসব!" আচমকা মায়ের গলার আওয়াজে চমকে ওঠে সমু। "মা, তু-তু-মি কখন এলে ? এই ডায়েরিটা মা সরস্বতীকে উপহার দেব।" বইগুলো থেকে কাটা পাতার অংশগুলো ডায়েরির পাতায় পাতায় আঠা দিয়ে আটকানো। এমনকি পৃষ্ঠা নম্বরটাও বই থেকে আলাদা ভাবে কেটে লাগানো। কি নেই- পানিপথের প্রথম যুদ্ধ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্য, সালোকসংশ্লেষ কি, হৃদপিণ্ডের ছবি, প্রতিবিম্ব কাহাকে বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। "নতুন বইগুলো কেটে কেটে কি হাল করেছিস তুই ? তুই কি কখনও বড় হবি না?" মা আর্তনাদ করে উঠলেন। "মাকে কাল সকালে দেব বলেই তো এত খেটে খেটে ডায়েরিটা বানালাম,মা।"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri